দেশে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি নেমে আসতে পারে ২ থেকে ৩ শতাংশে
সারাবিশ্বের মেরুদণ্ডে আঘাত হেনেছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। বাদ পড়েনি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও। করোনার কারণে বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধিতে ধস নামতে পারে। এ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২ থেকে ৩ শতাংশ। তার পরের অর্থবছরে আরও কমতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশের অবস্থা আরও খারাপ। এর চারটি দেশে প্রবৃদ্ধি তো হবেই না, বরং ঋণাত্মক থাকবে। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির দিক থেকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকবে ভারত। অবশ্য তার পরের অর্থবছরে ভারতেরও ধস নামবে।
রোববার (১২ মার্চ) সকালে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়।
এ বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টিং শেফার বলেন, ‘করোনার বিস্তাররোধ ও জনগণের জীবন রক্ষা করা, বিশেষ করে অতি দরিদ্র মানুষ, যাদের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ, তাদেরকে সুরক্ষা দেয়ায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন দক্ষিণ এশিয়ার সরকারপ্রধানরা। যথাযথভাবে করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থ হলে এ দেশগুলো দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়বে এবং দারিদ্র্য মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে।’
বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, মহামারির প্রভাব নির্ভর করছে কত দ্রুত করোনাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে, তার ওপর। করোনায় আক্রান্তের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজ, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নির্দেশনা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ মাসের শুরুতে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। করোনা মোকাবিলা ও এ অবস্থা কাটিয়ে উঠায় বাংলাদেশকে সবসময় সহযোগিতা করবে বিশ্ব ব্যাংক বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় চলে যাবে মালদ্বীপ, তারপর যথাক্রমে আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। এই দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে যাবে।
ঋণাত্মক না হলেও চলতি অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বেশি ক্ষতির দিকে থাকবে যথাক্রমে নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও ভারত। অর্থাৎ এই দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে চলতি অর্থবছরে থাকছে ভারতই।
চলতি অর্থবছরে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার দিকে চলে যাওয়া মালদ্বীপের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ঋণাত্মক ১৩ শতাংশ থেকে ঋণাত্মক ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে এর পরের অর্থবছরই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াবে মালদ্বীপ। ২০২১ সালের অর্থবছরে দেশটির প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৩ থেকে ৭ দশমিক ৩ শতাংশে। ২০২২ অর্থবছরে দেশটির প্রবৃদ্ধি ফের কিছু কমে ৫ থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে আসতে পারে।
চলতি অর্থবছরে খারাপের দিকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা আফগানিস্তানের এবারের প্রবৃদ্ধি হবে ঋণাত্মক ৫ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ঋণাত্মক ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। তার পরের বছর প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। ২০২২ সালের অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি আরও বেড়ে ৫ দশমিক ২ থেকে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে।
খারাপের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে থাকা শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে ঋণাত্মক ৩ থেকে ঋণাত্মক দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে। তার পরের অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি সামান্য বেড়ে দশমিক ২ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে। তার পরের বছর সামান্য বেড়ে ২ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে।
নেপালের প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে ১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলছে বিশ্ব ব্যাংক। তবে পরের অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। ২০২২ সালের অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে।
আর ভুটানের প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে ২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। ২০২১ সালের অর্থবছরে ২ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। আর ২০২২ সালের অর্থবছরে ৩ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। তবে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২ থেকে ৩ শতাংশ। পরবর্তী অর্থবছরে (২০২০-২১) প্রবৃদ্ধির পরিমাণ আরও কমতে পারে। এ সময় ১ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসতে পারে। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে অল্প বেড়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ দশমিক ৮ থেকে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে চলতি অর্থবছরে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকা ভারতের প্রবৃদ্ধি এবার ৪ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ হতে পারে। তার পরের অর্থবছরে প্রবৃদ্ধিতে ধস নামতে পারে। ২০২১ সালের অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমে ১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এবং ২০২২ সালের অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ হতে পারে ভারতে।