দেবহাটার বিভিন্ন এলাকায় জনসমাগম বাড়ছে, আসছে ট্রাকভর্তি ইটভাটা শ্রমিক
মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঝুঁকি হ্রাসে দেশব্যাপী জনসমাগম সৃষ্টিতে নিষেধাজ্ঞা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের জন্য সরকারি নির্দেশণা ও প্রশাসনিক কড়াকড়ি চলমান থাকলেও, দেবহাটার পারুলিয়া, সখিপুর, গাজীরহাট, কুলিয়াসহ বেশ কিছু এলাকায় সরকারি সে নির্দেশনা ও সামাজিক দুরত্ব অনেকটাই মানছেনা মানুষ।
প্রতিদিনই সকাল থেকে উপজেলার সখিপুর-পারুলিয়া বাজার, গাজীরহাট বাজার ও কুলিয়া বাজারে জনসমাগম ক্রমশ বেড়েই চলেছে। জনসমাগমে পিছিয়ে নেই গাজীরহাট মৎস্য সেড, পারুলিয়া মৎস্য সেড ও বদরতলা মৎস্য সেডটিও।কারনে অকারনে কিংবা প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে এসকল এলাকায় ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক সাধারণ মানুষ। আর রাস্তাঘাটে ইঞ্জিনভ্যান, মোটরভ্যান ও ইজিবাইকে যাত্রীদের বহনের পাশাপাশি বিনা বাধায় মোটর সাইকেলে বখাটের দল ঘুরে বেড়াচ্ছে নানা এলাকায়। মহাসড়কে পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনীর চলাচল থাকায় বর্তমানে উপজেলার অভ্যন্তরীন সড়ক গুলো বখাটেদের মোটর সাইকেল নিয়ে দাপিয়ে বেড়ানোর নিরাপদ রুটে পরিনত হয়েছে। আর মাঝে মধ্যে মহাসড়ক কিংবা বাজার এলাকায় পুলিশের চেকিংয়ের সামনে পড়লে মিথ্যা মনগড়া অজুহাতের দোহাই দিয়ে সটকে পড়ছেন আইন অমান্যকারীরা। ডাক্তার দেখানো, ঔষধ কিনতে যাওয়া, নিকট আত্মীয় অসুস্থ কিংবা বাজার করতে যাওয়াসহ মিথ্যা অজুহাতের কোন ঘাটতি নেই মানুষের কাছে।
মহামারী করোনা ভাইরাসে গোটা বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়ার পাশাপাশি মৃতের সংখ্যা এক লাখ ছাড়ালেও, দেবহাটার গ্রাম্য এলাকার অজ্ঞ ও অল্প শিক্ষিত মানুষরা যেন করোনা ভাইরাসকে তোয়াক্কাই করছেননা। সরকারি নির্দেশনা এমনকি সামাজিক দুরত্বও ঠিকমতো কোথাও মানছেনা লোকজন। এমনকি ফেইস মাস্ক না পরে একগুয়েমি ভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চষে বেড়াতেও দেখা যাচ্ছে অনেককে। কেবলমাত্র দুপুর দুটোর পর থেকে উপজেলার প্রধান সড়কের আশপাশের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ রাখা হলেও, গত কয়েকদিনে অভ্যন্তরীন এলাকার দোকানপাট খোলা রাখার পাশাপাশি রাস্তাঘাটে অপ্রয়োজনে ঘুরতে বের হওয়া মানুষের সংখ্যা আবারো বেড়ে চলেছে।
এছাড়া করোনা সংক্রমন ছড়িয়ে পড়া ঢাকা, নারায়নগঞ্জসহ অন্যান্য জেলা থেকে একাধিক ট্রাক বোঝাই ইটভাটা শ্রমিক প্রতিনিয়ত বিনা বাধায় সাতক্ষীরা জেলা দিয়ে প্রবেশ করে দেবহাটা হয়ে পৌছে যাচ্ছে কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলায়। কখনো কখনো কয়েকটি করে ট্রাক বোঝাই ইটভাটা শ্রমিকদের আটক করছেন দেবহাটার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষ। শনিবার সকালেও দেবহাটার সখিপুর হাসপাতাল এলাকায় তিনটি ট্রাক বোঝাই ইটভাটা শ্রমিককে আটকে রাখে স্থানীয়রা। এছাড়া কুলিয়া ও পারুলিয়াতেও কয়েকটি ট্রাকে করে ইটভাটা শ্রমিকদের প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয়রা। অন্যদিকে রাতের বেলায় যেসকল ট্রাক গুলোতে ইটভাটা শ্রমিকদের নিয়ে আসা হচ্ছে সেগুলো ধরা পড়ছেনা এলাকাবাসী কিংবা প্রশাসনের নজরে।
এসকল শ্রমিকদের অধিকাংশরাই আসছেন বাংলাদেশের করোনা’র কেন্দ্রস্থল খ্যাত ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ জেলা থেকে। এর আগে গত বৃহষ্পতিবার দেবহাটায় এমন তিনটি ট্রাক থেকে ৭৩ জন ইটভাটা শ্রমিককে আটক পরবর্তী প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর নির্দেশ দেন দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সাজিয়া আফরীন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঝে মধ্যে সেনাবাহিনীর টহল, পুলিশ চেকিং ও নির্বাহী অফিসার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও কোনভাবেই পুরোপুরি ঘরে রাখা যাচ্ছেনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষদের এতে করে প্রতিদিনই উপজেলাব্যাপী জনসমাগম ও বাইরের জেলা থেকে আসা ইটভাটা শ্রমিকদের অনুপ্রবেশের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধির ফলে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকিও দিনদিন তীব্র হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই করোনা সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ার আগেই মানুষকে ঘরে রাখতে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট, সেনাবাহিনীর টহল জোরদার ও পুলিশের কঠোর অবস্থানকে আরো কঠোরভাবে প্রয়োগ করার দাবী জানিয়েছেন সর্বসাধারণ।