করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নিজেরা সচেতন হই: অন্যকে সচেতন করি
আজ শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। লিখেছিমার ‘যারা গ্রামে আছেন তারা একটু আওয়াজ তুলুন…….. শহরের মতো হোম কোয়ারেন্টাইন কি সেখানে মানা হচ্ছে…..? দুপুর ১২ টার দিকে দেখলাম প্রায় অর্ধশত মানুষ না সূচক মন্তব্য করেছেন। মানে গ্রামের মানুষ যথাযথভাবে মানছেন না হোম কোয়ারেন্টাইন। এই মুহুত্বে এটি খুবই উদ্বেগের খবর।
সকালে ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকম এর একাধিক প্রতিনিধির সাথে কথা বলছিলাম মুঠো ফোনে। জানার চেষ্টা করছিলাম গ্রামের মানুষ “হোম কোয়ারেন্টাইন” শব্দের সাথে কতোটুকু পরিচিত হয়েছে। তারা সে-টি মানছেন কি-না। প্রতিনিধিরা জানালেন গ্রামের মানুষ কোন কিছুই মানছে না। বরং বিকেলে বা সন্ধ্যার পরে গ্রামের হাট-বাজার গুলোতে আগের চেয়ে এখন মানুষের ভীড় বেড়েছে, জমজমাট। তারা কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে চলছেন। তাদের মধ্যে কোন ধরনের টেনশন নেই। করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে তারা মোটেও সচেতন নয়।
জানার চেষ্টা করছিলাম চায়ের দোকান গুলো খোলা আছে কি-না। কিন্তু সেখানেও না-সূচক জবাব এলো। তারা জানালো জেলা-উপজেলা শহর গুলোর চিত্র ভিন্ন। দোকান-পাট প্রশাসনের কঠোর ভূমিকার কারনে বন্ধ আছে। কিন্তু এখনো বন্ধ হয়নি গ্রামাঞ্চলের চা খাওয়ার হিড়িক।
শুক্রবার বেলা ১২ টার দিকে মুঠো ফোনে কথা বলছিলাম সাতক্ষীরার ভোমরা ইমিগ্রেশনের ওসি বিশ্বজিৎ সরকারের সাথে। জানতে চাইলাম আজও কি ভোমরা ইমিগ্রেশন দিয়ে পাসপোর্ট যাত্রীরা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে….? উত্তর এলো আজ শুক্রবার বেলা ১২ টা পর্যন্ত ৫৩ জন মানুষ ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আর গতকাল এর সংখ্যা ছিল ৬২ জন। মানে সেখানেও শংঙ্কার কথা। কারণ তাদের অনেকেই ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন আদেশ মানছেন না।
ভারত যেখানে একজন মানুষকেও (২৪ মার্চ থেকে) সেদেশে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। তাই ভারতীয় নাগরিক হলেও। সেখানে চলছে রিতিমতো লকডাউন। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। হাজার হাজার মানুষ সেখানে ইতোমধ্যে আক্রান্ত। সেই ভারত থেকে বাংলাদেশের প্রতিটি ইমিগ্রেশন দিয়ে এভাবে প্রতিদিন শত শত মানুষ এখনো বাংলাদেশে প্রবেশ করাটা কতোটুকু যুক্তিসঙ্গত তা একবার সরকারকে ভেবে দেখা খুবই জরুরী।
বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত এবং প্রভাবশালী দেশ আমেরিকা, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি তথা ইউরোপভূক্ত দেশগুলো। মানবসৃষ্ট সব ধরনের প্রযুক্তি তাদের হাতে থাকার পরও সেখানে কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না করোনার ভয়াল থাবা। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর আসছে। এসব দেশে এখন চলছে লাশের মিছিল। সেখানে বাংলাদেশের মতো একটি দেশে করোনা ভাইরাস যদি মহামারী আকার ধারণ করে তাহলে কি ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে তা-কি একবার ভেবে দেখছে গ্রামে বসবাসরত মানুষেরা….? আপনাদেও বিবেক আর কবে জাগ্রত হবে…?
প্লিজ একটু ভাবুন, এখুনি সচেতন হন। সচেতন হওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। বিদেশে থেকে যারা এসছেন যতো কষ্টই হোক ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলুন। ঘর থেকে বের হবেন না। দেশের স্বার্থে শুধু নয়, আমাদের নিজেদের পরিবারের স্বার্থে এটি মানতে হবে। সুস্থ্য রাখতে, সুস্থ থাকতে আমাদেও সবাইকে ঘরে থাকা খুবই প্রয়োজন।
দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, র্যাবসহ বিভিন্ন সরকারি,বেসরকারি,বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান করোনার ভয়াল থাবা থেকে বাঁচতে এবং মানুষকে বাঁচাতে রাতদিন পরিশ্রম করে চলেছে। এই মুহুত্বে গ্রামের মানুষগুলো সচেতন না হলে করোনা মহামারী আকার ধারণ করবে।
আসুন আমরা সবাই মিলে ভয়াবহ এই মহাদুর্যোগ মোকাবেলা করি, নিজেরা সচেতন হই, প্রতিবেশিদের দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকেও সচেতন করি।