মুক্তি পেয়ে বাসায় পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া
দুই বছর ৪৬ দিন পর বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। আজ বুধবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে রাজধানী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে তিনি মুক্তি পান। বিকেল সোয়া ৫টার দিকে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় পৌঁছান তিনি। এ সময় আগে থেকে সেখানে বিপুল নেতাকর্মী ভিড় করেন।
বেলা পৌনে ৩টার দিকে মির্জা ফখরুল বিএসএমএমইউ হাসপাতালে আসেন। এ সময় খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কয়েকটি গাড়িও হাসপাতালে প্রবেশ করে। মির্জা আলমগীর হাসপাতালে প্রবেশ করলে নেতাকর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। এ সময় তিনি কিছুটা বিরক্ত বোধ করেন।
পরে বিএনপির মহাসচিব হ্যান্ডস গ্লাভস পরে খালেদা জিয়া যেখানে বন্দি আছেন সেদিকে (কেবিন ব্লক) যান। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ও বোন বেগম সেলিমা ইসলাম হাসপাতালে পৌঁছেছেন। তাঁরা চার চিকিৎসক ও এক নার্স নিয়ে খালেদা জিয়ার কাছে যান।
এ সময় বিএনপির সহস্রাধিক নেতাকর্মী হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ভিড় করে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিচে নেমে এসে নেতাকর্মীদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। অনেক কষ্টে তিনি নেতাকর্মীদের সরাতে সক্ষম হন।
বিকেল ৪টা ৯ মিনিটে খালেদা জিয়ার ব্যবহৃত জিনিসপত্র হাসপাতাল থেকে বের করে আনা হয়। এরপর ৪টা ১২ মিনিটে পরিবারের সদস্য ও বিএনপির মহাসচিব বের হয়ে আসেন। ৪টা ১৪ মিনিটে খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে করে বের করা হয়।
এ সময় আশপাশে কয়েক হাজার নেতাকর্মী ভিড় করেন। তারা ‘খালেদা জিয়া’ বলে বারবার স্লোগান দেন। সেই ভিড় ঠেলে খালেদা জিয়ার গাড়ি বের করতে নিরাপত্তা কর্মীদের বেগ পেতে হয়। হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ি গুলশানের উদ্দেশে রওনা দেয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডাদেশ পেয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে বন্দি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তাঁকে সাত বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে সর্বশেষ গত বছরের ১ এপ্রিল তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এর আগে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য মুক্তির নির্দেশ দেয় সরকার। খালেদা জিয়াকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১-এর উপধারা ১ অনুযায়ী নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যগত অবস্থার অবনতির কথা উল্লেখ করে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে দুই দফায় জামিনের আবেদন করা হয়। সবশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ার পর খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ে দুই দফায় আবেদন করেন। পাশাপাশি তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে মানবিক কারণে মুক্তি দেওয়ার অনুরোধ জানান।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গুলশানে তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়াকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১-এর উপধারা ১-এর বিধি অনুযায়ী দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে মুক্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। আনিসুল হক বলেন, সরকার নির্বাহী আদেশে মানবিক কারণে খালেদা জিয়ার বয়স ও স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আজ বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল পৃথক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার মুক্তির ঘোষণা দেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পান খালেদা জিয়া। আপিলের পর হাইকোর্টে তা বেড়ে ১০ বছর সাজা হয়। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। একই সঙ্গে তাঁকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।