দেবহাটা সীমান্ত দিয়ে ধেয়ে আসছে মাদক বেপরোয়া চোরাকারবারিরা

সাতক্ষীরার দেবহাটায় মাদক চোরাকারবারিরা এখনও রাতের আধারে ভারত থেকে আনছে মাদক দ্রব্য। তবে দেশব্যাপী মাদকের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকায় কৌশলে পাইকারি ও খুচরা মাদক বিক্রি করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টরালেন্স থাকলেও চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা বন্ধ তো করেনি বরং বিভিন্ন স্থানে চোরাই পথে মাদক আমদানি করছে ভারত থেকে। সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী ইছামতী নদীর পাড়ে অবস্থিত দেবহাটা উপজেলা ।

নদীর ওপারে ভারতের হিমেল গঞ্জ।ইছামতী নদী সাতার দিয়ে উপজেলার ছুটিপুর,বসন্তপুর,শ্রীপুর,খানজিয়া ও দেবহাটা ওই তিন স্থান দিয়ে চোরাকারবারিরা মাদক বাংলাদেশে আনে বলে জানায় স্থানীয়রা। দেবহাটায় রমরমা এখন মাদকের বাণিজ্য। সম্প্রতি মাদকের চালান বহনে যুক্ত হয়েছে নারীরাও। উপজেলা প্রশাসনের মাদক বিরোধী সাড়াশি অভিযান চললেও থামছে না মাদকের কারবার। প্রতিদিন দুই একজন ক্ষুদ্র মাদক বিক্রেতা ও বহনকারীরা আটক হচ্ছে।

তবে মূল হোতারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে অবাধে মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। চোরাকারবারি ও মাদক বিক্রেতা সিন্ডিকেটের মূল হোতারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকায় সর্বগ্রাসী মাদক পাচার বন্ধ হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,দেবহাটা উপজেলায় চোরাকারবারিরা হঠাৎ করেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন এলাকার সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ধেয়ে আসছে ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইন ও ইয়াবা। ফেনসিডিল হেরোইনের পাশাপাশি এখন সবচেয়ে বেশি আসছে ইয়াবা।

অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে দেবহাটা উপজেলার কিছু মাদক চোরাকারবারির নাম,উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের মৃত মোহাম্মদ আলী মিস্ত্রীর ছেরে সাইফুল ইসলাম দীর্ঘদিন যাবত মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে আছেন তিনি। বর্তমানে ভারত থেকে ফেনসিডিল বাংলাদেশে পাচারের করছে। মাদকসহ পুলিশের হাতে আটক ও হন তিনি। তারপরও বর্তমানে সে অবাধে মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কখনো মাদকের সাথে জড়িত ছিলামনা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। আগেও কোন প্রকার মাদক ব্যবসা করেননি এখনও করছিনা।

চন্ডিপুর গ্রামের আমীর আলীর ছেলে পলাশ হোসেন (৩২) তার বাড়ীতে গেলে সাংবাদিকদের দেখে সে পালিয়ে যায়। তার নামে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে থানায়। তারপরও বাড়ীতে সে গাঁজা ও ফেনসিডিল খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করছে। স্থানীয় আনিসুর রহমানসহ অনেকে জানায়, পলাশ এলাকার যুব সমাজ ধ্বংস করে দিচ্ছে।এখনও সে তার বাড়ীতে গোপনে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের মৃত ফজর আলী সরদারের ছেলে হাবিব সরদার।

মাদক চোরাকারবারিদের মধ্যে অন্যতম মাদক মামলাসহ তার নামে থানায় রয়েছে ডজন খানেক মামলা। তারপরেও সে থেমে নেই মাদক আমদানি থেকে। তার বাড়ীতে যেয়ে দেখা যায় গেটের বাইরে তালা দেওয়া। কিন্তু ভিতরে কেউ আছে কিনা বুঝে ওঠা কঠিন। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সে অন্য পথ দিয়ে পালিয়ে যায়। দেখা হয় তার ভাই হাতেম সরদারের সাথে তিনি বলেন আপনাদেরকে দেখে পুলিশ ভেবে আমার ভাই পালিয়ে গেছে। কারণ সে পুলিশের সামনে কখনো যায়না। তার নামে ১০ টার বেশি মামলা রয়েছে।

এলাকায় মাদকের ডিলার হিসেবে পরিচিত নাংলা গ্রামের নুর বিশ্বাসের ছেলে সাজিদ বিশ্বাস। পড়াশুনার পাশাপাশি মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সে। তার দেখা না পেলেও কথা হয় তার মা খাদিজা বেগমের সাথে। তিনি বলেন তার ছেলে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছিল এটা তারা জানতোনা। মাদকসহ র‌্যাবের অভিযানে আটক হয়েছিল সাজিত। এরপর থেকে সে ব্যবসা করছেনা বলে জানান তার মা।
একই গ্রামের মৃত হায়দার গাজীর ছেলে সাইফুল ইসলাম বড় ধরনের চোরাকারবারি। তিনি দীর্ঘদিন যাবত ভারত সীমান্ত থেকে মাদক পাচারের কাজে লিপ্ত রয়েছে। প্রশাসনের এত নজরদারীর পরও থেমে নেই তার মাদক ব্যবসা।

নাংলা গ্রামের জামাল তরফদারের ছেলে রবিউল তরফদার ছিট কাপড় আমাদনি করেন ভারত থেকে। কাপড়ের সাথে আসে ফেনসিডিল,ইয়াবা ও হিরোইনের বড় বড় চালান। মোবাইল ফোনে তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, কখনো তিনি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতনা ছিলেননা।
নদী পথে সাতার দিয়ে ভারত থেকে মাদক নিয়ে আসার জন্য চোরাকারবারিদের রয়েছে আলাদা মানুষ। অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হিমেলগঞ্জ থেকে নদী সাতার দিয়ে দেবহাটার বিভিন্ন পয়েন্টে মাদক নিয়ে আসে তারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ মাদক পাচারকারী গডফাদারদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের কিছু সদস্যের ও বর্ডার গার্ডদের সখ্যতা থাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা এখনও ভারত থেকে মাদক আমদানি করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। নামক প্রকাশ না করা শর্তে দেবহাটার একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন বর্ডার গার্ড না চাইলে সীমান্ত দিয়ে একটি পাখি ও বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারেনা। তাহলে মাদক চোরাকারবারিরা কিভাবে মাদক নিয়ে দেশের ভিতরে প্রবেশ করে?

দেবহাটা সীমান্ত দিয়ে মাদক ধেয়ে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে খানজিয়া বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার নায়েক সুবেদার এসএম মোস্তাকিম বলেন, তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চোরাকারবারিরা ভারত থেকে মাদক আমদানি করছে। চোরাকারবারিদের ঠেকানো তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোবাইল ফোন বেশি ক্ষতি করছে। বিজিবি কোথায় অবস্থান করছে সেটা তাদের সহযোগীরা জানিয়ে দেয় চোরাকারবারিদের। এজন্য সুযোগ বুঝে তারা মাদকের চালান নিয়ে আসছে। তারপরও চোরাকারবারিরা যেন দেবহাটার কোন সীমান্ত দিয়ে মাদক ভারত থেকে নিয়ে আসতে না পারে সে ব্যপারে বিজিবি যথেষ্ট তৎপর রয়েছে বলে জানান তিনি।

মাদকের বিষয়ে জানতে চাইলে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব সাহা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে তার থানা জিরো টলারেন্স। কোন প্রকার মাদক সংক্রান্ত তথ্য পেলেই তিনি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেন। গত মাসে ১’শর অধিক ব্যবসায়ীদের মাদকসহ আটক করে মামলা দিয়েছেন বলে জানান। রাতের আধারে যদি ভারত থেকে চোরাকারবারিরা মাদক দেবহাটায় নিয়ে আসে সেটা বিজিবির ব্যাপার বলে তিনি জানান।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)