সাতক্ষীরা তালায় আমের মুকুলে ভরে উঠেছে
এ-কূল,ও-কূল,গাছের দু-কূল,বেশ ফুটেছে,ওসব কি ফুল,জুঁই,চামেলি?,না-কি বকুল?? ঠিক যেন কানদুল!!! নারে বাবা সে আমাদের ফলের রাজা আমের-ই মুকুল। ফালগুণের হাওয়াতে সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় গতবারের তুলনায় এবার প্রচুর মুকুল দেখে বাম্পার ফলনের আশা করছেন বাগান মালিকরা। এবারও বিষমুক্ত আম রপ্তানির বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে পোকার আক্রমণ ও প্রতিকূল আবহাওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় রয়েছেন তারা। তবে বাগানগুলোতে এবার প্রতিটি গাছে পর্যাপ্ত মুকুল এসেছে। এখানকার হিমসাগর, ন্যাংড়া, গোপালভোগ ও আমরুপালি আম দেশের বাইরেও খ্যাতি অর্জন করেছে। তাই গাছে আসা পর্যাপ্ত আমের মুকুল ধরে রাখতে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বাগানের শ্রমিকরা।
আম বাগান মালিকরা বলেন, বিষ মুক্ত আম উৎপাদন হবে। গত বছর আমরা বিদেশে আম রপ্তানি করেছিলাম। আশা করছি এবারো আমরা রপ্তানি করব।
এ দিকে সরজমিনে উপজেলার গোপালপুর,খলিলনগর,তেতুলিয়া,তালা,খলিলনগর সহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, গত বছরের থেকে এবার বেশি ফলন হয়েছে এবার উপজেলায় মোট ৭১৫ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে।যার প্রায় ৭০-৮০ ভাগ গাছে মুকুল চলে এসেছে । তাই চাষিদেরকে ফুল ফোটা অবস্থায় কোন ঔষধ বা কীটনাশক ব্যবহার না করার জন্য বলা হয়েছে। তবে ফুল ফোটার সময় মেঘলা ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকলে পুষ্প মঞ্জুরিতে পাউডারি মিলডিউ ও অ্যানত্রাকনোজ রোগের আক্রমণ হতে পারে,যদিও এখন পর্যন্ত তেমন কোন পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। এ সময়ে বাগানে হপার এবং ফুদকী পোকা গাছের বাকলে লুকিয়ে থাকে। তিনি অনুমোদিত কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি-কর্মকর্তারা।
পরিচর্যার বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান,মুকুলের পরিচর্যাস্বরূপ পোকা দমনের লক্ষ্যে রিপকট ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এক বোতল বিষে ৪/৫টি গাছে ভালোভাবে স্প্রে করা সম্ভব। এছাড়াও ম্যানকোজেট গ্রুপের ছত্রাকনাশক দুই গ্রাম অথবা ইমাডোক্লোরিড গ্রুপের দানাদার প্রতি লিটার পানিতে দশমিক দুই গ্রাম, তরল দশমিক ২৫ মিলিলিটার ও সাইপারম্যাঙ্নি গ্রুপের কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। আবার মুকুল গুটিতে রূপান্তর হলে একই মাত্রায় দ্বিতীয়বার স্প্রে করতে হবে। এছাড়া পাউডার মিলডিউ নামের এক প্রকার ছত্রাকজনিত রোগেও আমের ফলনের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। কখনও গাছে এ রোগের আক্রমণ দেখা দিলে অবশ্যই সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম হারে মিশিয়ে সাত থেকে ১০ দিন পর পর দুইবার স্প্রে করতে হবে।
আম বাগানের মালিক জহর হাসান জানান, এ বছরের আবহাওয়া আমের জন্য অনুকূলে রয়েছে। আমের জন্য এখন আর অফ ইয়ার বা অন ইয়ার নেই। বছরজুড়ে গাছের পরিচর্যা করার কারণে এখন প্রতি বছরই আমের ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শে গাছে মুকুল আসার ১৫ থেকে ২০ দিন আগেই তারা পুরো গাছ সাইপারম্যাঙ্নি ও কার্বারিল গ্রুপের কীটনাশক দিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করে গাছ ধুয়ে দিয়েছেন।
এতে গাছে বাস করা হপার বা শোষক জাতীয় পোকাসহ অন্যান্য পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। গত বছরের চেয়ে টানা শীত ও কুয়াশার তীব্রতা এ বছর অনেক কম। গতবারের মতো মৌসুমের শুরুতে শিলাবৃষ্টিও হয়নি। এরই মধ্যে অনেক গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। আশা করা যাচ্ছে, ফল্গুনের মধ্যে আমগাছ গুলোতে পর্যাপ্ত মুকুল আসবে। তবে মাঝে-মধ্যেই আকাশে মেঘ জমে উঠছে। এ সময় শিলাবৃষ্টি হলে আমের মুকুলের ক্ষতি হবে। এর উপর সামনে কালবৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। তাই আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কাও কাজ করছে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার আবদুল্লা আল মামুন জানান ,আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও বড় ধরণের কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে চলতি মৌসুমে তালায় ১১ হাজার ৩৬০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া আশানুরূপ ফলন পাওয়ায় তালায় প্রতি বছর আম বাগানের সংখ্যা বাড়ছে ।