ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যবধানে বাংলাদেশের জয়
সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ১৬৯ রানের বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ফলে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয় তুলে নিয়েছে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার দল। প্রথমে ব্যাট করে লিটন দাসের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ভর করে ৩২১ রানের বড় সংগ্রহ পায় টাইগাররা। এরপর বোলারদের সমন্বিত আক্রমণে মাত্র ১৫২ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
এর আগে রানের ব্যবধানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জয় ছিল ১৬৩ রান। মিরপুরে শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২০১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি শ্রীলংকাকে ৩২১ রানের টার্গেট দিয়ে এই জয় তুলে নিয়েছিল টাইগাররা।
পাহাড়সম রান তাড়ায় জিম্বাবুয়ের হয়ে ইনিংস ওপেনে নামেন অধিনায়ক চামু চিবাবা ও তিনাশে কামুনহুকাময়ে। বল হাতে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই উইকেট পেয়ে যেতো বাংলাদেশ। তবে মুস্তাফিজুর রহমানের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। মাশরাফীও রিভিউ না নেয়ায় বেঁচে যান কামুনহুকাময়ে। তবে পরের ওভারেই তাকে বোল্ড করে সাজঘরে পাঠান দীর্ঘদিন পরে দলে ফেরা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এর আগে মাত্র ১ রান করেন তিনি।
দলের হয়ে দ্বিতীয় আঘাতও হানেন সাইফউদ্দিন। রেগিস চাকাভাকে ১১ রানেই ফেরান এই পেসার। বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফীর আঘাতে ১০ রান করে সাজঘরে ফেরেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক চিবাবা। জিম্বাবুয়ের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন টেইলরকে ব্যক্তিগত ৮ রানে বোল্ড করেন তাইজুল ইসলাম।
এরপর সিকান্দার রাজা ও ওয়েসলে মাধেভেরে ৩৫ রানের জুটি গড়েন। ১৮ করে সিকান্দার রাজা আউট হওয়ার পরই ৩৫ রান করা মাধেভেরেকে হারায় জিম্বাবুয়ে। সপ্তম উইকেট হিসেবে রিচমন্ড মুতুম্বামি (১৭) আউট হওয়ার পর জিম্বাবুয়ের জয়ের আশা একপ্রকার শেষ হয়ে যায়।
তিরিপানোকে ২ রানের বেশি করতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। কার্ল মুম্বাকে ১৩ রানে ফেরান সাইফ। শেষ উইকেট হিসেবে মুতোম্বোদজি আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে ইতিহাস রচনা করে বাংলাদেশ।
এর আগে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগার ক্যাপ্টেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। শুরু থেকেই বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান করতে থাকেন লিটন। তবে অপরপ্রান্তে অনেকটাই খোলসবন্দী হয়ে থাকেন তামিম।
প্রথম পাওয়ার প্লের ১০ ওভার থেকে ৪৪ রান যোগ করেন দুই ওপেনার। এর ভেতর লিটনের ব্যাট থেকে ২৭ (২৯ বল) ও তামিমের ব্যাট থেকে ১৫ রান (৩১ বল) আসে। দেখেশুনে খেলতে থাকলেও অভিষিক্ত ওয়েসলে মাধেভেরের সামনে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তামিম। ৪৩ বলে ২৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই ওপেনার।
তামিম ফিরলেও রানের চাকা সচল রাখেন লিটন। ৪৫ বলে পূর্ণ করেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক। ২০ ওভারে দলীয় শতকের দেখা পায় বাংলাদেশ। এর কিছুক্ষণ পর ৩৮ বলে ২৯ রান করে আউট হন নাজমুল হোসেন শান্ত।
অন্য দুই ব্যাটসম্যান বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও ঠান্ডা মাথায় এগোতে থাকেন লিটন দাস। শুরু থেকেই বাহারি শটে খেলতে থাকা এই ওপেনার ৯৫ বলে পূরণ করেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক। সেঞ্চুরির পর আরো আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন তিনি। পরবর্তী ১০ বলে আরো ২৩ রান করার পর ক্র্যাম্পের শিকার হন এই মারকুটে ব্যাটসম্যান।
শেষ পর্যন্ত ১০৫ বলে ১২৬ রান করে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন লিটন। এর আগে ২৬ বলে ১৯ করে আউট হন মুশফিকুর রহিম। দুজনের বিদায়ের পর মোহাম্মদ মিথুন ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মিলে এগিয়ে নেন দলকে। ব্যক্তিগত ৩২ রানে লেগ বিফোরের শিকার হয়ে রিয়াদ ফিরলে ভাঙে দুজনের ৬৮ রানের জুটি।
৪০ বলে ফিফটি পূরণ করেন মিথুন। তবে পরের বলেই সাজঘরে ফেরেন তিনি। শেষ দিকে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ১৫ বলে অপরাজিত ২৮ রানের ঝড়ো ইনিংসে বড় সংগ্রহ নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা।
জিম্বাবুয়ের হয়ে ২ উইকেট নেন ক্রিস এম্পোফু। এছাড়া কার্ল মুম্বা, মাধেভেরে, ডোনাল্ড তিরিপানো ও মুতোম্বোদজি প্রত্যেকেই একটি করে উইকেট শিকার করেন।
আগামী ৩ মার্চ একই ভেন্যুতে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে দুই দল। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টায়।