প্রাণঘাতী যত ভাইরাসের থাবায় মরেছে বিশ্ববাসী
বিভিন্ন সময় বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে প্রাণঘাতী সব ভাইরাস। বার্ড ফ্লু বা নিপাহ ভাইরাসের মতো এবার বিশ্ববাসীকে ভয় দেখাচ্ছে করোনা ভাইরাস।
এতে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই রোগের থাবায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন চীনের অধিবাসীরা। করোনা ভাইরাস নামক এই ভাইরাসের প্রকোপ কমাতে বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এবার তবে জেনে নিন বিগত দুই দশকে যেসব প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বিশ্ববাসী-
বার্ড ফ্লু (এইচ৫এন১)
১৯৯৭ সালে হংকংয়ে এইচ৫এন১ ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ২০০৩, ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়। ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৬৩০ জন বার্ড ফ্লুতে সংক্রমিত হয়েছেন এবং ৩৭৫ জন মারা গেছেন।
নিপাহ ভাইরাস
১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার পাংকর দ্বীপের ছোট্ট শহর কামপুং তেলুক নিপাহতে নতুন একটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়। পরের বছর ওই শহরের নামে ভাইরাসটির নামকরণ হয় নিপাহ। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যুর আশঙ্কা ৫৪ শতাংশ। ২০১৮ সালে ভারতের কেরালায় এই ভাইরাস সংক্রমণে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে অন্তত ১০ জন মারা যান৷
সার্স
এই ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব হয় চীনে। সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) বেশ মারাত্মভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০২ ও ২০০৪ সালে এশিয়ার কয়েকটি দেশে সার্স ভাইরাস মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। আট হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয় এই ভাইরাসে। এতে মৃত্যু হয় অন্তত ৭৭৪ জনের। ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট হয় ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করলে। তবে ২০০৪ সালের পর এই ভাইরাসে প্রাদুর্ভাবের খবর আর পাওয়া যায়নি।
সোয়াইন ফ্লু
শূকরের ফ্লুর সঙ্গে লক্ষণ মিল থাকায় একে সোয়াইন ফ্লু নাম দেয়া হয়। ২০০৯ সালে প্রথম বিশ্ব জুড়ে এইচ১এন১ ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১ থেকে ২১ শতাংশ মানুষ এই ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন। দেড় লাখ থেকে প্রায় ছয়লাখ মানুষের মৃত্যু হয় এই ফ্লুতে৷ ঢাকায় নতুন বছরে সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার খবর শোনা গেলেও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
মার্স (মিডলইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম)
২০১২ সালে প্রথম সৌদি আরবে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। এটি সার্স ভাইরাস গোত্রেরই একটি ভাইরাস। সৌদিতে মার্সে আক্রান্ত প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। উট থেকে এই ভাইরাসটি মানবদেহে ছড়ায় বলে ধারণা করা হয়। এরপর হাঁচি, কাশি ও সংস্পর্শের মাধ্যমে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাসটি।
করোনা ভাইরাস
চীনের উহান প্রদেশে করোনা ভাইরাসের থাবায় মারা গেছেন সাত জনেরও বেশি। গত ডিসেম্বর থেকে এই ভাইরাসের প্রকোপে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত দুই শতাধিক। তবে যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন সরকারের হিসাবের চেয়ে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট এবং মারাত্মক নিউমোনিয়া দেখা দেয়।
চীনে নববর্ষ উদযাপনের সময় করোনা ভাইসারের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এ সময়ে অনেকেই বিশ্ব ভ্রমণে গিয়েছিলেন আবার অনেকেই বিভিন্ন দেশ থেকে চীনে আসায় ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। চীন ছাড়াও থাইল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। তবে ওই তিন দেশে এখনো কারো মৃত্যুর খবর শোনা যায়নি।
এবার তবে জেনে নিন করোনা ভাইরাস কী, এটি কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং এর উপসর্গ ও লক্ষণগুলো-
করোনা ভাইরাস কী?
নোবেলা করোনা প্রকৃতির এই করোনা ভাইরাস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি আসলে ফ্ল্যাবিও ভাইরাস, যা দ্রুত সংক্রামিত হয়। চীনের উহানের প্রথম করোনা সংক্রণের ঘটনা নজরে আসে। তারপর থেকে নতুন নতুন জায়গাতেও এই ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটে চলেছে।
করোনার কোথায় উৎপত্তি
চীনের হানের মাছের বাজার থেকে ছড়ায় এই ভাইরাসটি। এই অঞ্চলেই বেশিরভাগ সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত গবাদি পশু থেকে ছড়ায় বলে করোনার ক্ষেত্রে বিপদ অনেক বেশি।
কীভাবে ছড়ায়
পশু-পাখি ও গবাদি পশুর সংস্পর্শে থাকা মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। পশুর লোম, মল থেকেই এই ভাইরাস সংক্রমণের প্রবণতা বেশি। সরাসরি মানুষের দেহে সংক্রমিত হয় এই ভাইরাস, মানুষ থেকেও পশুর দেহে ছড়াতে পারে।
উপসর্গ ও লক্ষণ
প্রাথমিকভাবে সর্দি, কাশি থেকে নিউমোনিয়া। সঙ্গে প্রবল জ্বর, শ্বাসকষ্ট। এটাই প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। অ্যান্টিবায়োটিকও কাজ করে না বলে এই ভাইরাস কাবু করা কঠিন। প্রাথমিকভাবে এর উপসর্গও বোঝা শক্ত।
সূত্র: ডয়চে ভেলে