জেলা প্রশাসকের সাথে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার স্বাক্ষী নুরুল ইসলাম খানের শুভেচ্ছা বিনিময়
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নিজের লেখা বই উপহার দিয়েছেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার একমাত্র জীবিত স্বাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম খান। সোমবার বেলা ১১ টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। পরে মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে নিজের অবস্থান নিয়ে লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধ এবং আমি’ বইটি জেলা প্রশাসককে উপহার দেন তিনি। নুরুল ইসলাম খান বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার একমাত্র জীবিত স্বাক্ষী। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তার শারিরীক অবস্থার খোজখবর নেন জেলা প্রশাসক। পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেও জেলা প্রশাসকের সাথে বর্ণণা করেন ভয়াল সেই কালো রাতের ঘটনা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ভয়াবহ কালো রাতেই স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্রে স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে ধানমন্ডিস্থ ৩২ নম্বর বাসাতে ঢুকে নৃশংসভাবে হত্যা করে তৎকালীন সেনা সদস্যরা। সে রাতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন এএসপি নুরুল ইসলাম খান। সেই রাতে তিনি সহ দুই জন এসআই, তিনজন এএসআই, সাতজন পাহারাদার, এক সেনা সদস্য ও পুলিশ কনস্টেবল ছিলেন বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার দায়িত্বে। বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যাকালীন সময়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নুরুল ইসলাম খান, বঙ্গবন্ধুর পিএ মহিদুল ইসলাম সহ অন্যন্যরাও গুলিবিদ্ধ হন। পরে পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সেখান থেকে পালিয়ে প্রানে বেঁচে যান নুরুল ইসলাম খান। বর্তমানে তার বয়স প্রায় নব্বইয়ের কাছাকাছি। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তিনিই একমাত্র জীবিত স্বাক্ষী। বয়সের সাথে সাথে এখন তার শারিরীক অবস্থাও অনেক পরিবর্তিত। তাছাড়া বিগত দিনে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার স্বাক্ষী হওয়ার কারনে এ পর্যন্ত কয়েকবার তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। কখনো হামলা হয়েছে স্বাক্ষী দিতে যাওয়ার সময়। আবার কখনো হয়েছে আদালত থেকে স্বাক্ষী দিয়ে ফেরার সময়। এসব হামলার ঘটনায় একাধিকবার গুরুতর জখম হয়ে এখনও বাংলাদেশের সেই কালো রাতের ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আছেন তিনি।
শুধু তাই নয় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অগ্রানী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধকালীন ২নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার স্বাক্ষী হওয়ায় স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘ সময়ে বিএনপি-জামায়ত জোট সরকার তাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়নি। পরে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর তাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেন। তাছাড়া তার নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সম্মাননাও দেন শেখ হাসিনা।
বর্তমানে তিনি আমেরিকায় অবস্থান করেন। ১৯৯৭ সালে ফ্রিডম পার্টির সদস্যরা গাজীপুরে তার মাথা ইট দিয়ে থেতলে দেয়। আল্লাহর রহমতে তিনি বেঁচে যান এবং আদালতে সাক্ষ্য দেন। তাঁর বড় ছেলে একসময় ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের ভিপি ছিলেন। আরেক ছেলে নাহিদ খান বিজিবি’র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। আজও বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা মনে উঠতেই কাতরে কেঁদে ওঠেন তিনি।
নুরুল ইসলাম খান বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে আমি সন্তুষ্ঠ । তবে আরো খুশী হতাম যদি অন্তত মৃত্যুর আগে বিদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর অন্যান্য খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসিতে ঝুলানো দেখে যেতে পারতাম। জেলা প্রশাসকের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে নুরুল ইসলাম খানের সাথে জেলা মুক্তিযুদ্ধ সন্তান কমান্ডের সভাপতি আবু রাহান তিতু ও তার ছেলে নাজিবুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন। সম্প্রতি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেবহাটাতে ছেলে নাজিবুল ইসলাম খানের শ্বশুর বাড়ীতে বেড়াতে এসেছেন তিনি।