ব্র্যাক প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ মারা গেছেন
ব্র্যাক প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাহি রাজিউন)। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি বসুন্ধরার অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে, এক ছেলে এবং তিন নাতি-নাতনি রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানিয়েছেন।
ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, আমাদের প্রিয় আবেদ ভাই, আর আমাদের মাঝে নেই। এই মুহূর্তে, কোনো সমবেদনা বা সান্তনার ভাষাই তাকে হারানোর কষ্ট কমাতে পারবে না। যে কোনো কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে শান্ত থাকা ও এগিয়ে যাবার শিক্ষাই তিনি সবসময় আমাদের দিয়েছেন। জীবনভর যে সাহস আর ধৈর্যের প্রতিচ্ছবি আমরা তার মাঝে দেখেছি, সেই শক্তি নিয়েই আমরা তার স্মৃতির প্রতি যথাযথ সম্মান জানাব।
২২ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত তার মরদেহ ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে বলে জানা গেছে। দুপুর সাড়ে বারোটায় আর্মি স্টেডিয়ামেই নামাজে জানাজা সম্পন্ন হবে। জানাজার পর বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
১৯৭২ সালে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করার পর তা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত হয়েছে। চলতি বছর স্যার ফজলে হাসান আবেদ ব্র্যাকের চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি নেন। এরপর তাকে প্রতিষ্ঠানটির ইমেরিটাস চেয়ার নির্বাচিত করা হয়।
ফজলে হাসান আবেদ ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাবনা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ব্রিটেনের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেভাল আর্কিটেকচারে ভর্তি হয়েছিলেন। সেটা বাদ দিয়ে তিনি লন্ডনের চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্টসে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে তিনি তার প্রফেশনাল কোর্স সম্পন্ন করেন।
দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ বাংলাদেশ ও বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অ্যাওয়ার্ড ও সম্মাননা পেয়েছেন। ১৯৮০ সালে র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার, ২০১০ সালে দারিদ্র্য বিমোচন ও দরিদ্রের ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে নাইট উপাধি দেয়া হয়।
২০১১ সালে ওয়াইজ প্রাইজ অব এডুকেশন, ২০১৪ সালে লিও টলস্টয় ইন্টারন্যাশনাল গোল্ড মেডেল, স্প্যানিশ অর্ডার অব সিভিল ম্যারিট, ২০১৫ সালে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি পুরস্কার অর্জন করেন। সর্বশেষ চলতি বছর তিনি সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে সাউথ এশিয়ান ডায়াসপোরা অ্যাওয়ার্ড, শিক্ষায় ভূমিকা রাখায় ইয়াডান পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।