বিদেশে পাঠানোর নামে ধোঁকাবাজি হলে ব্যবস্থা: প্রধানমন্ত্রী
বিদেশে পাঠানোর নামে কেউ যদি মানুষকে ধোঁকায় ফেলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের রিক্রুটিং এজেন্সিকে বলব, তারা যেন শুধু অর্থ উপার্জনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে অযথা কর্মীদের বিদেশে না পাঠায়।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বায়রা সভাপতি বেনজীর আহমেদ, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখেছি, কিছু কিছু দালালের খপ্পরে পড়ে যায় আমাদের গ্রাম বাংলার মানুষ। তাদের বিদেশে পাঠিয়ে সোনার হরিণ ধরার স্বপ্ন দেখায়। অনেকে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে বা বিক্রি করে বিদেশে চলে যায়। এখন রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ আছে। কোথায় চাকরি করবে যাচাই-বাছাই করার সুযোগ আছে। যে দেশে যাবে সেখানে চাকরির অবস্থা, বেতন সঠিকভাবে পাবে কিনা বা তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা, এমনকি তাদেরকে স্মার্ট কার্ড দেয়া হচ্ছে। তারপরও কিছু লোক এভাবে ধোঁকায় পড়ে চলে যায়।
প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ মানুষের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের ধোঁকায় যেন কেউ না পড়ে। আর এ ধোঁকায় পড়ে কেউ কারো ছেলে-মেয়ে এমনকি বিয়ে করা স্ত্রীকেও পাঠিয়ে দেয়। এমনকি বিক্রিও করে দেয় অনেক স্বামী-স্ত্রীকে। এরকম অনেক ঘটনা আমরা পেয়েছি, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
যারা এ ধরনের প্রতারণায় জড়িত হবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সতর্ক করেন সরকারপ্রধান। পাশাপাশি এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা এড়াতে রিক্রুটিং এজেন্সি এবং জনশক্তি বিদেশি আমদানিকারক কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
অভিবাসীদের কল্যাণে নেয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে যারা বাইরে যাবে তাদের নিরাপত্তা, চাকরির নিশ্চয়তা, তারা যেন সুষ্ঠুভাবে কর্মক্ষেত্রে তাদের কর্ম সম্পাদন করতে পারে, দক্ষতার সঙ্গে, সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি।
প্রবাসীদের পাঠানো অর্ধ যে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রেখেছে সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের রিজার্ভ, আমাদের বিভিন্ন কাজে যে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করি, তার অধিকাংশই আসে এ প্রবাসীদের পাঠানো টাকা থেকে। কাজেই আমরা সবসময় এটাকে গুরুত্ব দেই। তাদের কষ্টার্জিত অর্থটা যেন যথাযথভাবে দেশের কাজে লাগে, আমরা সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিই।
প্রবাসীরা যাতে দেশে টাকা পাঠানোর সময় বৈধ পথে পাঠান সেই আহ্বানও জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অনেক সময় টাকা ‘অন্যভাবে’ পাঠাতে গেলে ধোঁকায় পড়তে হয়। পরিবারের কাছে অর্থ পৌঁছায় না। এজন্য আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছি। বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠালে আমরা দুই শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দেব। এবারের বাজেটে আমরা ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা এ খাতে বরাদ্দ রেখেছি।
বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধে নেয়া ব্যবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিমানবন্দরে কিছু কর্মচারী থাকে, তাদের একটা প্রবণতা থাকে, বিদেশ থেকে আসলেই তাদের কাছ থেকে কিছু টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়া যায় কিনা। সেজন্য যখন অভিবাসী আসবে, তার জন্য আলাদা ডেস্কের ব্যবস্থা, সেখানে সিসি ক্যামেরা আছে। সেখানে নজরদারির ব্যবস্থা আছে এবং গোয়েন্দা সংস্থাও লাগানো আছে। সেখানে কিছু হলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা জানতে পারি এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারি সে পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি।
বিদেশে যারা কাজ করতে যাবেন তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠানোর ওপর জোর দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এটা বাধ্যতামূলক। এটার ওপর আরো বেশি নজর দিতে হবে। ট্রেইনিংটা নিয়েই তারা যেন যায়। নইলে তারা নানান ধরনের নির্যাতনেরও শিকার হয়।
তিনি বলেন, আমি এটুকুই বলব, আমাদের নিজের দেশের ভাবমূর্তি বিদেশে উজ্জ্বল রাখার জন্য যারাই বিদেশে কাজ করবেন আর যারাই বিদেশে কর্মী প্রেরণ করবেন তারা সব সময় যত্নবান হবেন। প্রবাসীকল্যাণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি তাকে সপরিবারে হত্যার ঘটনায় দেশের পিছিয়ে পড়ার কথাও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন।