ডুমুরিয়ার বাদুরগাছার একমাত্র রাস্তা খালে:ইউএনও’র নতুন রাস্তার আশ্বাস

ডুমুরিয়া উপজেলার দুর্গম এলাকার পল্লীর নাম বাদুরগাছা এ গ্রামে ৫ শতাধিক মানুষের বসবাস। বিস্তীর্ণ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের বাড়ী থেকে বেরিয়ে প্রধান সড়কে পৌছাতে একমাত্র ভরসা, বাঁশের চার (সাঁকো)। সেখানকার একমাত্র চলাচল অনুপযোগী রাস্তাটি মিশেছে খালেরে উপর সাঁকোয় গিয়ে।

ভরা শীত মৌসুমে খাল-বিলের পানি অনেক কমে গেছে, কিন্তু ডুমুরিয়া উপজেলার কুলটি গ্রাম সংলগ্ন পশ্চিম বাদুরগাছা গ্রামের ৫ শতাধিক মানুষকে এখনও বাড়ি থেকে রাস্তা নামক একমাত্র বাঁশের চার’র(সাঁকো) ওপর দিয়ে প্রধান রাস্তায় উঠতে হচ্ছে। জরুরী রোগী, গর্ভবতী নারী বা মৃত মানুষের লাশ বহনে শোলার তৈরি ভেলাই একমাত্র ভরসা। ভেলায় চড়েই পার হতে হয় খালটি।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের ৩ ওয়ার্ডের পশ্চিম বাদুরগাছা বিল এলাকায় ২৫ বছর আগে বাগেরহাট থেকে ছোবহান মোল্লা তার পরিবার নিয়ে ওই ফাকা বিলের মধ্যে প্রথম বসতি গড়ে তোলেন। তারপর ঘূর্ণিঝড় আইলা-সিডর বিদ্ধস্থ এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষরা এসে কম টাকায় বিলের মধ্যে জমি কিনে দিনে দিনে বসতি গড়ে তুলেছেন। শুরুতেই বিলের মধ্য থেকে কৈয়া বাজার সড়কে ওঠার জন্য ছোট কৈয়া (নদী) খাল’র পূর্ব পাশ দিয়ে এলাকাবাসীকে ১৫’শ ফুট (১৫ চেন) মাটির রাস্তা পার হতে হতো। দীর্ঘদিন ধরে মাটির রাস্তায় চলার পর ৪ বছর আগে তদানীন্তন ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুর’র উদ্যোগে খালের পাশে বাঁশ দিয়ে পাইলিং করে রাস্তায় ইট বসানো হয়। কিন্তু ওই ছোট কৈয়া খালের কারণে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে রাস্তাটি নেই বললেই চলে। তবুও নিরুপায় এলাকাবাসী তাদের প্রতিদিনের চলাচল বজায় রাখতে নিজেদের অর্থেই ওই ১৫’শ ফুট রাস্তার মধ্যে ছোট-বড় ৫টি বাঁশের চার(সাঁকো) স্থাপন করেছে।

পশ্চিম বাদুরগাছা মুসলমান পাড়া বায়তুল মামুর জামে মসজিদ নামক সড়কটিতে আমিনুল ইসলাম খান’র বাড়ির সামনে থেকে কৈয়া বাজার সড়ক পর্যন্ত ১৫’শ ফুট রাস্তাটিতে বাস্তবে ৫’শ ফুট পথে আংশিক মাটি আছে, বাকি ১ হাজার ফুটের অংশে কোনো রকমে বাঁশ দিয়ে চলাচল করছেন। যে চার দিয়ে যে কোনো মানুষের পক্ষে প্রথমবার চলাচল প্রায় অসম্ভব, আর সেই চার দিয়েই এলাকার বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ প্রতিনিয়ত চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। এলাকাবাসীর উদ্যোগে অনেক নেতা-জনপ্রতিনিধিকে এনে সরেজমিনে ওই রাস্তার দুরবস্থা দেখালেও আজ অবধি কোনো প্রতিকার মেলেনি। তাছাড়া ওই খালে মাছ চাষ করা দুই নেতাও রাস্তা সংস্কারে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।

এ প্রসঙ্গে ওই গ্রামের রেবেকা বেগম(৫০) বলেন, মেলা কষ্টে আছি, কষ্টের শেষ নেই। ভেলায় করে অসুস্থ মানুষকে ডাঙ্গায় তুলতে হয়। আমাদের গ্রামের একটা লোক অসুস্থ হলে তাকে বের করতে আধা ঘণ্টা লাগে।

আবদুস ছালাম খান বলেন, গত ২০ বছর ধরে ভুগছি। অনেক-মন্ত্রী-এমপির কাছে ধর্না দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। আ. ছবুর গাজী বলেন, একটা মানুষ মরে গেলেও বের করে আনার কোনো উপায় নেই।

সবুর হালদার বলেন, আমাদের গ্রাম থেকে প্রতিদিন ২’শতাধিক শিশু-ছেলে-মেয়ে স্কুল-কলেজে যাতায়াত করে। কিন্তু বর্ষার সময় তারা বের হতে পারে না।

কুলটি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী মুনিয়া খাতুন বলে, বর্ষার সময় আমারা স্কুলে যেতে পারি না। কারণ চারের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাগ নিয়ে পানিতে পড়তে হয়।

করিম হাওলাদার বলেন, কিছুদিন আগে মোমিন শেখকে কারেন্টে ধরে। কিন্তু তাকে ডাক্তারের কাছে নিতে নিতে সে মারা যায়।

ছবুরণ বিবি বলেন, কয়েকদিন আগে এক ডেলিভারি রোগীকে নিয়ে ভেলায় তুলে হাসপাতালে নেওয়ার সময় ওই ভেলার ওপরেই ডেলিভারি হয়ে গেছে।

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. শাহনাজ বেগম বলেন, আমি গত মঙ্গলবার ঘটনাস্থল দেখতে গিয়েছিলাম। এম.পি মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত রাস্তা তৈরির ব্যবস্থা নেবো।

খুলনা- ৫ আসনের সাংসদ তথা সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আগে ওই খাল সুকানোর ব্যবস্থা নিতে বলেছি। খাল সুকালে মাটি দিয়ে রাস্তা তৈরির জন্য আমার পক্ষ থেকে সর্ব উচ্চ বরাদ্দ দেবো।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)