ভারতে অবৈধ বাংলাদেশীদের তালিকা চেয়েছে সরকার

নিউজ ডেস্ক:

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভারতে যদি অবৈধভাবে কোন বাংলাদেশি ব্যক্তি থাকে, তাহলে ভারত সরকারের কাছে তারা তাদের নাম ঠিকানা জানতে চাইবেন। এরপর যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশি হলে তাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে।

এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, এরকম লোকজনের বাংলাদেশে চলে আসার কোন খবর তাদের কাছে নেই।

”যদি আমাদের বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকে এবং তারা যদি অবৈধভাবে ভারতে থাকেন, তাহলে আমরা চাইবো, যারা অবৈধ, ভারত তাদের নাম-ঠিকানার একটি তালিকা আমাদের দিক। আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখবো আমাদের নাগরিক কিনা।”

রবিবার ভারতের নাগরিকপঞ্জী নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ভারত যদি বাংলাদেশ সরকারকে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের নামের তালিকা দিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ সরকার তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে নেবে।

গত প্রায় একমাস ধরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা থেকে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে প্রায় পাঁচশো লোক ধরা পড়েছেন। এঁরা সকলেই ভারত থেকে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিক বলে ভারতের দাবি।

কিন্তু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই দাবিটিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি এঁরা সকলেই ভারতীয় নাগরিক। অর্থনৈতিক চাপে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন। তাঁদের সকলকেই ভারতে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ভারতে যদি কোনও বাংলাদেশি অবৈধভাবে বসবাস করেন, তাহলে তাদের নামের তালিকা পাঠানোর জন্য নয়াদিল্লির কাছে ইতিমধ্যেই অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা। তবে সমস্যা হল, ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের অধিকাংশরই বাংলাদেশি নাগরিকত্বের প্রমাণ নেই।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার কথায় স্পষ্ট ইঙ্গি দিয়েছেন, বাংলাদেশি হিসেবে ভারত প্রমাণ না দিতে পারলে অনুপ্রবেশকারীদের ফিরিয়ে নেবে না বাংলাদেশ।

অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলছেন, ওই তালিকাটি তারা এখনো চাননি। তবে পত্রপত্রিকায় বলা হচ্ছে যে, ভারত থেকে অনেক লোক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর করার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে বাতিল করা হয়। সফর বাতিলের কারণ হিসাবে জানানো হয়েছে, বিজয় দিবসের আগে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ততার কারণে মন্ত্রীরা এই সফর বাতিল করেছেন।

তবে বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ভারতের এনআরসি এবং পরে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পার্লামেন্টে উত্থাপনের সময় বাংলাদেশ সম্পর্কে বক্তব্য নিয়ে বাংলাদেশ অস্বস্তিতে পড়েছে এবং এই সফর বাতিলের মাধ্যমে তার একটা প্রকাশ দেখানো হয়েছে।

এরকম সময়ে সীমান্ত অতিক্রম করে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটলো।

কবে নাগাদ এই তালিকা চাওয়া হতে পারে, জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ”আমরা যখন-তখন চাইতে পারি। এটা এখনো যেহেতু আনুষ্ঠানিক কিছু না, যেহেতু এগুলো সব মিডিয়ায় বলা হচ্ছে। ভারত সরকার আমাদের বলেছে যে, তারা কাউকে জোর করে আমাদের দেশে পাঠাচ্ছে না। তাহলে আমরা কেমন করে চাইবো।”

ভারতে নাগরিক পঞ্জী প্রকাশ ও নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পর ভয়ে অনেক বাংলাদেশি সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে চলে আসছে বলে গণমাধ্যমে যে খবর বেরিয়েছে – তার আলোকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশিরা নিজেরাই যদি ভয়ে চলে আসে তাহলে জোর করে পাঠানোর দরকার আছে কী?

এ কে আবদুল মোমেন বলছেন, ”কেন আসবে? ভয়ে আসার কোন কারণ নেই। আমরা মনে করি না, আমাদের বিরাট সংখ্যক মানুষ ভারতে অবৈধভাবে আছে।”

ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত এলাকায় গিয়ে বিবিসির সংবাদদাতা দেখতে পেয়েছেন যে, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বহু মানুষ বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে।

গত এক মাসে শুধু ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর সীমান্ত থেকে তিন শতাধিক মানুষকে আটক করেছে বিজিবি। তবে স্থানীয় লোকজন বলছেন, যে সংখ্যায় মানুষ আটক হচ্ছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ প্রতিদিন বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে।

ভারতের সাথে সীমান্তে পাহারা বা নজরদারি বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে।

সূএ : বাংলাদেশ টুডে

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)