ক্যাসিনোতে খেলতে পরতে হতো ডায়পার!
ক্যাসিনো শব্দটি ইতালীয় ভাষা ‘ক্যাসা’ থেকে এসেছে। যার অর্থ ঘর। ক্যাসিনো বলতে ছোট ভিলা, গ্রীষ্মকালীন ঘর কিংবা সামাজিক ক্লাবকে বোঝানো হতো।
১৯ শতকের দিকে ক্যাসিনো বলতে এমনসব ভবনকে বোঝানো হতো যেখানে আনন্দদায়ক কাজকর্ম হতো। যেমন নগরের সামাজিক অনুষ্ঠান যেখানে নাচ, গান, জুয়া ও ক্রীড়ার ব্যবস্থা থাকত।
তবে বর্তমানে নানারকম অপকর্ম এবং কুসংস্কারের জন্যই ক্যাসিনো বেশি পরিচিত। প্রাচীন গ্রীক-রোমান থেকে নেপোলিয়নের ফ্রান্স, এমনকি বর্তমান বাংলাদেশ সব খানেই জুয়ার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
পৃথিবীর প্রথম ক্যাসিনো
এশিয়া উপমহাদেশেই পৃথিবীর প্রথম ক্যাসিনোটি স্থাপিত হয়। এমনকি সেটা সরকারিভাবেই ব্যবস্থাপনা করা হতো। প্রায় দুই হাজার বছর আগে থেকেই পৃথিবীতে জুয়া খেলার উত্থান হয়। তখনকার সময়ে উপমহাদেশের যেখানে-সেখানে জুয়া খেলা হতো অনিয়ন্ত্রিতভাবে। এই অনিয়ন্ত্রিত জুয়াকে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তখন ক্যাসিনো স্থাপন করা হয়। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, জুয়া থেকে সরকারি লভ্যাংশ ও শুল্ক নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই সরকারিভাবে ক্যাসিনো স্থাপন করা হয়। তবে এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ও স্থানের হদিস এখনো পাননি ইতিহাসবিদরা।
এখন আমেরিকা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত, নেপালসহ বর্তমান বিশ্বের বহু দেশেই টাকা উড়ানোর এই আসর চলছে বেপরোয়া গতিতে। এইসব ক্যাসিনোতে ধনকুবেররা আসেন মনোরঞ্জনের জন্য।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ১৬৩৮ সালে ইতালির বিখ্যাত ভেনিস শহরে সর্বপ্রথম রিডোট্ট নামে একটি ক্যাসিনো তৈরি করা হয়েছিল। তৎকালীন বিজ্ঞজনদের পরামর্শে তৈরি করা ওই ক্যাসিনোর উদ্দেশ্য ছিল কার্নিভাল সিজনে সচরাচর হওয়া জুয়া খেলাকে নিয়ন্ত্রণে আনা। এতে একটা সময় সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিলে ১৭৭৪ সালে ভেনিসের সেই ক্যাসিনো বন্ধ করে দেয়া হয়।
আবার অনেকের মতে, আমেরিকায় স্যালুন নামে প্রথম জুয়াবাড়ি নির্মিত হয়। চার প্রধান শহর নিউ অরেলিন্স, সেন্ট লুইস, শিকাগো এবং স্যানফ্রান্সিস্কোয় স্যালুন নির্মিত হয়। এসব স্যালুনে আগতরা মদ্যপান করত, আড্ডা দিত এবং প্রায়শই জুয়া খেলত। ১৯৩১ সালে নেভাদায় জুয়া খেলাকে বৈধ করা হলে সেখানে প্রথম বৈধ আমেরিকান ক্যাসিনো নির্মিত হয়। ১৯৭৬ সালে নিউ জার্সি আটলান্টিক শহরে জুয়া খেলা অনুমোদন করে। এটা বর্তমানে আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহৎ জুয়াড়ি শহর।
ক্যাসিনো থেকেই স্যান্ডউইচের আবিষ্কার
জন মন্টেগো ছিলেন ইংল্যান্ডের একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। স্যান্ডউইচ আবিষ্কারের সঙ্গে তার নামটি জড়িয়ে আছে বিশেষভাবে। ১৭৬৫ সালে তিনি ছিলেন ল্যাঙ্কাশায়ারের স্যান্ডউইচ শহরের চতুর্থ আর্ল। জানা যায়, তিনি এতটাই জুয়ায় আসক্ত ছিলেন যে, খাওয়ার সময় হলেও তিনি জুয়ার টেবিল ছেড়ে যেতে চাইতেন না। এ অবস্থায় মন্টেগো তার চাকরকে বললেন, তার জন্য এমন কোনো খাবার বানাতে যা তার জুয়া খেলায় কোনো বিঘ্ন ঘটাবে না। অর্থাৎ তিনি জুয়া খেলতে খেলতেই খেতে পারবেন। এমন একটি খাবার চাকরকে বানাতে বললেন। বিশ্বস্ত ওই চাকর অনেক ভাবনাচিন্তা করে শেষ পর্যন্ত দুটি টোস্টের মাঝখানে কুচি কুচি করে কাটা মাংস দিয়ে খাবার পরিবেশন করলেন। এই খাবার বেশ পছন্দ হলো মন্টেগোর। কারণ যখন এক হাতে তাস নিয়ে তিনি জুয়ায় মগ্ন ছিলেন, তখন অন্য হাতে তিনি খেতে পারছিলেন। এভাবেই তৈরি হয়ে গেল পৃথিবীর প্রথম স্যান্ডউইচ। পরে জুয়ার টেবিল ছাড়িয়ে এটি সাধারণ রেস্তোরা এবং ফাস্টফুডের দোকানে ঠাঁই করে নেয়। ধীরে ধীরে স্যান্ডউইচ হয়ে ওঠে সারা বিশ্বের জনপ্রিয় একটি খাবার।
আইনিভাবে নিজেকে নিষিদ্ধ করা
ব্যাপারটি খুব বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে, কেউ চাইলে ক্যাসিনোতে নিজেকে নিষিদ্ধ করতে পারেন। তবে এটি কেবল আমেরিকার কয়েকটি রাজ্যে প্রচলিত। ক্যাসিনোতে নিজেকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারটি তখনই আসে যখন কোনো ব্যক্তি জুয়ার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে আসক্ত হয়ে ওঠেন। এছাড়া বুঝতে পারেন যে, এটি তাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কিন্তু জুয়া খেলা এমন এক নেশা যে, সকাল বেলায় কেউ ঈশ্বরকে সাক্ষী রেখে এটি ছেড়ে দেয়ার প্রতিজ্ঞা করলেও সন্ধ্যাবেলায় আবারো গিয়ে জুয়ার টেবিলে বসে। এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচতেই কেবল ক্যাসিনোতে নিজেকে নিষিদ্ধ করে।
নিজেকে নিষিদ্ধ করা ব্যক্তি যদি কোনো ক্যাসিনোতে প্রবেশ করতে যায়, তবে কয়েকটি মার্কিন অঙ্গরাজ্যে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে এই নিষিদ্ধের ক্ষেত্রে একটি সময়সীমার ব্যাপার থাকে। কেউ এক বছরের জন্য নিজেকে নিষিদ্ধ করতে পারে। আবার কেউবা ৫ বছরের জন্য। আবার কেউ কেউ আছেন, যারা সারা জীবনের জন্য ক্যাসিনোতে প্রবেশে নিজের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করে। এই নিষেধাজ্ঞাও একটি জুয়া খেলার মতো ঘটনা। কারণ এমনটি একবার করা হলে, সারা জীবন কাঁদলেও তাকে কোনো ক্যাসিনো আর ঢুকতে দেয়া হবে না। তাই জুয়ার দানের মতো, নিজেকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটিও খুব ভেবে চিন্তে নিতে হয়।
প্রথম স্লট মেশিন
বর্তমানে ক্যাসিনো জগতের জন্য সবচেয়ে লাভজনক খেলা হলো পেনি স্লট মেশিন। এই মেশিনে কয়েন ঢুকিয়ে নিজের ভাগ্য যাচাই করেন জুয়াড়িরা। সব ক্যাসিনোতেই এই ধরনের স্লট মেশিন দেখা যায়। জানা যায়, ১৮৯৫ সালে পৃথিবীর প্রথম স্লট মেশিনটি আবিষ্কার করেন চার্লস ফে নামে এক ব্যক্তি। তিনি ছিলেন আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো অঙ্গরাজ্যের একজন মেকানিক। প্রথমে একটি কোম্পানিতে চাকরি করলেও পরে তিনি নিজেই একটি কোম্পানির মালিক হন।
‘লিবার্টি বেল’ নামে পৃথিবীর প্রথম স্লট মেশিনটি কোনো ক্যাসিনোতে ব্যবহৃত হয়নি। ফেই ওই মেশিনটি তার অটোশপে নিয়ে রেখেছিলেন। তার কাস্টমাররা যখন গাড়ি ঠিক করতে দিয়ে অপেক্ষা করতেন, তখন এই স্লটে খেলে তারা সময় কাটাতেন। ধীরে ধীরে এই স্লট মেশিনের খেলাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে। এই জনপ্রিয়তা দেখে ক্যাসিনো মালিকরা তাদের ক্যাসিনোতে এই ধরনের স্লট মেশিন বসানোর পরিকল্পনা করেন। যাতে কেউ যখন টেবিল জুয়ায় ভরসা পায়না কিংবা টেবিলে বসে জুয়া খেলার মতো পর্যাপ্ত অর্থ কাছে না থাকে, তখন তারা সামান্য কয়েন ব্যবহার করেই এই মেশিনে নিজের ভাগ্য যাচাই করতে পারেন। বর্তমান শতকের গোড়ার দিকেই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পায় স্লট মেশিন। এই মেশিন এখন যেকোনো ক্যাসিনোর অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ক্যাসিনোতে ফেড-এক্স
আন্তর্জাতিক এই কুরিয়ার সার্ভিসটি এখন সবার কাছেই পরিচিত। ফেড-এক্সের সদর দপ্তর আমেরিকার টেনেসিতে। বর্তমানে ২২০টি দেশে প্রতি বছর প্রায় ১.২ বিলিয়ন পার্সেল বিলি করে ফেড-এক্স। এর বার্ষিক আয় প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪ লাখ কর্মী রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু এই নামকরা প্রতিষ্ঠানটির আজকের অবস্থানে আসতে ক্যাসিনোর অবদান অসামান্য। একসময় হুমকির মুখে থাকা ফেড-এক্সকে বাঁচাতে এর প্রতিষ্ঠাতা ফ্রেডরিক স্মিথ জুয়া খেলে ছিলেন।
১৯৭১ সালে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ৪ মিলিয়ন এবং প্রায় ৮০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে ফেড-এক্স কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করেন স্মিথ। ৮টি প্লেন নিয়ে প্রাথমিকভাবে ৩৫টি দেশে এর কার্যক্রম বিস্তৃত ছিল। স্মিথ আশা করেছিলেন প্রতি মাসেই তারা উন্নতি করবেন। কিন্তু হলো তার বিপরীতটা। মাত্র দুই বছরের মধ্যে দেউলিয়া হওয়ার দশা হলো প্রতিষ্ঠানটির। কারণ প্লেনের জ্বালানি খরচ সে সময় হু হু করে বাড়ছিল। আর কুরিয়ার সার্ভিসের ধারণাটিও সে সময় এতটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। হতবিহ্বল স্মিথ দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে লাস ভেগাসে পাড়ি জমালেন। সর্বশেষ ৫ হাজার ডলার ছিল তার সম্বল।
লাস ভেগাস সে সময় ক্যাসিনোর রাজধানী হিসেবে পরিচিত ছিল। যদিও বর্তমানে লাস ভেগাসকে হটিয়ে চীনশাসিত ম্যাকাও এই স্থানটি দখল করে নিয়েছে। দুঃসময় কাটাতে স্মিথ ঢুকে পড়েছিলেন লাস ভেগাসের একটি ক্যাসিনোতে। সর্বশেষ ৫ হাজার ডলার দিয়ে তিনি জুয়া খেলা শুরু করেন। ভাগ্য এবার সুপ্রসন্ন হলো তার। এক সপ্তাহ পর তিনি ফিরে এলেন ফেড-এক্স’র সদর দপ্তরে। সে সময় তার পকেটে ছিল ২৭ হাজার ডলার। ৫ হাজার ডলার দিয়ে জুয়া খেলে তিনি এই টাকা আয় করেছিলেন। এই অর্থ কোম্পানিকে বাঁচানোর জন্য যথেষ্ট না হলেও স্মিথের মধ্যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে এসেছিল। পুনরুদ্যমে শুরু হয় ফেড-এক্স’র পার্সেল পৌঁছে দেয়ার কাজ। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ফেড-এক্সকে। ১৯৭৬ সালেই কোম্পানিটি ৩০ লাখ ডলার আয় করে।
জুয়ার লিখিত অর্থশাস্ত্র
তবে কাউতিলিয়া নামে একজন প্রাচীন ভারতীয় অর্থশাস্ত্রবিদ এ বিষয়ে অনেক কিছু লিখে গেছেন। তার লেখায় উঠে এসেছে জুয়ার স্থান হিসেবে ক্যাসিনো স্থাপনের কিছু কারণ। পাশাপাশি ভারতীয় উপমহাদেশে ক্যাসিনো স্থাপনের কয়েকটি চিত্র লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন তার অর্থশাস্ত্র পুস্তকে। এগুলোর মধ্যে যেমন আছে জুয়াকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসার কথা আবার আছে জুয়া খেলায় সাম্যতা নিশ্চিত করার কথাও। এই খেলা থেকে সরকারি শুল্ক প্রাপ্তি নিশ্চিত করারও বেশ কিছু চিত্র উঠে এসেছে তার লেখায়। সে সময়ের ক্যাসিনোগুলোয় সরকার জুয়ার নানা উপাদানের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। তখন জুয়া খেলে নিঃস্ব হওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটত। বিষয়টা তখনো সরকারের নজর এড়ায়নি, তাই জুয়া খেলে যেন কেউ নিঃস্ব বা সর্বস্বান্ত না হয় সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা হতো। কালের ধারাবাহিকতায় সে সময় থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় শুরু হওয়া জুয়া আজকের পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে।
নেভাদারের জেল ক্যাসিনো
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যে জুয়া খেলা দারুণ জনপ্রিয়। এখানকার কেন্দ্রীয় জেলখানায় এক সময় কুখ্যাত সব বন্দিরা থাকতেন। ১৯৩১ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত টানা ৩৬ বছর এই বন্দিদের জন্য একটি ক্যাসিনো ছিল জেলখানার ভেতরেই। ১৯৩১ সালে নেভাদা অঙ্গরাজ্যে জুয়া খেলার বৈধতা দেয়া হলে, জেলখানার ভেতরেও ক্যাসিনো চালু হয়। অপরাধীদের ক্যাসিনো হলেও এখানে চিটিং একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল। একসময় বন্দিদের সঙ্গে জেলের নিরাপত্তাকর্মীরাও জুয়া খেলায় মেতে উঠত। মূলত ক্রেপস, ব্ল্যাকজেক, পোকার এবং বিভিন্ন খেলার ওপর বাজি ধরাই ছিল এই ক্যাসিনোর প্রধান জুয়া খেলা। পরে নেভাদার গেমিং কন্ট্রোল বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হলে জেলখানার ক্যাসিনোটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
প্রথম ক্যাসিনো লাইসেন্স পান এক নারী
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, প্রথম বৈধ ক্যাসিনোটির লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল আমেরিকার লাস ভেগাসের এক নারীকে। ১৯৩১ সালের ২০ মার্চ ইস্যু করা ওই লাইসেন্সের মালকিন ছিলেন মামি স্টকার। লাস ভেগাসের শহরতলিতে অবস্থিত মামির ক্যাসিনোর নাম ছিল ‘দ্য নর্দার্ন ক্লাব’। ১৯০০ সালের শুরুর দশকে এই ক্যাসিনোটি লাস ভেগাস কফি হাউস নামে প্রতিষ্ঠার পর ১৯২০ সালে এর নতুন নামকরণ করা হয়। সে সময় অবৈধ হলেও মামি স্টকার তার ক্লাবে আসা ব্যক্তিদের মদ্যপান এবং জুয়া খেলার প্রস্তাব দিতেন।
মামি স্টকার সম্পর্কে জানা যায়, তিনি একজন ভালো গৃহিণী এবং মা ছিলেন। এছাড়াও তিনি স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত লিখতেন। ১৯৪৫ সালে নর্দার্ন ক্লাব ক্যাসিনোর তৎকালীন মালিক উইলবার ক্লার্কনাম এর বদল করে ‘মন্টে কার্লো ক্লাব’ রাখেন। ১৯৭০-এর দশকে এই ক্যাসিনোর নামকরণ হয় ‘কয়েন ক্যাসিনো’। বর্তমানে ‘লা বেইও’ ক্যাসিনো নামে এটি এখনো চালু আছে।
‘জুয়ার রাজধানী’ তকমা হারিয়েছে লাস ভেগাস
বেশ কয়েক দশক ধরেই জুয়ার রাজধানী হিসেবে লাস ভেগাস ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় উত্তর। তবে ধীরে ধীরে ক্যাসিনো সংস্কৃতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালু হতে শুরু করে। বর্তমানে জুয়ার রাজধানী হিসেবে লাস ভেগাসের নামটি চলে গেছে এখন দুই নম্বরে। এই তালিকায় এখন শীর্ষে অবস্থান করছে চীন শাসিত ম্যাকাও। ২০১২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সে বছর লাস ভেগাসের চেয়ে অন্তত পাঁচগুণ বেশি আয় করে ম্যাকাওয়ের ক্যাসিনোগুলো। বর্তমানে ম্যাকাওকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জুয়ার শহর হিসেবে ডাকা হয়। চীনে জুয়া খেলা বৈধ না হলেও ম্যাকাওয়ে এটি বৈধ।
ক্যাসিনো বাজার
বিশ্বব্যাপী ক্যাসিনো বাজার থেকে ১ বিলিয়ন ইউএস ডলারের ও বেশি আয় করা হয়। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১১ সালে বিশ্বের সব থেকে বড় ক্যাসিনো পরিচালনা কোম্পানিগুলোর আয় প্রায় US$৫৫ বিলিয়ন। সোসাইদেদে তুরিজমো এ দিভারসোয়েস দে ম্যাক্যাও এই খাতে সব থেকে বেশি এগিয়ে থাকা কোম্পানি। তারা ২০১১ সালে $৯.৭ বিলিয়ন আয় করে। এর পরে ছিল লাস ভেগাস স্যান্ডসের আয় $৭.৪ বিলিয়ন। তৃতীয় বৃহত্তম ক্যাসিনো পরিচালনা কোম্পানি সিজারস এন্টারটেইনমেন্ট কর্পোরেশন যাদের আয় US$৬.২ বিলিয়ন।
মন্টে কার্লো ক্যাসিনোর নিষেধাজ্ঞা
জুয়াড়িদের স্বর্গরাজ্য বলা হয় মোনাকো’তে অবস্থিত মন্টে কার্লো ক্যাসিনোকে। এই ক্যাসিনো নিয়ে নির্মিত হয়েছে একাধিক সিনেমা, রচিত হয়েছে গানও। তাই এই ক্যাসিনো নিয়ে মোনাকোর মানুষদের গৌরবের যেন শেষ নেই। তবে, এই ক্যাসিনো তাদের জন্য একেবারেই নিষিদ্ধ। ১৮০০ শতকের মাঝামাঝিতে দেশটির তৎকালীন প্রিন্সেস ক্যারোলিন নাগরিকদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তবে জানেন কি? মোনাকোর জুয়াড়িরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গিয়ে জুয়া খেলেন, কিন্তু কিংবদন্তিতুল্য নিজেদের মন্টে কার্লো ক্যাসিনো’তে তাদের প্রবেশাধিকারই নেই। দেশটিতে ঘুরতে যাওয়া বিদেশিরাই এখানে জুয়া খেলেন।
মেঝেতে জুয়াড়িদের মূত্রত্যাগ
জুয়া খেলার সময় জুয়াড়িরা এতটাই মগ্ন থাকেন যে, তারা সাধারণ নাওয়া-খাওয়া ভুলে যান। জুয়ার আসক্তি এমনই তীব্র যে, কেউ কেউ ক্যাসিনোর মেঝেতেই মূত্রত্যাগ করে ফেলেন। আবার এমনো অনেকে আছেন জুয়া খেলতে বসে বয়স্কদের ডায়াপারও ব্যবহার করেন, যেন মূত্র কিংবা মলত্যাগ করলে তা থেকে দুর্গন্ধ না ছড়ায় এবং অন্যদের বিরক্তির কারণ না হয়। ২০০৭ সালে ইন্ডিয়ান এক জুয়াড়ি একটি অভিযোগ দায়ের করেন এ ব্যাপারে। তিনি একটি স্লট মেশিনে কয়েন দিয়ে খেলতে গিয়ে এর সামনের আসনটিতে বসে বোকা বনে যান। কারণ তিনি যে চেয়ারটিতে বসেছিলেন, সেখানে তার আগের খেলোয়াড় বেশ কয়েক দফা মূত্রত্যাগ করেছিলেন। ২০১৫ সালে আমেরিকার নিউজার্সিতে এক জুয়াড়ি স্লট মেশিনের যে ছিদ্র দিয়ে কয়েন ঢুকান, সেই ছিদ্রেই মূত্রত্যাগ করে মেশিন নষ্ট করে ফেলেছিলেন।
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ক্যাসিনো
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ক্যাসিনোটির কোনো ঠিকানা নেই। কারণ এটি একটি চলমান ট্যাক্সি। লন্ডনের গ্রসভেনর ক্যাসিনোর একটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ এই ট্যাক্সি ক্যাসিনো। ট্যাক্সির পেছনের অংশে এই ক্যাসিনোটি সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে আছে ছোট্ট একটি জুয়ার টেবিল, আছে একটি বারও, আর আছে একটি টেলিভিশন যেখানে বিভিন্ন খেলা চালু থাকে এবং এসব খেলার ওপর বাজি ধরেন জুয়াড়িরা।
যে ক্যাসিনোতে কখনো জুয়া খেলা হয়নি
সব ক্যাসিনোই কিন্তু জুয়ার খেলার কাজে ব্যবহার করা হয় না। ক্যালিফোর্নিয়ার শান্তা কাতালিনা দ্বীপের কাতালিনা ক্যাসিনোতে কখনো জুয়া খেলা হয়নি। কারণ যখন এটি নির্মাণ করা হয় সে সময়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় জুয়া খেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কোপেনহেগেন ক্যাসিনো একটি থিয়েটার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৮৪৮ সালের আন্দোলনের সময় এখনকার গণজমায়েতের কারণে এটি পরিচিত। এই আন্দোলন ডেনমার্ককে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিণত করে। ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত এটা ডেনিশ থিয়েটার নামে সুপরিচিত ছিল। ফিনল্যান্ডের হাংকো ক্যাসিনোতেও কখনো জুয়া খেলা হয়নি। ১৯ শতকের শেষের দিকে এটিকে স্প্যা রিজোর্ট হিসেবে ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে এটি রেস্তোরা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জার্মান এবং স্প্যানিশ ভাষায় ক্যাসিনো বা কাসিনো দ্বারা অফিসার মেস বোঝানো হয়।
বিশ্বযুদ্ধ ফেরত সৈনিকের ক্যাসিনোভাগ্য
বেশির ভাগ মানুষই মনে করেন বেশি টাকা আয় করা যায় জুয়ার টেবিলগুলোতে। যেখানে তাস দিয়ে জুয়া খেলা হয়। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমতার এক নজির গড়েছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ফেরত এক সৈনিক। লাস ভেগাসের এই যোদ্ধার নাম ইলমার শারমেন। ১৯৮৯ সালে তিনি একটি স্লট মেশিন থেকে প্রায় ৪.৬ মিলিয়ন ডলার জিতে নেন। তার এই জয়যাত্রা এখানেই থামে থাকেনি। তার জুয়া ভাগ্য এতটাই সুপ্রসন্ন ছিল যে ২০০৫ সালে তিনি ২১.১ মিলিয়ন ডলারের একটি জ্যাকপট লটারিও জিতেছিলেন।