৮ ডিসেম্বর ১৯৭১: স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন হয়
একাত্তরের ৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয় মৌলবীবাজার, বরিশাল, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন এলাকা। মুক্ত জনপদবাসী বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে। অন্যদিকে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এদিন এক বেতার ভাষণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে ভারত ও ভুটানের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর কাছে আবেদন জানান।
এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনী বিভিন্ন স্থানে সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এই সুযোগে মিত্রবাহিনীর কর্মকর্তারা তিনটি ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুরো পাকিস্তানী বাহিনীকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরাকে তিনটি কলাম নিয়ে ঢাকার দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার জন্য বলা হয় এবং একটি ব্রিগেডকে দ্রুত হালুয়াঘাটের দিক থেকে ময়মনসিংহের দিকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
ভারতীয় সেনাবহিনীর প্রধান দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে এই আশ্বাস দেন যে, আত্মসমর্পণ করলে পাকিস্তানী বাহিনীর প্রতি জেনেভা কনভেনশনের রীতি অনুযায়ী সম্মানজনক ব্যবহার করা হবে। জেনারেল মানেকশ’র এই আহ্বান আকাশবাণী বেতার থেকে নানা ভাষায় বারবার প্রচার করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়তে থাকে। পূর্ব সীমান্ত থেকে জেনারেল জগজিৎ সিংয়ের প্রায় সবকটা বাহিনী দ্রুতগতিতে ঢকার দিকে এগিয়ে আসছিল।
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়তে থাকে। প্রতি ক্ষেত্রে হানাদার বাহিনীকে একের পর এক পরাজিত করতে থাকে মুক্তিবাহিনী। হানাদার বাহিনীর অবস্থানের ওপর মুক্তিসেনারা আর্টিলারি আক্রমণ চালিয়ে শেষ রাতের দিকে তাদের আত্মসমর্পণ করাতে সক্ষম হয়। রাতব্যাপী যুদ্ধে ২৬ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। হানাদার বাহিনীর কতিপয় সেনা বিমান বন্দরের ঘাঁটি ত্যাগ করে শেষ রাতে বরুড়ার দিকে এবং সেনানিবাসে ফিরে যায়। বিমান বন্দরের ঘাঁটিতে ধরা পড়া কতিপয় পাক সেনা আত্মসমর্পণ করে।
অপ্রতিরোধ্য মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রযাত্রা, অন্যদিকে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এদিন এক বেতার ভাষণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে ভারত ও ভুটানের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর কাছে আবেদন জানান।
কুমিল্লার আপামর জনগণ মুক্তিযোদ্ধাদের ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে মুক্তির উল্লাসে বরণ করে নেয়। বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা মিত্রবাহিনী জনতার উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। তৎকালীন পূর্বাঞ্চলের প্রশাসনিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান রেহুম জহুর আহমেদ চৌধুরী, দলীয় পতাকা এবং কুমিল্লার প্রথম প্রশাসক অ্যাডভোকেট আহমদ আলী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। কুষ্টিয়ার মিরপুর থানায় কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান ১৭০ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা গান স্যালুটের মাধ্যমে উত্তোলন করেন।