বিশ্বের রহস্যঘেরা ১২টি ভৌতিক হোটেল

রহস্যময় পৃথিবীতে কতই না রহস্য লুকিয়ে আছে। সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ রহস্যপ্রিয়। তবে রহস্যের দিকে আগ্রহ থাকলেও রহস্য সমাধানের আগ্রহ নেই বললেই চলে।

তারপরও রহস্যের সন্ধান পেলেই সেখানে ছুটে যায় মানুষ, তা যেভাবেই হোক না কেন! আর অমীমাংসিত রহস্যময় ঘটনা গুলোর মধ্যে ভূত সব থেকে বেশি আকর্ষণ করে সবাইকে। ভয় পেলেও ভুতের ছবিগুলো দেখতে পছন্দ করেন না এমন লোক কমই আছেন। তবে ভুতের ছবিগুলোর বানোয়াট ঘটনা দেখেই আমাদের অনেকের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। আর যদি বলি ছবিতে দেখা ঘটনাগুলো সত্যিই বাস্তবে ঘটে। বাস্তব ঘটনা থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে এই ছবিগুলোর কাহিনী চিত্রায়ন করা হয়। তাহলে কি ভয়টা বাড়িয়ে দেয়া হবে?

এমনই ভৌতিক কিছু হোটেলের কথাই জানাবো আজ। যেগুলো তাদের আধিভৌতিক ঘটনাগুলোর জন্যই সাড়া বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। যারা রহস্য বা আধিভৌতিক ব্যাপারগুলো পছন্দ করেন। তারা চাইলে হোটেলগুলোতে এক রাত থেকেও আসতে পারেন।

ব্যালিগ্যালি ক্যাসেল হোটেল, লার্ন, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড  

শুরুতেই যে হোটেলটির কথা জানাবো সেটি ১৬২৫ সালে নির্মিত হয় লার্ন, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে। অন্যসব সাধারণ হোটেলগুলোর মতোই ছিল ব্যালিগ্যালি ক্যাসেল হোটেলটি। খুব বেশি নামডাক না থাকলেও, এর ভয়ংকর একটি অতীত আছে। এই জায়গাটিতে হোটেল তৈরির আগে ‘শ’ পরিবার  থাকতো। পরিবারটির বড় ছেলে জেমস ‘শ’-এর স্ত্রী ইসোবেলের কোনো পুত্র সন্তান হচ্ছিলো না। এই অপরাধে তাকে এই বাড়ির একটি কক্ষে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। এমনকি তাকে খাবার-পানি কোনকিছুই দেয়া হত না।

কিছুদিন পর ইসোবেল জানালার কাঁচ ভেঙ্গে সেখান থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করে। এরপর থেকে ‘শ’ পরিবার নানা কারণে বেশ আর্থিক দুরাবস্থায় পড়লে তারা বাড়িটি বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে এই জমিতেই ব্যালিগ্যালি ক্যাসেল হোটেল নির্মিত হয়। হোটেল চালুর পর থেকে এখানে ইসোবেলের অতৃপ্ত আত্মার অস্তিত্ব ধীরে ধীরে  প্রমাণিত হতে থাকে।

হোটেলের অনেক অতিথিরা করিডরে একজন নারীকে দেখতে পান। অদ্ভুত অদ্ভুত সময়ে তাদের  দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ পাওয়া যায়। ছোট বাচ্চা মেয়েদের হাসির আওয়াজও শোনা যায় হোটেলটিতে।

ক্যাসেল স্টুয়ার্ট, স্কটল্যান্ড

তৎকালীন স্কটল্যান্ডের রানীর দূর সম্পর্কের ভাই জেমস স্টুয়ার্ট। তিনিই ১৬২৫ সালে এই ক্যাসেলটি তৈরি করেছিলেন। ক্যাসেলটি তৈরির পর থেকেই এখানে নানান রকমের ভৌতিক ঘটনা ঘটতে থাকে। একটা সময় ক্যাসালটিতে কেউ আর থাকতে আসত না। ফলে এর মালিক অনেক বড় লোকসানে পড়ে যায়। এক পর্যায়ে সেটা বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায় মানুষের জন্য। তবে অনেকেই এই ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে চায়নি। আর তাই স্টুয়ার্ট একপর্যায়ে ঘোষণা দেন যে, কেউ যদি এক রাত ক্যাসেলে থেকে প্রমাণ করতে পারে যে সেখানে ভুত নেই, তাকে পুরস্কৃত করা হবে। এই প্রস্তাবে এলাকার ধর্ম যাজক পেট্টি চার্চ সেখানে রাত্রিযাপন করার প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন। পরদিন সকালে ক্যাসেলটিতে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। মৃতদেহের চেহারাটি ছিলো প্রচন্ড ভয়ার্ত!

কুইন অ্যানি হোটেল, স্যান ফ্রেনসিস্কো, ক্যালিফোর্নিয়া

অত্যন্ত সুন্দর এই হোটেলটিতে অনেকেই একজন নারীর আত্মাকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন। ধারনা করা হয়, এই জমিতে আগে যে স্কুলটি ছিল তার প্রিন্সিপাল ম্যারি লেক-এর আত্মা এটি। হোটেলে আগতদের কাপড়চোপড় প্রায়ই ঠিকঠাক জায়গায় খুঁজে পাওয়া যায় না। আলমারির দরজা এমনিতেই   খুলে যায়। বিভিন্ন বস্তু শূন্যে ভাসতেও দেখা যায়। মাটিতে পড়ে থাকা বস্তু নিজেই উপরে উঠতে থাকে। তবে এ ধরণের কাণ্ড সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে রুম নাম্বার ৪০১। যেখানে আগে ম্যারি লেকের অফিসরুম ছিল।

কোম্ব অ্যাবি হোটেল, ইংল্যান্ড

১৩৪৫ সালে এই হোটেলে খুন হয়েছিলেন জিওফ্রে নামের এক ব্যক্তি। আশ্চর্য ব্যাপার যে, তার খুনিকে কখনই খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে জিওফ্রে এর আত্মা হোটেলটি ছেড়ে যায়নি। হোটেলে থাকতে আসা অনেকেই মাঝ রাতে হোটেলের রান্নাঘর থেকে হাড়িপাতিল ছুড়ে ফেলার শব্দ পান। শব্দ শুনে মনে হয় কেউ যেন তীব্র আক্রোশে জিনিসপত্র ছুড়ছে এদিক ওদিকে।

ফেয়ারমন্ট ব্যানফ স্প্রিংস হোটেল, আলবার্টা, কানাডা   

এই হোটেলটিতে একজন বেলম্যান ও একজন নতুন বধূকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। বেলম্যানটিকে নয় তলায় দেখা যায়। অতিথিদের জিনিসপত্র রুমে পৌঁছে দিয়েই সে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। ধারনা করা হয়, এই আত্মাটি হোটেলের অনেক দিনের পুরনো এক কর্মচারীর। যিনি ১৯৭৫ সালে মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু মারা যাবার পরও সে হোটেলে আগত অতিথিদের সহায়তায় ব্যস্ত। মৃত্যুর পরও কাজের জায়গা ছেড়ে যেতে পারেন নি। আর যে বধূকে এই হোটেলে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়, তিনি বিয়ের দিন এই হোটেলটিতে মারা যাওয়া এক নববধূ। হঠাৎ হঠাৎ হোটেলটিতে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইতে থাকে। লবির একটি বিশাল ঝাড়বাতি প্রবল বেগে দুলতে থাকে। অনেকেই এসময়টাতে এই নববধূকে বিয়ের পোশাকে দেখতে পান।

টফটাহম হেরগার্ড, স্ম্যাল্যান্ড, সুইডেন 

চোখ জুড়ানো অসাধারণ সুন্দর পরিবেশে ঘিরে থাকে এই হোটেলটি। এটাকে দেখে এখানে রাত্রিযাপন করা যতটা শান্তির মনে হয়, আসলে ততটা শান্তির নয়। হোটেলের দরজা জানালা আচমকা কোনো কারণ ছাড়াই বিকট আওয়াজ করে বন্ধ হয়ে যায় আবার খুলে যায়। অনেক উদ্ভট অবর্ণনীয় শব্দ রাতের পাশাপাশি দিনে দুপুরেও শুনতে পাওয়া যায়। প্রচলিত রয়েছে, সেখানকার এক কৃষকের ছেলের সঙ্গে তৎকালীন রাজার মেয়ের সম্পর্ক ছিল। রাজা এই কথা জানতে পেরে জোর করে তার মেয়েকে অন্য একজনের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয়। সেই দুঃখে চাষিপুত্র আত্মহত্যা করে। এরপর তার আত্মা কখনই এ জায়গাটি ত্যাগ করেনি। পরবর্তিতে সেখানে হোটেল নির্মান করা হলেও কেউ থাকতে পারে না।

ল্যাংহ্যাম হোটেল, লন্ডন ,ইংল্যান্ড  

লন্ডন শহরে ১৮৬৫ তে চালু হয় ল্যাংহ্যাম হোটেলটি। এখানে অনেক নামীদামী ব্যাক্তি অতিথি হিসেবে থেকেছেন। তবে এই হোটেলে থাকতে আসা প্রায় অতিথিই অভিযোগ করেছেন যে, তারা একজন ভিক্টোরিয়ান যুগের পোশাক পরা রুপালি চুলের এক ব্যক্তিকে দেখতে পান। অক্টোবর মাসে সবচেয়ে বেশি এ ঘটনাটি ঘটে। উল্লেখ্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এখানে একজন জার্মান রাজপুত্র ৪ তলার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে। খুব সকালবেলায় হোটেল রুমের দরজার সামনে সেই যুবককে ঘনঘন পায়চারী করতে দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় রুম ৩৩৩ এর সামনে। আর তাই রুম নাম্বার ৩৩৩ কে শহরের সবচেয়ে ভূতুড়ে জায়গা বলা হয়।

বিসবি গ্র্যান্ড হোটেল, বিসবি, এরিজোনা  

এই হোটেলটি ১০০ বছরের বেশি দিন ধরে চলছে। এই হোটেলটিতে একজন পুরুষ ও একজন নারীর আত্মার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। পুরুষ আত্মাটিকে সাধারণত নীচতলায় দেখা যায় এবং নারী আত্মাটিকে অনেকদিন পরপর ভিক্টোরিয়ান স্টাইলে পোশাক পরিহিত অবস্থায় হাতে একটি ট্রে নিয়ে রুম নাম্বার ২ ও ৩ এর মাঝে শূন্যে ভাসতে দেখা যায়। প্রায়ই হোটেলের শান্ত নীরব হলরুমের পিয়ানোটি একা একা বেজে ওঠে।

হোটেল রুসভেল্ট, হলিউড, ক্যালিফোর্নিয়া

এই হোটেলটি অনেক নামীদামী হোটেলগুলোর মধ্যে একটি। এখানে বিভিন্ন সময় অনেক নামীদামী ব্যক্তিত্ব থেকেছেন। তবে এই হোটেলটিতে মানুষের পাশাপাশি বিশ্রামহীন আত্মারাও রয়েছে। যারা প্রতিনিয়ত হোটেলের অতিথিদের চমকে দিচ্ছেন। অনেক হোটেল স্টাফ এবং গেস্ট একজন ব্লন্ড নারীর প্রতিচ্ছবি আয়নাতে দেখতে পান বলে অভিযোগ করেছেন। হোটেলের পুলসাইড এরিয়াতেও সেই নারীকে প্রায়ই দেখা যায়। প্রায়ই হোটেলের টেলিফোন অপারেটরদের কাছে রহস্যময় ফোনকল আসে। কিছু কিছু জায়গা হঠাৎ করে হিমশীতল হয়ে যায়। গেস্ট না থাকা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে ৯২৮ নম্বর রুম থেকে একধরনের বাদ্যযন্ত্রের  আওয়াজ পাওয়া যায়। যেটি কিনা প্রয়াত অভিনেতা মন্টগোমেরির সেই বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ। যা তিনি এই হোটেল এ থাকাকালীন বাজিয়েছিলেন।

দ্যা হাওথ্রন হোটেল, আমেরিকা

আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসে অবস্থিত হোটেল দ্যা হাওথ্রনে অনেক বিখ্যাত মানুষ বিভিন্ন সময় থেকেছেন। এমনকি আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও তার স্ত্রীও থেকে গিয়েছেন এখানে। তবে এই  হোটেলেরও আছে ভৌতিক ঘটনা ঘটার বদনাম। চোখের সামনে থেকে চাবি গায়েব হয়ে যাওয়া, সুইচ অন ছাড়াই লাইট অন এবং অফ হয়ে যাওয়া। আবার হঠাৎ পানির কল চালু হয়ে যাওয়া সহ আরো নানান রকম সমস্যা হয় এই হোটেলের অনেক গুলো রুমেই। হোটেলের ৬১২ নম্বর রুমের ঠিক সামনে অনেকেই একটি নারীর অবয়ব দেখতে পেয়েছেন অনেকবারই। পিছু নিতে গেলেই বার বার মিলিয়ে যায় সেটি।

হোটেল বার্চিয়ান্তি, ইতালি

ইতালির ফ্লোরেন্সে অবস্থিত এই হোটেলটিকে ভূতের হোটেলই বলা চলে। কারণ এই হোটেলে যারাই অবস্থান করেছে তাদের অনেকেই নানান রকম ভৌতিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে। ছোট শিশুর ছায়া, নারীর চেয়ারে বসে উল বোনার দৃশ্য, ভোর বেলা ভৌতিক ক্লিনার সহ আরো নানা রকমের অদ্ভুত অশরীরী দেখতে পেয়েছেন অনেকেই। এমনকি অনেকে হোটেলের যে রুমটিতে মুসোলিনি থেকেছিলেন সেখানে তার আত্মাও দেখতে পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

রাসেল হোটেল, অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অবস্থিত এই হোটেলের ৮ নম্বর রুমটিকে সবাই এড়িয়ে চলেন। আর তার কারণ হলো এখানেও ভৌতিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন অনেকেই। বলা হয়ে থাকে এই রুমে আটকে আছে এক নাবিকের আত্মা। হোটেলের কর্মচারীরা গভীর রাতে এই রুম থেকে জোরে জোরে পা ফেলে হাটার শব্দও পেয়ে থাকেন নিয়মিত। যদিও রুমটিতে কখনই কেউ থাকে না!

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)