পাটকেলঘাটার শীত পোশাকের ফুটপাত গুলোয় চিরচেনা হাঁকডাক
কয়েক দিনের শীত ও কিছুটা কুয়াশা পড়তে শুরু করাই প্রতিনিয়ত মানুষ ভিড় জমাচ্ছে শীতের গরম কাপড় কেনার জন্য ফুটপাতের দোকান গুলোতে। বড় দোকান গুলোতে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্তরা ভিড় জমাচ্ছে। নিন্ম আয়ের মানুষেরা থানার বিভিন্ন রাস্তার পাশে ফুটপাত ও হকার্স দোকানীর কাছে ভিড় জমাচ্ছে। বিশেষভাবে লক্ষণীয় মৌসুমভিত্তিক দোকানগুলোতে শীতের কাপড় কেনা-বেচা পুরোদমে চলছে।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার সব থেকে বড় বাজার পাটকেলঘাটা এখানে প্রায় ১৫-২০টি স্থানে ফুটপাতে পুরাতন শীতবস্ত্র বিক্রয় হয়ে থাকে। এছাড়াও থানার আশেপাশের বিভিন্ন হাটবাজার গুলোতে যেমন, মেলেকবাড়ি, ফুলবাড়ি, সরুলিয়া, দলুয়া, কুমিরা ও পোড়ার বাজার সহ বিভিন্ন স্থানে মৌসুমভিত্তিক শীতবস্ত্র বিক্রেতারা শীতের গরম কাপড় বিক্রয় করে থাকে। এছাড়াও বড় বড় দোকানে তো আছেই। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০-১২টা পর্যন্ত এই দোকান গুলোতে চলে বেচা-কেনা। প্রতিবছর শীত মৌসুম আসলেই তাদের বিক্রয়ের অবস্থা বেশি ভাল হয়।
দোকান গুলোতে নিম্মবিত্ত থেকে শুরু করে প্রায় মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্রেতারা প্রতিনিয়ত ভিড় করেন। কারণ মৌসুমের শুরুতেই শীত পড়তে শুরু করাই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় হচ্ছে এই দোকান গুলোতে। গত কয়েক দিন ধরে শীত পড়তে থাকায় প্রচন্ড শীত থেকে মানুষ একটু গরম পাওয়ার আশায় আগে ভাগেই ভিড় জমাচ্ছে বড় দোকান থেকে শুরু করে ফুটপাতের দোকান পর্যন্ত। ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণে হরেক রকম বাহারি পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানীরা। শুরুতেই শীত বস্ত্রের চাহিদা বাড়ায় তারা ঢাকা ও চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন মার্কেট থেকে দেশী-বিদেশী হরেক ডিজাইনের শীতের পোশাকের গাঁইট নিয়ে আসছে বলে জানা যায়। এখানের দোকান গুলোতে পুরনো সব রকমের পোশাকের কদর বেশী। পুরনো এসব পোশাক যথেষ্ট সস্তা এবং বেশ শীত নিবারণ-দায়ক বলে অনেকের ধারণা।
সর্বনিম্ন ৩০ থেকে ৪শ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের শীতের কাপড় পাওয়া যায়। গাঁইটে যেসব ভাল জ্যাকেট, সোয়েটার, কোট, বাচ্চাদের কাপড় পাওয়া যায় সেগুলোর দাম একটু তুলনামূলক বেশি হয়। দোকানীরা পোশাকের গাঁইট ক্রয় করেন ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। মুখবন্ধ এসব গাঁইট কেনার আগে খুলে দেখার নিয়ম নেই। বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতি গাঁইট কিনে আনা হয় ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে। কিনে আনার পরে মুখ খুলে নির্ধারণ করা হয় লাভ-লোকসানের হিসাব। পোশাকগুলো গাঁইট থেকে বের করার পর দাম হাঁকেন বিক্রেতারা। কোন পোশাকের মূল্য নির্দিষ্ট করা থাকে না। গাঁইট থেকে বেরিয়ে আসা বিদেশী পুরনো পোশাকটি ক্রেতার খুব পছন্দ হয়ে গেলে তা বুঝতে পারেন চতুর দোকানীরা। সে অনুযায়ী দাম হাঁকা হয়। ক্রেতাদের কাবু করতে পারলে টাকার পরিমাণ বেড়ে যায়।
এসব দোকানের বিক্রেতারা পোশাকের দাম নির্ধারণ করেন। তবে দর কষাকষি ছাড়া পছন্দের পোশাক ক্রেতাদের কেনা সম্ভব হয় না। সব পোশাকের দাম একটু বেশি করে চাওয়া হয়। যাতে বিক্রেতারা তাদের লাভ পুষিয়ে নিতে পারেন। মীর শাহা আলম, আব্দুর রাজ্জাক ও শামছুর রহমান সহ বাজারের ফুটপাতের কয়েক জন শীতবস্ত্র বিক্রেতা জানায়, সব বয়সী মানুষের পোশাক বিক্রয় হচ্ছে এসব দোকান গুলোতে। গারর্মেন্টস আইটেমের চেয়ে শীতবস্ত্র বিক্রি করে বেশি লাভ হয়। ভাগ্যের উপর নির্ভর করে আমাদের লাভ-লোকসান। যদি ভাগ্যে ছেঁড়া ফুটো পোশাক পড়ে তাহলে লাভ উঠতে অনেক কষ্ট হয়। কারণ ভাল পোশাক গুলো ক্রেতারা নিতে চায়।
বাকী ছেঁড়া পোশাক গুলো ফেলে রাখতে হয়। ক্রেতারা এগুলো ভাল করে দেখে কেনে। এসব পোশাক গুলো সাধারণত পুরনো পোশাকের মত হয়ে থাকে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে এসব শীতবস্ত্র আনা হয়। একটি গাঁইট ১০হাজার থেকে প্রায় ৩০ হাজর টাকা দিয়ে কিনে আনা হয়। একটি সোয়াটারের দাম ১২০-৩০০, গেঞ্জি ৭০-১৫০, জ্যাকেট ২৫০-৭৫০, বাচ্চাদের কাপড় ৩০-২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে, টোপ ২০-১১০, মাফলার ৩০-১০০ টাকা তার মধ্যে থেকেই পছন্দের শীতের পোশাকটি বেছে নিতে চেষ্টা করেণ নিম্মবিত্ত দরিদ্র মানুষেরা। এবছর শীতের পোশাকের চাহিদা তুলনামূলক ভাবে কিছুটা বাড়ছে। দৈনিক ৫-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়। আশা করি এবছর দোকানে শীতের পোশাকের চাহিদা বাড়বে এবং বিক্রয় আরো বেশি হবে।