২য় ডিইউএমসিএস-টিআইবি দুর্নীতিবিরোধী মুট কোর্ট প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রানার-আপ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা, ০১ ডিসেম্বর ২০১৯: দেশে বিদ্যমান দুর্নীতিবিরোধী আইন সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুট কোর্ট সোসাইটি (ডিইউএমসিএস) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘২য় ডিইউএমসিএস-টিআইবি দুর্নীতিবিরোধী মুট কোর্ট প্রতিযোগিতা ২০১৯’Ñ এর চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রানার-আপ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় দল। সারাদেশের ২৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রাণবন্ত যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে গতকাল এ প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটে।
আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০১৯ উপলক্ষে টিআইবি আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে ২৮ নভেম্বর ২০১৯ শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী প্রতিযোগিতাটির চূড়ান্ত পর্ব, পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের মুট কোর্ট প্রতিযোগিতায় ৭৮ জন আইনের শিক্ষার্থী ও তাদের ২৬ জন প্রশিক্ষকসহ মোট ১০৪ জন অংশগ্রহণ করেন।
প্রতিযোগিতায় স্পিরিট অব দ্যা মুট পুরস্কার অর্জন করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল এবং বেস্ট মেমোরিয়াল ক্যাটাগরিতে ১ম স্থান অধিকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২য় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ৩য় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া, বেস্ট মুটার পুরস্কার অর্জন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দল থেকে আলী মাশরাফ, ২য় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তাহসীন বিন জাফর ও ৩য় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাল সাবিল চৌধুরী। বেস্ট রিসার্চার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলের মো. আজহার উদ্দিন ভূঁইয়া, ২য় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহাম্মাদ সাজিদ হাসান ও ৩য় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাবেয়া দেওয়ান।
প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক মাননীয় বিচারপতি জনাব মো. আবদুল মতিন, হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক মাননীয় বিচারপতি জনাব শামীম হাসনাইন ও হাইকোর্ট বিভাগের মাননীয় বিচারপতি জনাব মামনুন রহমান। আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ও ডিইউএমসিএস এর সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ, ডিইউএমসিএস এর মডারেটর অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ নাজমুজ্জামান ভূঁইয়া, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের।
প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক মাননীয় বিচারপতি জনাব মো. আবদুল মতিন বলেন, “আইন পেশায় সংশ্লিষ্টদের আইন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের পাশাপাশি সততা, ন্যায়নিষ্ঠতা, মানবিকতা ও চারিত্রিক দৃঢ়তা অপরিহার্য। পবিত্র ধর্মগ্রন্থে ঘুষ দেওয়া ও নেওয়া উভয়ই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মানুষ যতক্ষণ দুর্নীতির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন না হবে, ততক্ষণ দুর্নীতি থেকে মুক্তি সম্ভব নয়। যে মহান আদর্শ ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে আজকের তরুণ সমাজকে।”
হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক মাননীয় বিচারপতি জনাব শামীম হাসনাইন বলেন, “প্রতিযোগতায় অংশগ্রহণকারীদের আইন সম্পর্কে জ্ঞান, যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের কৌশল ও বাগ্মিতায় আমি মুগ্ধ, সত্যিকার অর্থে একটি বিশ্বমানের প্রতিযোগিতা হয়েছে। আমার বিশ্বাস দেশের দুর্নীতি প্রতিরোধে তারা কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।”
টিআই চ্যাপ্টারগুলোর মধ্যে টিআইবিই একমাত্র দুর্নীতিবিরোধী মুট কোর্ট প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, আমাদের দুর্নীতিবিরোধী বিচার ব্যবস্থার ভবিষ্যত খুবই সম্ভাবনাময়। এ ধরনের একটি আয়োজনের অংশ হতে পারা টিআইবির জন্য গর্বের ও পরম সুযোগ বলে মনে করি। আমাদের আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হয়েছে যে, তরুণদের হাত ধরে আগামী দিনের আইন ব্যবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।”
মাননীয় বিচারকবৃন্দ ও টিআইবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে আইন অনুষদের ডিন ও ডিইউএমসিএস এর সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ বলেন, “টিআইবির সহযোগিতার ফলে তরুণ শিক্ষার্থীরা দেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি সম্পর্কে বিশদ ধারণা লাভ করতে পারছে। প্রতিযোগিতা থেকে অর্জিত জ্ঞান ভবিষ্যতে তাদের আইন চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমি বিশ্বাস করি টিআইবি এ জাতীয় আয়োজনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে।”
গত ২৮ নভেম্বর ২০১৯ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে তিন দিনব্যাপী এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন আইন বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. নাইমা হক।