গির্জার মধ্যে থরে থরে সাজানো ৭০ হাজার কঙ্কাল
নামকরা একটি গির্জা। এর মধ্যেই থরে থরে সাজানো রয়েছে মানুষের হাড়। এই গির্জার ভেতরের দেয়ালসহ বিশালাকার ছাদ সাজাতে ব্যবহার করা হয়েছে অসংখ্য মানুষের হাড়গোড়। ছাদ থেকে ঝুলছে বিরাট এক ঝাড়বাতি, সেটাও তৈরি হয়েছে মানুষের মাথার খুলি ও হাড়গোড় দিয়ে।
চারিদিকে শুধু কঙ্কালপর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় একটি নাম কুতনা হোরা। চেক প্রজাতন্ত্রের ছোট্ট এই শহরটি এমনিতে বেশ ছিমছাম আর সাজানো-গোছানো। তবে, সেখানে পর্যটকরা যান আরো একটি জায়গা দেখতে। সেটি হচ্ছে বিখ্যাত সেডলেক ওসারি বা কঙ্কালের গির্জা। প্রায় ৪০ থেকে ৭০ হাজার মানুষের হাড়গোড় দিয়ে বানানো হয়েছে গির্জার বিভিন্ন জিনিসপত্র। প্রতি বছর অন্তত চার লাখ পর্যটক কঙ্কালের গির্জা দেখতে শহরটি যান।
কঙ্কাল দিয়ে গড়া ঝাড়বাতিএই গির্জার সবচেয়ে বড় আকর্ষণই হলো সেখানকার বিরাট ঝাড়বাতি। এটি তৈরি করতে মানুষের শরীরের ২০৬ ধরণের হাড়ের প্রতিটিই ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া, গির্জার ভূগর্ভস্থ কক্ষে পিরামিড আকারে নান্দনিকভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে অসংখ্য কঙ্কাল।
গির্জাটির ইতিহাসঅতীতে সেখানে ছিলো ছোট একটি কবরস্থান। এক পাদ্রী জেরুজালেম থেকে কিছু মাটি সংগ্রহ করে ওই কবরস্থানে ছড়িয়ে দেন। ১২০০ সালের দিকের ঘটনা। এরপর ওই এলাকার মানুষ পূণ্যলাভের আশায় মৃত্যুর পরে সেখানে সমাহিত হওয়ার ইচ্ছাপোষণ করেন। ধীরে ধীরে জায়গাটি সবচেয়ে জনপ্রিয় সমাধিক্ষেত্র হয়ে ওঠে।
কঙ্কাল দিয়ে গড়া নিদর্শন১৪০০ সালের দিকে ইউরোপে ‘ব্ল্যাক ডেথ’-এর কারণে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়। তাদের অনেককেই কুতনা হোরার ওই কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। একসময় সমাধিক্ষেত্রটিতে নতুন করে কাউকে সমাহিত করার মতো আর জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন অনেকটা ‘অস্থি সংরক্ষণাগার’ হিসেবে সেখানে একটি গির্জা নির্মাণ করা হয়। এরপর গির্জার ভেতরেই সমাহিত করা হতো মৃতদের।পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু১৫০০ সালের দিকে মৃত মানুষের মাথার খুলি ও হাড়গোড় গির্জায় সাজিয়ে রাখার দায়িত্ব দেয়া হয় এক খ্রিস্টান মঠকে। ১৭০০ সালের দিকে স্থপতি জ্যান সান্তিনি আইচেল গির্জাটি পুনর্নির্মাণ করেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্নজন গির্জার ভেতরে মৃতের হাড়গোড় ও কঙ্কাল সাজিয়ে রাখার দায়িত্ব পালন করেছেন। বাইরে থেকে একেবারেই সাধারণ। দেখতে আর দশটা গির্জার মতোই। তবে ভেতরে গেলে মনে হবে, কোনো এক অস্থি সংরক্ষণাগারে চলে এসেছেন। রক্ত-মাংসের নিচে মানুষ যে একটি কঙ্কাল ছাড়া কিছু নয়, হয়তো সেটাও মনে পড়ে যাবে।
কঙ্কালের মাথা দিয়ে গড়া হয়েছে এটিকী আছে সেডলেক ওসারিতে?গির্জাটি ইউরোপের মধ্যযুগীয় স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন। গির্জার গম্বুজের চূড়ায় সোনালি রঙের মাথার খুলি ও হাড়ের নান্দনিক নকশা (ক্রসবোন)। আর চারপাশে অনেকখানি জায়গা জুড়ে রয়েছে একটি কবরস্থান। পুরো গির্জা জুড়েই রয়েছে নরকঙ্কালের সারিসম্প্রতি এই গির্জার ভেতরে সেলফি তোলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে, দর্শনার্থীরা একেবারেই ছবি তুলতে পারবেন না, তা নয়। গির্জার ভেতরে ছবি তোলার জন্য তিন দিন আগে থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে রাখতে হবে। মৃতদের অসম্মান করে অশালীন ছবি তোলা ঠেকাতে এই উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
Please follow and like us: