আশাশুনির প্রতিবন্ধী মধুমিতার উচ্চ শিক্ষা সংকটাপন্ন
আশাশুনি উপজেলার বড়দলের গরীব পিতার প্রতিবন্ধী কন্যা মধুমিতার উচ্চ শিক্ষা অর্থের অভাবে সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছে। মেধাবী মধুমিতার লেখাপড়া এগিয়ে নিতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে সহৃদয় ব্যক্তি ও প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
বড়দল ইউনিয়নের বুড়িয়া-ফকরাবাদ গ্রামের দ্বীনমজুর তারক মন্ডলের কন্যা মধুমিতা। তার আরও দু’টি কন্যা রয়েছে। জন্মের সময় তারা সবাই প্রতিবন্ধিতা ছাড়াই সুন্দর শরীর নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিল।
৫ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করার সময় মধুমিতা দুঘৃটনা কবলিত হয়ে প্রতিবন্ধীতার চরম বিপদজনক পরিণতিতে পর্যবসিত হয়। বর্ষার সময় পথে কাঠ-বাঁশ দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করা ছিল। তার উপর দিয়ে যাওয়ার সময় পা পিছলে পড়ে হাড়ভাঙ্গা জখমিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে শুরু করে সে। গ্রাম্য ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় পায়ের অবস্থা খুবই খারাপ আকার ধারণ করলে তাকে সাতক্ষীরা হাসপাতালে নেওয়া হয়, সেখান থেকে তাকে খুলনা হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়।
কিন্তু খরচের টাকা যোগাড় করতে না পেরে চিকিৎসা শেষ নামান সম্ভব হয়নি। পিতার সহায় সম্বল যা ছিল সবকিছু বিক্রয় করে মেয়ের চিকিৎসা করান হয়। এরপর মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করে এবং নিজের যা ছিল সবকিছু নিয়ে তাকে নেওয়া হয় ভারতে। সেখানে তার বাম পা কেটে বাদ দেওয়া হয়। চরম পঙ্গ ল এসএসসি এবং বড়দল আফতাব উদ্দিন কলেঃ স্কুল হতে ২০১৬ সালে আইএ পাশ করে। এরপর সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বাংলায় অনার্সে ভার্তি হয়। কিন্তু পিতার পক্ষে সাতক্ষীরার হোস্টেলে রেখে পড়ানোর খরচ যোগানো অসম্ভব।
তাই পিতা জনমজুর খেটে পাওয়া টাকা দিয়ে সংসার চালিয়ে যেদিন তার হাতে যাতয়াতের খরচ তুলে দিতে পারে সেদিন তাকে কলেজে যাওয়া সম্ভব হয়। এভাবে কোন রকমে অনিয়মিত ভাবে কলেজে যাতয়াত বজায় রেখে পড়ালেখা চালিয়ে আসছে মধুমিতা। এবছর ফরম ফিলআপের জন্য ৫০০০ টাকার দরকার, কিন্তু পিতার পক্ষে অতটাকা যোগাড়ের সুযোগ হয়নি। বাধ্য হয়ে কিছু সম্পদ খোয়াতে হয়েছে। সে এখন অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্রী। তার পিতা সকল বই কিনে দিতে অক্ষম, সময় মতো কখনো বই কিনতে পারেননি, খাতা-কলম, জামাকাপড় কোন কিছুই ঠিকঠাক দিতে পারেননা অসহায় পিতা তারক মন্ডল।
তবুও অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে সংগ্রামী মধুমিতা দমতে রাজী নয়। তার অসহায় পিতা সমাজে বিত্তবান, সমাজ দরদী ও পরোপকারী মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছেন। সাথে সাথে জন প্রতিনিধি ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অনুকম্পা প্রার্থনা করেছেন। তার জীবনকে অভিশপ্ত করে তুলেছে। পিতার সম্বল বলতে মাত্র ৫ শতক জমি, যেখানে তাদের বসবাস। পিতা তাদের এক বোনকে অতিকষ্টে বিয়ে দিয়েছেন। অন্যটি ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। মধুমিতা পঙ্গু হলেও জীবনকে নিয়ে ভাবনার শেষ নেই। সে লেখাপড়া শিখে স্বাবলম্বী হওয়ার মহান ব্রত নিয়ে পড়ালেখার স্বপ্ন দেখছে।