সাতক্ষীরায় বুলবুলের আঘাতে লণ্ডভণ্ড উপকূলীয় অঞ্চল, ১৬ হাজার বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত
সাতক্ষীরায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কয়েক ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডবে বিধ্বস্ত উপকূলীয় অঞ্চল ।ঝড়ের তাণ্ডবে আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলায়ও বহু ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন যায়গায় গাছ-পালা ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। অনেক স্থানে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে রাত থেকে। সকাল ৯ টা পর্যন্ত ঝড়ো হাওয়া থাকলেও বর্তমান স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। শহরতলির অনেক এলাকার মানুষ আগে থেকেই জলাবদ্ধতার মধ্যে ছিলেন। টানা বৃষ্টিতে তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। রোববার(১০ নভেম্বর) ভোররাত ৩টার পর থেকে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। শ্যামনগরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলেরে আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সুন্দরবন ও জনপদ।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান জানান, ঝড়ের দাপটে গাবুরা ইউনিয়নের ৮০ শতাংশ কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। দুর্গাবাটি, দাঁতিনাখালি ও চৌদ্দরশি বাঁধ মারাত্মক ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে অনেক মাছের ঘের।তিনি আরও জানান, রাস্তায় গাছ পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। পুরো এলাকা বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন । গাবুরা, পদ্মপুকুর, আটুলিয়া, কাশিমারিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের শত শত একর চিংড়ি ঘের, আমনধান ও রবি শস্যের ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে।ঝড় থেমে গেছে বর্তমানে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
এদিকে বুলবুলের আঘাতে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। তবে সকালে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফেরার সময় সাতক্ষীরায় গাবুরায় আবুল কালাম (৬০) নামের এক ব্যক্তি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া বাড়িঘর পড়ে আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল বলেন, ঝড়ে সব কিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। রাস্তাঘাটে গাছপালা পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তার এলাকার মানুষের মাটির ঘরবাড়ি ঝড়ে বিধস্ত হয়েছে।
শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম জানান, ঝড়ে তার ইউনিয়নের পাঁচ হাজার কাচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সব মাছের ঘের ভেসে গেছে। বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। গাছপালা ভেঙে রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সকল বাহিনী উদ্ধার তৎপরতায় ব্যস্ত আছে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম কামরুজ্জামান বলেন, ভোররাত থেকে শুরু হওয়া ঝড় ও বৃষ্টি শেষ হয়েছে। গাছপালা পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে ছিল সেগুলো সরিয়ে রাস্তাঘাট সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। গাবুরা ও বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের কাচামাটির ঘরগুলো সব নষ্ট হয়ে গেছে। এই দুই ইউনিয়ন বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লন্ডভন্ড হয়ে গেছে দুই ইউনিয়নের সবকিছুই। এখনো কেউ নিহত বা আহত হয়েছে কি-না জানা যায়নি।
সাতক্ষীরা জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, উপকূলীয় এলাকায় ১৬ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে ২২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, নৌবাহিনী ও ১০০ জন সেনা সদস্য উপকূলীয় এলাকায় জানমাল রক্ষায় কাজ করছেন। এছাড়া সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ সড়কে ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছ সরিয়ে নিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃ-স্থাপনের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।