ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডব আশাশুনিতে ঘরবাড়ি ও ধানের ব্যাপক ক্ষতি
প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর তাণ্ডবে আশাশুনি উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে ১৬ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, গবাদি পশু, ধানের ফসল ও মৎস্য ঘেরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আশ্রয় শিবিরে আশ্রয় গ্রহণকারী মানুষ এখনো ফিরতে পারেনি।
১৫১২ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে সিপিপি সদস্যরা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ প্রশাসন ও জন প্রতিনিধিদের প্রচেষ্টায় শনিবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যার আগেই উপজেলার সকল ইউনিয়নে ২৭টি সাইক্লোন শেল্টার, ৮১টি দ্বিতল স্কুল ও ১১টি ইউনিয়ন পরিষদে মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেন। এসব স্থানে ৩৫ শতাধিক মানুষ আশ্রয় নেন। এছাড়া বিভিন্ন পাকা বিল্ডিং বাড়িতেও মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেন। সারাদিন ও রাতে থেমে থেকে হালকা বৃষ্টিপাত ও হাওয়া বয়ে গেলেও রাত ১ টার দিকে প্রথম প্রচন্ডবেগের ঝড়ো হাওয়ার আঘাত হানে।
এরপর কিছুটা কমলেও রাত্র ৩/৩.৩০ টার দিকে প্রচণ্ড গতির ঝড়ের থাবায় গোটা এলাকাকে গ্রাস করে ফেলে। মুহূর্তের মধ্যে গাছগাছালি, ঘরবাড়ি মড়মড় করে ভাংতে শুরু করে। সাথে সাথে প্রচুর বৃষ্টিপাত শুরু হয়। গাছ পড়ে বহু ঘরবাড়ি. বিদ্যুৎ লাইন ভেঙ্গে-ছিঁড়ে যায়, পথঘাট বন্ধ হয়ে যায়। ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত রোববার সকাল ৮ টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
উপজেলা প্রশাসন, জন প্রতিনিধি ও বিভিন্ন সূত্রে প্রাথমিক হিসাবে জানাগেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কমপক্ষে সাড়ে ১০ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ও সাড়ে ৫ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। মৎস্য ঘেরের মধ্যে কমপক্ষে ৬০% প্রচুর বৃষ্টিপাতে প্লাবিত হয়েগেছে।
আশাশুনি সদরের কোদন্ডা গ্রামে অধীর কৃষ্ণ মন্ডলের পুত্র তুলশী মন্ডলের মুরগীর খামারের ঘরের উপর গাছ পড়ে বিধ্বস্ত হওয়ায় খামারের ৫৬০টি বড় মুরগী মারা গেছে। যার মূল্য ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বহু গবাদি পশুর ক্ষতি সাধন হয়েছে। বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিঁড়ে ও খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। মোবাইল যোগাযোগ ভেঙ্গে পড়েছে। অধিকাংশ এলাকার বিলখাল তলিয়ে পানি ধান ক্ষেত জলমগ্ন হয়ে পড়ায় এবং ঝড়ে ধান গাছ পড়ে যাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিশু, আম, জাম, নারিকেল, কাঠালসহ হাজার হাজার গাছগাছালি উপড়ে ও ভেঙ্গে পড়েছে। তবে কোন মানুষের প্রাণ হানির খবর পাওয়া যায়নি।
শনিবার রাতে আশ্রয় শিবিরে আশ্রিতদের মাঝে চিড়ি-চিনি, আবার কোথাও কোথাও অন্য খাবার সরবরাহ করা হয়। রোববার দুপুরে খিঁচিড়ির ব্যবস্থা করা হয়। সকালে কোন খাদ্য দেওয়া হয়নি। জেলা প্রশাসন থেকে ৬০০ শুকনো খাবার প্যাকেট, শিশু খাদ্যের জন্য ২০ হাজার টাকা, গোখাদ্যের জন্য ২০ হাজার টাকা, ৩৭ মেঃ টন চাউল এবং ত্রাণ সহায়তা বাবদ ৯০ হাজার টাকা শনিবার আশাশুনির জন্য বরাদ্দ করা হয়। রোববার এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন সহায়তার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ঢাকা থেকে শুকনো খাবারের প্যাটেন আসছে বলে জানাগেছে।