বিরিয়ানি ছাড়া কিছুই খাচ্ছে না সুন্দরবনের বানররা
শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবনে গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে একটি বানরের সতর্ক দৃষ্টি। শুরুতেই কলা ছুড়ে মারা হলো, কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে বানরের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। হাতের মধ্যে থাকা বিরিয়ানির প্যাকেটই ‘চিনতাই’ করলো তারা। এই দৃশ্যে অবাক হতে হলো সবাইকে। সুন্দরবনের বানরের খাদ্যাভাসে বিস্ময়কর পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখা যায়, তারা ফল, গাছের মূল, পাতা ছেড়ে বিরিয়ানিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে এ পরিবর্তন দেখা গেছে।
সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বেশির ভাগই (প্রায় ৬০ শতাংশ) বাংলাদেশে অবস্থিত। বাকি অংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় পড়েছে। ভারতের অংশে দিনের পর দিন প্যাকেটজাত খাদ্য মুখের সামনে পাওয়ার ফলেই বানরের খাদ্যাভাসে এই পরিবর্তন এসেছে বলে জানা গেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদপ্রতিদিন এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বানররা এখন আর ফল-পাতায় তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছে না। বিশেষ করে পর্যটন কেন্দ্রের আশপাশে থাকা বানরদের খাদ্যাভ্যাসে ঘটেছে ব্যাপক পরিবর্তন। আর তাই প্যাকেটজাত খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে তারা। এমনই ছবি দেখা গেল সুন্দরবনের সজনেখালি বা ঝড়খালির পর্যটন কেন্দ্রের আশপাশের এলাকায়। বিস্কুটের প্যাকেট, বিরিয়ানি চিপসের প্যাকেট থেকে শুরু করে ঠান্ডা পানীয়- সব খাবার এখন তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে!
বলা হচ্ছে, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের খাবারের অভাব কোনোদিনই ছিল না, এখনো নেই। তারপরও এই বিশাল পরিবর্তন। এ বিষয়ে এক বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ বলছেন, জঙ্গলে খাবারের অভাব নেই। বিশেষ করে বানররা যেসব খাবার খায় সেগুলো তো যথেষ্ট পরিমাণে আছে। অন্যদিকে, কেওড়া হেতাল গাছের শ্বাসমূল ঠেসমূল এই সবই বানরদের খাবারের তালিকা রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বানররা মানুষের খাবারের বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. সঙ্গীতা মিত্র বলেন, সহজলভ্য খাবার পেতে পেতে বানর শুধু খাবারের অভ্যাস বদলায়নি, সেই সঙ্গে নিজেদের বিপদও ডেকে আনছে। এর ফলে বানর এবং মানুষ উভয়েই সমস্যায় পড়ছে। কারণ খাবার না পেলে তারা আঁচড় কামড় দিয়ে আক্রমণ করছে পর্যটকদের। ফলে বানরের থেকে মানুষের মধ্যে নানা অসুখ ছড়িয়ে পড়ছে।
পরিবেশবিদদের মতে, পর্যটকরাই মূলত সুন্দরবন এসে বানরের খাবারের অভ্যাসে পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তবে এটি শুধু সুন্দরবনের নয়, পুরো দেশের সমস্যা।