বদ্ধ ঘরে মানসিক ভারসাম্যহীন মা, মুচলেকায় ছাড়া পেল দুই ছেলে

একটি ঝুপড়ি ঘর। এর মাটির মেঝে। ঘরের দরজা-জানালা কিছুই নেই। সূর্যের আলোর দেখা নেই বহুদিন। ঘরে একটিই জরাজীর্ণ কাঠের চৌকি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মা জহুরা খাতুনের এই ঘরের বন্দী জীবনই নিত্যসঙ্গী।

কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে বৃদ্ধা মা জহুর খাতুনকে বসবাসের অনুপযোগী এই ঘরেই দীর্ঘদিন ধরে আটকে রেখেছেন দুই ছেলে। অথচ পাশেই দুই ছেলে আবুল হাসেম ও আব্দুস সালাম স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বড় টিনের ঘরে থাকছেন।  অবশেষে গত সোমবার ৯০ বছরের বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এছাড়া মায়ের প্রতি চরম অবহেলার অভিযোগে বৃদ্ধার দুই ছেলেকেও আটক করা হয়েছে। পরে মায়ের প্রতি আর অবহেলা করা হবে না এবং মাকে নতুন ঘর করে দেবেন- এমন প্রতিশ্রুতিতে ছাড়া পেয়েছেন দুই ছেলে।

জানা যায়, উপজেলার পংপাচিয়া গ্রামের জবেদ আলী ভূঁইয়ার স্ত্রী জহুরা খাতুন বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে অনেক দিন ধরেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দরজা-জানালাবিহীন জরাজীর্ণ ঘরে থাকছেন বছরের পর বছর। ঠিকমতো খাবার জোটে না, চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই।

সামর্থ্যবান দুই ছেলে আব্দুস সালাম আর আবুল হাশেম নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। প্রতিবেশীর কাছ থেকে খবর পেয়ে সোমবার রাতে বৃদ্ধার ঘরে হাজির হয় পুলিশ। তাড়াইল থানা পুলিশের এসআই মাসুদ আনোয়ারের নেতৃত্বে মানবেতর অবস্থায় জহুরা খাতুনকে দেখতে পান। পরে উদ্ধার করা হয় জহুরাকে। আটক করা হয় তার দুই ছেলেকে।

তাড়াইল থানার ওসি মো. মুজিবুর রহমান বলেন, একজন বৃদ্ধা মাকে জরাজীর্ণ ঘরে ফেলে রেখেছে ছেলেরা। দীর্ঘদিন ধরে একটি অনুপযোগী ঘরে বন্দী থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন জহুরা। মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে দুই ছেলেকে আটক করা হয়।

এদিকে দুই ছেলের এমন কাণ্ডে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালে বাধা দেন মমতাময়ী মা। বৃদ্ধ মা বলেন, ছেলেরা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। আমি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। এখন থেকে ছেলেদের সঙ্গেই আমি থাকব।

ওসি মো. মুজিবুর রহমান দুই ছেলেকে সতর্ক করে বলেন, মায়ের প্রতি আবারো যদি কোনো অবিচার হয়, তবে দুই ছেলে ও তাদের স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)