জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখাচ্ছে ইসি
ভোটার তালিকায় নাম ছিল। বিগত জাতীয় নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে তারা ভোটও দিয়েছেন। কিন্তু ভোটার তালিকায় এখন তাদের মৃত দেখা যাচ্ছে। জীবিত ব্যক্তি হঠাত্ মৃত হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা। বিভিন্ন জেলা নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে এমন অসংখ্য ব্যক্তি পুনরায় ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন।
তবে কেন বা কী কারণে মৃত দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম কর্তন করা হয়েছে, তার সদুত্তর দিতে পারছেন না নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, তথ্য সংগ্রহকারীদের গাফিলতির কারণে এমনটা হতে পারে।
একইভাবে গত ২৫ সেপ্টেম্বর শেরপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শুকুর মাহমুদ মিঞা স্বাক্ষরিত এক পত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘মো. আমির হোসেন (এনআইডি নং-৮৯১৩৭৫০৮৮৯২৮১) গ্রাম-বাতিয়াগাঁও, পোস্ট-হাতীবান্দা, উপজেলা-ঝিনাইগাতী, জেলা-শেরপুর এর নাম মৃত্যুজনিত কারণে কর্তন হওয়ায় পুনরায় অন্তর্ভুক্তির জন্য তার দাখিলকৃত আবেদন উপজেলা নির্বাচন অফিসার, ঝিনাইগাতী, শেরপুর কার্যালয়ে প্রেরণ করেছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দাখিলকৃত আবেদনপত্র প্রেরণ করা হলো।’
গত ২২ সেপ্টেম্বর সিলেটের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আরেকটি আবেদনে বলা হয়েছে, জকিগঞ্জের রহিমখাঁরচক এলাকার মো. আবুল কালাম আজাদ (এনআইডি নং-১৯৮১৯১১৯৪৮৫০০০০০৯) ও তাহমিনা আক্তার পপি (১৯৯৩৯১১৯৪৮৫০০০২৮০) ব্যক্তিদ্বয়ের তথ্য নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেইজে প্রদর্শিত হলেও ভোটার তালিকায় নাম নেই।
অনুরূপভাবে চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান জানান, চট্টগ্রামের দক্ষিণ মোঘলটুলীর মোহাম্মদ সাদেক হোসাইন (এনআইডি নং-১৯৮৪৩৩২৩০০১১৯০৭৪৫/১৫০৯৪০০০১০৮২), ভোটার তালিকা থেকে অজ্ঞাত কারণে তার নাম কর্তন করা হয়েছে মর্মে ডবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসার ও রেজিস্ট্রেশন অফিসার বরাবর আবেদন দাখিল করেছেন।
উক্ত ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি কর্তৃক প্রদত্ত সনদ ও জন্মনিবন্ধন সনদসহ থানা নির্বাচন অফিস, ডবলমুরিং, চট্টগ্রামে সশরীরে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে জবানবন্দি প্রদান করেছেন। সংশ্লিষ্ট অফিসার তার নাম পুনরায় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশপত্র পাঠিয়েছেন।
৮০ লাখ নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল থেকে সারাদেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হয়। এ বছর ২০০১, ২০০২, ২০০৩ ও ২০০৪ সালের পহেলা জানুয়ারি জন্ম এমন নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ইসি থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ৮৪ লাখ ৮ হাজার ৬৫৩ জন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
মৃত ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ৬ লাখ ৩৮ হাজার ১৬৩ জনের। এর মধ্যে ইসির ডাটাবেইজে মৃত ভোটারের তথ্য এন্ট্রি করা হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪৬৫ জনের। নতুন ভোটার ও মৃত ভোটার কর্তনের জন্য এবার সারাদেশে সাড়ে ৫২ হাজার তথ্য সংগ্রহকারী নিয়োগ দিয়েছিল ইসি। বিগত হালনাগাদের সময় যাদের নাম মৃত হিসাবে কর্তন করা হয়, তাদের অনেকেই ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তের জন্য আবেদন করেন।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহের জন্য ৩০ টাকা এবং একটি মৃত ভোটার কর্তনের জন্য ২০ টাকা করে সম্মানী পান তথ্য সংগ্রহকারীরা। তবে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রমাণাদিসহ তথ্য সংগ্রহ করেন তথ্য সংগ্রহকারীরা। পক্ষান্তরে মানুষের মুখের তথ্যে মৃত ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করেন তথ্য সংগ্রহকারীরা। এতে করে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই বিপুলসংখ্যক জীবিত ভোটারকে মৃত বানানো হয়েছে।
ইসির সংশ্লিষ্টরা বলেন, ২০ টাকার লোভে হয়তো তথ্য সংগ্রহকারীরা অনেকেই প্রকৃত ভোটারকে মৃত বানিয়েছেন। তথ্য সংগ্রহকারীদের গাফিলতিতে এটি হতে পারে। এ ধরনের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। প্রকৃত ভোটারকে মৃত বানানোর কারণে অসংখ্য ভুক্তভোগী নির্বাচন কমিশন সচিব, এনআইডির মহাপরিচালক ও পরিচালক (অপারেশনস) বরাবর আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) পরিচালক (অপারেশনস) আবদুল বাতেন বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটার কোনো সুযোগ নেই। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মৃত ভোটারকে ভোটার তালিকা থেকে কর্তন করা হয়। তবে এমন কোনো ঘটনা ঘটলে নির্বাচন কমিশন খতিয়ে দেখবে। অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘অসংখ্য ভোটারকে মৃত দেখানো হয়তো ঠিক নয়। মাঠপর্যায়ে ভুলত্রুটির কিছু ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের কাজ এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তা খতিয়ে দেখা। অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।