বনদস্যু জিয়া বাহিনীর পরিচয় দিয়ে জেলেদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ
শ্যামনগর উপজেলার টেংরাখালী গ্রামের তোরাপ সরদারের ছেলে জাকির এখন বনদস্যু জিয়া বাহিনীর সোর্স পরিচয়ে জেলেদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
সুন্দরবনের জেলে টেংরাখালী গ্রামের জহুর আলী গাজীর ছেলে আ: রাজ্জাক প্রতিবেদককে জানান, আমি এপেন্ডিস অপারেশনে শ্যামনগরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। আমি অসুস্থ থাকায় আমার নৌকা সহ জেলেদের জাকিরের মাধ্যে সুন্দরবনে কৈখালী ফরেস্ট ষ্টেশন থেকে বৈধ পাশ পার্মিট নিয়ে মাছ ধরতে পাঠায়। আমি শ্যামনগর হাসপাতালে অপারেশনের পর শুনতে পেলাম আমার নৌকা থেকে বনদস্যু জিয়া বাহিনী রায় মঙ্গলের মহন্ত খাল নামক স্থান থেকে জাকিরকে মুক্তিপণের দাবিতে উঠিয়ে নেয়। এই খবর পাওয়া মাত্রই আমি হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাড়ীতে আসি।ওই দিন রাত ৮টার সময়ে ভিজা কাপড় অবস্থায় জাকির আমার বাড়িতে আসে। জাকির বলে, আমি মেম্বারের সাথে কথা বলে ছাড়িয়ে এসেছি। মুক্তিপণের টাকাটা মেম্বারের কাছে দিতে হবে।
রাজ্জাক জাকিরকে বলেন, টাকাটা মেম্বারের কাছে না দিয়ে বনদস্যুদের কাছে বিকাশের মাধ্যমে দিলে ভাল হবে। না হলে পরে আবার বনে গেলে আমাদেরকে বিপদে পড়তে হবে। পরদিন সকালে টাকা ম্যানেজ করে জাকিরের হাতে নগত ২৫ হাজার টাকা দেই। আমি জাকিরের পিছে পিছে যায়। জাকির লাল্টু মেম্বারের বাড়ির সামনে গিয়ে আমাকে ভিতরের ঢুকতে জাকির বাঁধা দেয় এবং বলে তুমি মেম্বার সামনে গেলে টাকা নেবে না, ঝামেলা হতে পারে। আমি মেম্বারের রান্না ঘরের পিছে লুকিয়ে থাকি জাকির মেম্বারের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে আমাকে জানায়, টাকা দিয়ে এসেছি। ঝামেলা আর হবে না।
পরের গোনে আমি ও আমার জেলে সহ কৈখালী ফরেস্ট ষ্টেশন থেকে আবারও বৈধ পাশ পার্মিট নিয়ে সুন্দরবনে মাছ ধরে দারগাং গোড়ার খাল নামক স্থানে যাওয়ার পর, বনদস্যু জিয়া বাহিনী আমাদেরকে আটক করে। ব্যাপক মারপিট করে এবং বলে আগের টাকা কই ? আবার জঙ্গলে এসেছিস? আমার নৌকা থেকে জাল ও কাছি নদীতে ফেলে দেয়। ২ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে নৌকা সহ আমার জেলে টেংরাখালী গ্রামের নাছের গাজীর ছেলে সাহাদাৎকে উঠিয়ে নিয়ে আমাদের ছেড়ে দেয় এবং টাকা লাগানোর জন্য ০১৮৮৬১৩৩১৩১, ০১৭৮৪৫৯১৫১৫, ০১৭০৬০৮৮৭৫১ এই ৩ টি বিকাশ নাম্বার দেয়। আমি এই ৩টি নাম্বারে মোট ৭০ হাজার টাকা মুন্সিগঞ্জ বাজার থেকে বিকাশ মাধ্যমে পাঠাই। টাকা পাওয়ার পর সাহাদাৎকে ছেড়ে দেয়।
সাহাদাৎ বাড়ি এসে প্রতিবেদককে বলেন, জাকিরের কাছে মুক্তিপণের ২৫ হাজার টাকা রাজ্জাক দিয়েছিল সে টাকাটা বনদস্যু জিয়া বাহিনী না পেয়ে আমাদেরকে চরম নির্যাতন করে।
এ বিষয়ে জাকির প্রতিবেদককে বলেন, বনদস্যুরা আমাকে জিম্মি করে মহন্ত খালী নামক খালে নিয়ে যায়। আমরা যাওয়ার পর মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের এক জেলে আকবারের নৌকা দেখে তাকে জিম্মি করে। আকবার নিজের জন্য নগত ৬ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পায়। এবং আমার পরিচিত হওয়া বনদস্যুদেরকে আমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। তখন বনদস্যুরা আমার জন্য ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। আকবার এ কথা শুনে আমাদের রেখে চলে যায়। পরদিন বিকালে বনদস্যুরা মোবাইলে নেটওর্য়াকের ভিতরে যেয়ে জানতে পারে, প্রশাসন সুন্দরবনে অভিযানে নেমেছে। এই খবর পাওয়া মাত্রই বনদস্যুরা আমাকে নিয়ে ভারত সীমান্তে নিয়ে যায়। আমাকে জীবনের হুমকি দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণের টাকা দিয়ে সুন্দরবনের প্রবেশ করবি বলে ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে মিরগাং এর জেলে আকবার বলেন, আমার পরিচিত হওয়ায় অনুরোধ করার পরও বনদস্যুরা তাকে ছাড়িনি। এসময়ে তার সাথে থাকা তারই বড় ভাই মৎস্য ব্যবসায়ী আলহাজ্ব আব্দুর রহমান বলেন, জেলেদের সূত্রে আমি কিছু তথ্য জেনেছি। আপনি তথ্যগুলো নিতে পারেন। বনদস্যু জিয়া বাহিনী পাখিমারা, ধুমঘাট, মিরগাং এই তিন এলাকার জেলেদের জিম্মি করলে মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার জন্য ০১৭১৮০৫১৫৭৪ নাম্বারে যোগাযোগ করে বিকাশ নাম্বার নেওয়ার কথা বলে। পরে ওই নাম্বারে কথা বলে এই চারটি নাম্বারে ০১৭৫০২০০৯৩৯ নাম্বারে ২৫ হাজার, ০১৭৬০৩০৯৩৭৯ নাম্বারে ১০ হাজার, ০১৮২৩৬৬৩৭৩৩ ও ০১৮২৭৮২৮৩৬৫ নাম্বারে ১ লাখ টাকা পাঠায়।
অভিযোগের বিষয়টি জাকির এর কাছে জানতে চাইলে, তিনি সাংবাদিকের কথা শুনে ফোনটি কেটে দেন।
টাকা নেওয়ার বিষয়টি লাল্টু মেম্বারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের করা হচ্ছে উক্ত বিষয়টি নিয়ে রমজাননগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সাথে বসা বসি হয়েছিল আপনি চেয়ারম্যানের কাছে জানতে পারেন।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল মামুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন এ ধরনের কোনো টাকা নেয়ার প্রমাণ আমরা পাইনি এটা দলীয় মেম্বারকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।