দেবহাটার সাঁপমারা খাল খনন: স্বজনদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দু’পাড়ের বহু পরিবার
দেবহাটার পারুলিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত ইছামতি নদীর সাথে সংযুক্ত সাঁপমারা খাল খননের জন্য খালটির দুই পাশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি থেকে বসবাসরত হতদরিদ্র শত শত পরিবারকে নির্বিচারে উচ্ছেদ করে খাল খনন কাজ চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পটুয়াখালীর আবুল কালাম আজাদ ও ঢাকা বিজয় নগরের বশির উদ্দীন এমকে এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে। গত বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে নদী খনন পর্যায়ে দেবহাটার সাঁপমারা খালটির আশাশুনীর শোভনালী ইউনিয়নের কাটাখালী থেকে দেবহাটার পারুলিয়া ইউনিয়নের ভাঁতশালার ইছামতি নদীর সংযোগস্থল পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার বিস্তৃত খাল খননের জন্য দুইটি প্যাকেজে ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।
বরাদ্দ পরবর্তী টেন্ডারের মাধ্যমে খাল খননের দুটি প্যাকেজের কাজ পায় পটুয়াখালীর আবুল কালাম আজাদ ও ঢাকা বিজয় নগরের বশির উদ্দীন এমকে এন্টারপ্রাইজ নামের দুই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সাঁপমারা খালটির বিস্তৃত ৯ কিলোমিটারের এ খননকাজে উপরিভাগে গড়ে ৩০ মিটার এবং তলদেশ গড়ে ৯ মিটার হারে খনন করা হবে বলে জানিয়েছেন পাউবো’র পারুলিয়া শাখা পর্যবেক্ষন ও রক্ষনাবেক্ষন অফিসের দায়িত্বরত সাইদুর রহমান। তিনি আরো জানান, খালটি খনন কাজ চলাকালে দু পাশের ১৫ ফিট করে জায়গা রেখে খালের খননকৃত মাটি ফেলতে হবে।
তাছাড়া সরকারীভাবে সাঁপমারা খাল খননের এ বৃহৎ প্যাকেজ দুটির একটির কাজ আগামী জুন ও অপরটি আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শেষ করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয় বলেও জানান তিনি। এদিকে টেন্ডার পাওয়া থেকে বেশ অনেকটা সময় পার করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে সম্প্রতি বেশ তড়িঘড়ি করে সাঁপমারা খালের খনন কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুটি। তবে খনন কাজ শুরুর পরপরই খালটির দু পাশে বসবাসরত শত শত হতদরিদ্র পরিবারকে তাদের ঘর, আসবাবপত্র ও অন্যান্য মালামাল সরিয়ে নেয়ার সময় না দিয়ে এবং প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় অসহায় পরিবারদের সম্বলমাত্র ঘরবাড়ি নির্বিচারে স্কেভেটর দিয়ে ভেঙে উচ্ছেদ করা হচ্ছে বলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর।
পারুলিয়ার ইউপি সদস্য শেখ মকরম হোসেন জানান, সাঁপমারা খাল খননে প্রয়োজনের অতিরিক্ত হারে মানুষদের ঘরবাড়ি ভেঙে অমানবিকভাবে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। শুধু খালপাড় নয়, খননকৃত মাটি ফেলার অজুহাতে খাল থেকে বেশ কিছুটা দুরে রাস্তার পাশে বসবাসরত পরিবার গুলোকেও উচ্ছেদ করছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এসব পরিবারকে তাদের ঘরবাড়ী, আসবাবপত্র সরিয়ে নেয়ার সময় টুকু না দেয়ায় বহু পরিবারই এখন গবাদীপশু, আসবাবপত্র ও স্বজনদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। তবে হতদরিদ্রদের নির্বিচারে উচ্ছেদ করা হলেও একটু আর্থিক স্বচ্ছল একাধিক পরিবারের ঘর না ভেঙেই খনন কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা।
এব্যাপারে খননকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বশিরউদ্দীন এমকে এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধীকারী বশির উদ্দীন সাংবাদিকদের জানান, সাঁপমারা খালটি খননের জন্য বেশ কয়েকমাস আগে থেকেই খালের দুপাশের বসবাসরত পরিবারদের স্থাপনা সরানোর নোটিশ দেয়া হয় এবং মাইর্কিং করেও প্রত্যেককে স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়। কিন্তু পরিবারগুলো তাদের স্থাপনা সরিয়ে নেয়নি। এদিকে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে খনন কাজ শেষ করার জন্য বর্তমানে তড়িঘড়ি করে খাল খননের কাজ চালানো হচ্ছে। আর খননকাজ এবং খনন পরবর্তী খালের মাটি দুপাশে ফেলার জন্য বিস্তৃত জমির প্রয়োজন হচ্ছে।
এদিকে এ বিষয়ে দেবহাটার পারুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, খাল খননটি যেমন আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতির জন্য জরুরী, ঠিক তেমনি খাল খননের জন্য যাতে করে অতিরিক্ত মাত্রায় অমানবিক ভাবে মানুষদের উচ্ছেদ না করা হয় অথবা উচ্ছেদকৃতদের অন্যত্র সরকারী জমিতে পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হয় সে দিকেও খেয়াল রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে দাবী জানান তিনি।