ভারতের পর এবার ই-সিগারেট বন্ধ করতে পারে বাংলাদেশ সরকার
বিভিন্ন গবেষণায় ই-সিগারেটের ক্ষতিকর বিষয়গুলো সামনে আসছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘ভারতে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও এসব পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আগেই বাংলাদেশেও এসব পণ্যের উৎপাদন, আমদানি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করতে পারে সরকার।’
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট (ই-সিগারেট, এইচটিপি): বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উদ্যোগে এ মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের অসুস্থতাজনিত অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন।
অনুষ্ঠানে সাউথ এশিয়া প্রোগ্রামস, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস, ইউএসএ’র পরিচালক বন্দনা শাহ বলেন, তরুণ এবং শিশুদের টার্গেট করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ই-সিগারেট জাতীয় পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো। ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে এসব পণ্য ব্যবহার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
সচিব বলেন, ‘ই-সিগারেটসহ নতুন ধরনের সব তামাক পণ্যের উৎপাদন, আমদানি ও বিক্রি যতো দ্রুত সম্ভব নিষিদ্ধ করতে হবে। শীর্ষ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এবিষয়ে আমরা আলোচনা করব।’
ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরসহ ৩০টির বেশি দেশে এসব তামাক নিষিদ্ধের কথা তুলে ধরে সচিব বলেন, ‘বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে লাগাতে হবে।’
দেশে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ৩৫ শতাংশের বেশি মানুষ নানা রকম তামাক সেবন করে। তবে কি পরিমাণ মানুষ ই-সিগারেট পান করে তার সংখ্যা জানা যায় না। এর প্রভাব নিয়ে বলার মতো কোনো পরিসংখ্যানও নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের হিসাবে, দেশটিতে ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে তাদের স্কুলের শিশুদের মধ্যে ই-সিগারেট সেবনের হার ৭৮ শতাংশ বেড়েছে। গেল ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮০৫ জনের ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হওয়া ও ১২ জনের মৃত্যুর পেছনে ই-সিগারেট ও ধূম্রউদ্গীরক তামাকের ভূমিকা রয়েছে বলেও জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ।
দেশে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টের ব্যবহার তরুণ এবং যুব সমাজের মধ্যে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বিক্রয় কেন্দ্র। অনলাইন এবং ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ই-সিগারেট সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। ইতোমধ্যে পার্শ্ববতী দেশ ভারত ই-সিগারেট নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এছাড়া শ্রীলংকা, নেপাল, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ ৩০টির অধিক দেশ এসব পণ্য নিষিদ্ধ করেছে।
এই বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে কাজে লাগাতে হবে। ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার ও ক্ষতি থেকে তরুণ-যুব সমাজকে রক্ষা করতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ই-সিগারেট, ভ্যাপিংসহ সব ধরনের ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট উৎপাদন, আমদানি ও বিপণন নিষিদ্ধ করাই হবে বাংলাদেশের জন্য সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশই তরুণ, যাদের বয়স ২৪ বছর বা এর নিচে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট হিসেবে বিবেচিত এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে সঠিক পথে পরিচালনার ওপরই বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত সমৃদ্ধি ও উন্নতি নির্ভর করছে। তামাকে আসক্ত তরুণ প্রজন্ম এসব লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করবেনা। বরং সমাজ ও অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। ফলে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়বে।