পাটকেলঘাটায় জাল সনদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় একই পরিবারের ২ জন সরকারি চাকরি করার অভিযোগ
পাটকেলঘাটায় জাল সনদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি করছেন ২জন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। থানার অন্তর্গত নগরঘাটা কালীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-এ প্রতাপ কুমার সাহা ও সরুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বীরেন্দ্র নাথ সাহা। এছাড়া এই দুই শিক্ষকের বড় ভাইয়ের এক পুত্র সুমন সাহা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে সাতক্ষীরা সদর কৃষি অফিসে দীর্ঘদিন চাকুরী করে আসছে। একই পরিবারে ০৩(তিন) ব্যক্তি ভুয়া সনদ দেখিয়ে জাল জালিয়াতি করে চাকরি করছেন। এই নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ সুশীল সমাজ ও জনপ্রতিনিধিগণ পৃথক পৃথক অভিযোগ দাখিল করেছেন।
তথ্যানুসন্ধানে ও পুথক পৃথক অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে,পাটকেলঘাটা ধানদিয়া ইউনিয়নে কৃঞ্চনগর গ্রামের মৃত ললিত মোহন সাহার দুই পুত্র ২০০৯ ও ২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পান। এই দুই শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেখিয়ে চাকরিতে যোগাদান করে। শিক্ষা অফিসে সরকারি সিদ্ধান্ত সঠিক মুক্তিযোদ্ধার কোটায় প্রাপ্ত সংখ্যা ও তথ্য সংগ্রহে জন্য প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা কোটাধারী তথ্য জমা দিলেও এই দূনীতিবাজ দু’শিক্ষক টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে আসছে দীর্ঘদিন যাবত।
তাদের বাবা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা না এবং তাদের নেই কোন গেজেট বা মুক্তিবার্তা, কোন সরকারি ভাতাও পায় না । শুধু একটা জাল সার্টিফিকেট আছে। এই নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে । স্থানীয় এলাকাবাসীদের অভিযোগ মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও কিভাবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও কৃষি অফিসে আজও চাকরি করেন তা আমাদের ভাবার বিষয়। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ট সন্তান আর এ সনদ জাল করে তৈরি করে দীর্ঘদিন যাবত চাকরি করলেও কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? আরো বলেন নিয়োগের সময় যাচাই-বাচাই না করে কিভাবে এই দু’জনকে চাকরিতে যোগদানে অনুমতি দেয় তা আবার পূর্নরায় তুদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করেন।
মানুষ তৈরি কারিগররা যদি ভূয়া সনদ তৈরি করে তাহলে তাদের কাছ থেকে শিক্ষার আলো কতটুকুট ফুটবে এবং শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখবে । এ দূনীতিবাজ দু’শিক্ষক জাল সনদে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব’র সাক্ষর জাল তৈরি করে । যে মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেখিয়ে চাকরি করেছেন সেটা ওই সনদ অনুযায়ী তারেক সৈয়দ আলি হাসান, পিতা ইয়াকুব আলী,গ্রাম-২৩ আজিজুর রহমান সড়ক,পো: খুলনা, উপজেলা খুলনা সদর,জেলা-খুলনা। সম্পূর্ন অবৈধভাবে জাল মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরি করে নাম পরিবর্তন করে চাকরি নিতে প্রতারণার আশ্রয় নেয়। ভুয়া সনদের ভিক্তিতে কোটা নিয়ে চাকরি নেওয়ায় প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হয়েছে যা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভারসাম্য নষ্ট করে।
অভিযুক্ত দূর্নীতিবাজ ভুয়া সনদ চাকরি বিষয়ে কথা হয় দু’শিক্ষক প্রতাপ কুমার সাহা ও বীরেন্দ নাথ সাহার সঙ্গে। তারা ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন । একজন বলেন আমি কষ্ট করে চাকরিটা পেয়েছি যদিও একটু দূর্নীতির আশ্রয়ে নিয়েছি।
অপরজন বলেন আমি ওই সময় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়েছিলাম কি-না আমার ঠিকমত স্মরণে নাই। তবে কিছুটা হলেও বলতে পারি সাধারণ কোটায় চাকরি পেয়েছি।
অপরদিকে সাতক্ষীরা কৃষি-উপকারী সুমন সাহা বলেন, আমাদের সার্টিফিকেট আসল, তবে একটু মিস্টটেক হয়েছে। হাইকোটে রিট হয়েছে রায় আমরা পাবো । তবে আপনি সাংবাদিক কেন এ বিষয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছেন। আমাদের রুটিরুজির উপর আঘাত করবেনা । আপনার সাথে পরে কথা বলে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে তিনি বলেন।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকুরি করার মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয় মন্ত্রী/সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় মন্ত্রী/সচিব, মহাপরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক-সাতক্ষীরা, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার,এসবি শাখা, সাতক্ষীরা সদর কৃষি অফিস, উপ-পরিচালক,কৃষি বিভাগ,সাতক্ষীরা, দূর্নীতি দমন কমিশনের সম্মনিত জেলা কার্যালয়,খুলনা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার,তালা, সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, তালা মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ ১৮টি বিভাগে সন্তোস কুমার বিশ্বাস,সমর ঘোষ,কুদ্দুস গাজী, রমেশ রায়, প্রদীপ মাস্টার, রাজ্জাক দফাদার । অপরদিকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সন্তান আবু সাইদ মোহাম্মাদ ইদ্রিস বাদী হয়ে গত/১৯/৯/১৯ তারিখে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ে নিকট লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। বাদীকে বিভিন্ন ভাবে ম্যানেজ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় এলাকাবাসীসহ সুশীল সমাজ ও জনপ্রতিনিধিগণ এই দূর্নীতিবাজ দু’শিক্ষকের বিরুদ্ধে সুষ্ট তদন্ত করে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি করে।
তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা (সাবেক কমান্ডার) মফিজ উদ্দীন বলেন, জাল সনদ বিষয়ে এই প্রদিবেদকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার প্রত্যায়নপত্র জাল তৈরি করা হয়েছে যা আদো আমার স্বাক্ষরিত কোন প্রত্যায়ত পত্র দেয়নি।
অত্র ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোনের সাথে কথা হলে তিনি জানান , আমার ইউনিয়নে আমার জানামতে দু’জন মুক্তিযোদ্ধা আছে । কিন্তু ললিত মোহন মুক্তিযোদ্ধা কিনা আমার জানা নেই এবং আদো কোন জন্মমৃত্যু সনদ দেয়নি।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেন,তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভুয়া জাল সনদ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি বিষয়ে ১১জনের লিখিত দরখাস্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে সেটা তদন্ত এতো মধ্যে শেষ হয়েছে। তদন্ত বিষয়ে আরো জানতে চাইলে তিনি বলেন শুধু আমরা তদন্ত নিয়েকি পড়ে থাকবো,আমাদের আরো কাজ আছে।
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে যোগাযোগ করা হলে একটি বিশেষ উচ্ছেদ অভিযানে থাকায় কোন আলাপ করা যায়নি ।