২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার এড. আব্দুর রহিমের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী
সাতক্ষীরায় খাসজমি ও নাগরিক অধিকার ভিত্তিক সংগ্রামের আপোষহীন প্রতীক পুরুষ এডভোকেট আব্দুর রহিমের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার। দিবসটি উপলক্ষে জেলা নাগরিক কমিটি স্মরণ সভার আয়োজন করেছে। ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের হলরুমে উক্ত স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে উক্ত স্মরণ সভায় সংশ্লিষ্ট সকলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: এড. আব্দুর রহিম দেবহাটার সুশীলগাতী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মৃত মফিজ উদ্দিন। স্থানীয় প্রাইমারি স্কুল থেকে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। দেবহাটার টাউনশ্রীপুর হাইস্কুল থেকে তিনি ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিক পাশ করে সাতক্ষীরা কলেজে ভর্তি হন। তিনি ১৯৫৬ সালে স্নাতক পাশ করেন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬০ সালে তৎকালীন সাতক্ষীরা কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি আইন পেশার সাথে যুক্ত ছিলেন।
তিনি ১৯৫২ সালে সাতক্ষীরা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র হিসেবে ক্লাশ রিপ্রেজেনটেটিভ নির্বাচিত হন। এসময় রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনে ঢাকায় ছাত্র জনতার উপর পুলিশের গুলি বর্ষণে হতাহতের ঘটনায় সাতক্ষীরাতেও মিছিল মিটিং সভা সমাবেশ হয়। সেসময় আরও কয়েকজন ছাত্রের সাথে তিনি গ্রেপ্তার হন। পরবর্তীতে তার নেতৃত্বে দেবহাটা কালিগঞ্জ এলাকায় সভা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এড. আব্দুর রহিম পরবর্তীতে ন্যাপের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন এবং স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে তৎকালীন মহাকুমা ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি কমপক্ষে ১০ বার মহাকুমা ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। জাতীয় পার্টি গঠিত হওয়ার পর এড. আব্দুর রহিম জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাতক্ষীরা জেলা ভূমিহীন সমিতির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৯৮ সালে সাতক্ষীরার দেবহাটা কালিগঞ্জে ৯টি তথাকথিত জলমহলের খাস জমিতে বসবাসরত সহ¯্রাধিক ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু হলে এড. আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে দেবহাটা কালিগঞ্জ ভূমিহীন উচ্ছেদ প্রতিরোধ সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। সাতক্ষীরার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আইনজীবী শিক্ষক সাংবাদিকদের সমন্বয়ে গঠিত এই কমিটির তিনি আহবায়ক ছিলেন। তার নেতৃত্বে ভূমিহীন উচ্ছেদের বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন গণবিস্ফোরণে পরিণত হয়। পরবর্তীতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতাসহ দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সাতক্ষীরাতে আসেন এবং ভূমিহীনদের দাবি দাওয়ার প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভূমিহীনদের খাসজমিতে অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ উচ্ছেদের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন। ২০০০ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় এড. আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে বন্যার পানি নিষ্কাশন আন্দোলন গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে তিনি খুলনা যশোর সাতক্ষীরা এলাকায় ভূমি আন্দোলনের সাথে যুক্ত কেন্দ্রীয় ভূমি কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সাতক্ষীরা জেলা ইউনিটের সহ-সভাপতিসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তার নেতৃত্বে সাতক্ষীরা জেলার উন্নয়ন ও অধিকার ভিত্তিক নানা আন্দোলন গড়ে উঠে। তিনি সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।