টাইগার দলে নাটকীয় পরিবর্তন

ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে দলে ছিলেন শেখ মেহেদি হাসান, ইয়াসিন আরাফাত ও আবু হায়দার রনি। এই ত্রয়ীর একজনেরও মাঠে নামা হয়নি। উল্টো টুর্নামেন্টের পরের দুই ম্যাচের দল থেকে বাদ পড়েছেন তারা। কেন না খেলিয়ে বাদ দেওয়া হলো তাদের?

আজ উত্তরটা দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু।

সোমবার বেলা ১১টার দিকে সিরিজটির প্রথম দুই ম্যাচ পর ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে বাংলাদেশ দলে। যেখানে বাদ পড়েছেন চারজন। যাদের তিনজনই আবার একাদশেই সুযোগ পাননি। নতুন করে দলে ঢুকেছেন পাঁচজন। এরমধ্যে টি-টোয়েন্টিতে একেবারেই নতুন মুখ তিনজন।

এদিন বাকি দুই ম্যাচের আগে বাদ দেয়া হয়েছে ছন্দ হারানো সৌম্য সরকারকে। তবে তার সঙ্গে না খেলেই বাদ পড়েছেন তিনজন। চমক হিসেবেই টি-টোয়েন্টি দলে আসা পেসার ইয়াসিন আরাফাত মিশু বাদ পড়েছেন সাইড স্ট্রেনের ইনজুরি থাকায়। মূলত তার চোটের কারণেই দ্বিতীয় ম্যাচের আগে স্কোয়াডে ডাকা হয়েছিল পেসার আবু হায়দার রনিকে। কিন্তু খেলার সুযোগ না পেলেও পরের দুই ম্যাচেও দলে জায়গা হয়নি তার। আর শুরু থেকে দলে থেকেও কোন ম্যাচ না খেলেই কাটা পড়েছেন অফ স্পিনার মেহেদী হাসান।

এদিকে সৌম্যর জায়গায় প্রথমবারের মতো দলে সুযোগ পেয়েছেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ। আর সবচেয়ে বড় চমক হিসেবেই দলে নেয়া হয়েছে লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে। দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের জন্য বেশি বিবেচিত নাজমুল হোসেন শান্তও টি-টোয়েন্টি দলে এসেছেন চমক হয়েই। এছাড়া দলে ফিরেছেন বহু পরীক্ষিত পেসার রুবেল হোসেন ও শফিউল ইসলাম।

কিন্তু একটা টুর্নামেন্টের মাঝপথে দলে কেন এত বেশি পরিবর্তন? এমন প্রশ্ন করা হলে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। তিনি বলেন, ‘নতুন কোচ আরও কয়েকজন ক্রিকেটারকে দেখতে চেয়েছেন। সেজন্যই স্কোয়াডে এতগুলো বদল করা হয়েছে।’

নান্নু জানান, রনি, মেহেদী, ইয়াসিনদের দলে না থাকার কারণ অবশ্য ভিন্ন। এইচপি দলে থাকায় রাখা হয়নি তাদের। কাল (মঙ্গলবার) তারা এইচপি দলের হয়ে ভারত সফরে যাচ্ছে, তাই তাদের রাখা হয়নি। যেহেতু টি-টোয়েন্টি খেলা, স্বভাবতই বড় স্কোয়াড করার দরকার নেই।

এদিকে, ত্রিদেশীয় এ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে সৌম্য করেন ৪ ও ০ রান। ৪৩ টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ারেও থিতু হতে পারেননি, করেছেন মাত্র একটা ফিফটি। অফ ফর্মের কারণেই যে তিনি বাদ পড়েছেন, তা নিশ্চিত করেছেন প্রধান নির্বাচকও। তার জায়গায় দলে আসা নাঈম বিবেচিত হয়েছেন সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাটে রান বন্যা ছুটিয়ে। আফগানিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে একদিনের ম্যাচে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন তিনি। তার আগে গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে ১৬ ম্যাচে করেন ৮০৭ রান।

দীর্ঘদিন ধরেই পারফর্ম করায় নাঈমের দলে আসাটা স্বাভাবিক। সে তুলনায় শান্তর টি-টোয়েন্টি দলে থাকা অনেকটা চমকের। এর আগে জাতীয় দলের হয়ে দুটি টেস্ট ও তিনটি ওয়ানডে খেলা শান্ত ঘরোয়া টি-টোয়েন্টির আসর বিপিএলেও সেভাবে কখনও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। বরং টি-টোয়েন্টিতে তার ব্যাটিংয়ের ধরণ হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচক জানালেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে অনেককেই নতুন করে দেখতে চাইছেন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো।

অন্যদিকে দলে সবচেয়ে বড় চমক আমিনুল বিপ্লব। বয়সভিত্তিক দলে তার পরিচয় মূলত ব্যাটসম্যান। সবশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বিকেএসপির হয়ে নিয়মিত রান করেই নজর কেড়েছিলেন তিনি। তবে অনিয়মিতভাবে হাত ঘুরিয়ে লেগ স্পিনটাও ভাল করেন তিনি। সেটাই নাকি মনে ধরেছিল এইচপির কোচ সাইমন হেলমটের।

এমনকি সর্বশেষ আফগানিস্তান ‘এ’ দল ও শ্রীলঙ্কা ইমার্জিং দলের বিপক্ষে লেগ স্পিনার হিসেবেই খেলানো হয়েছে আমিনুলকে। একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই তাকে দলে নেয়া হয়েছে বলে জানান নান্নু।

সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘ওকে লেগ স্পিনার হিসেবেই দলে নেয়া হয়েছে। বেশ কয়েকদিন থেকেই এইচপিতে ওকে নার্সিং করা হচ্ছিল।’

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) দলের হয়ে ভারতে যাওয়ার কথা থাকলেও প্রধান কোচের আগ্রহেই চট্টগ্রামে যেতে হচ্ছে আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ও নাজমুল হোসেন শান্তকে। সঙ্গে যাচ্ছেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ, রুবেল হোসেন ও শফিউল ইসলাম। এখন দেখার বিষয়, নাটকীয় এই পরিবর্তনে ভাগ্য ফেরে কিনা টাইগারদের!

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)