‘ভূস্বর্গ’কাশ্মীরে জমি কেনার ঘোষণা মহারাষ্ট্র সরকারের

সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের ফলে কাশ্মীরের সম্পত্তির মালিকানা কাশ্মীরিদের হাতে রাখার বিধান বিলোপ হওয়ার পর থেকেই ভারত জুড়ে কাশ্মীরের জমি কেনার ধুম পড়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ‘ভূস্বর্গ’ বলে খ্যাত কাশ্মীরে জমি কেনার জন্য রীতিমত প্রতিযোগীতায় নেমেছে। এবার সেই প্রতিযোগীতায় নাম লিখিয়েছে দেশটির মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার। সম্প্রতি এক ঘোষণায় কাশ্মীরে জমি কেনার ঘোষণা দিয়েছে তারা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কাশ্মীরে পর্যটন রিসোর্ট নির্মাণে আগ্রহী মহারাষ্ট্র সরকার। এজন্য এরইমধ্যে জমি বাছাইয়ের কাজ শুরু করে দিয়েছে তারা।

পূর্ববর্তী নিয়ম অনুযায়ী কাশ্মীরের বাসিন্দারা ছাড়া কোনো বহিরাগত ব্যক্তি সেখানে জমির মালক হতে পারতো না। তবে ৩৭০ ধারা বাতিলের মাধ্যমে অঞ্চলটির বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ায় বহু আইনের সঙ্গে সঙ্গে এই আইনটিরও বিলুপ্তি ঘটেছে।

সমালোচকরা বলছেন, কাশ্মীরের জনসংখ্যার গঠন বদলে দেয়া, তথা সেখানে মুসলমানদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করতেই বাইরের লোকজনকে জমি কেনার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, ভারতের অন্যান্য স্থান থেকে হিন্দুরা যেন কাশ্মীরে জমি কিনে ও বসতি স্থাপন করে সেখানকার জনসংখ্যার গঠন বদলে দিতে পারে।

মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার জানিয়েছে, দুইটি রিসোর্ট নির্মাণে কাশ্মীরে জমি কেনার পরিকল্পনা করছে সরকার। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রিসোর্টগুলো তৈরি করবে মহারাষ্ট্র ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন। এর একটি হবে কাশ্মীরের পাহালগাম এলাকায়। অন্যটি হবে লাদাখের লেহ এলাকায়। এর ফলে অমরনাথ যাত্রায় অংশগ্রহণ ও বিষ্ণু দেবী মন্দিরে যেতে আগ্রহীরা উপকৃত হবে।

এদিকে স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর কাশ্মীরে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয়দের মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। সেখানকার কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক সাংবাদিক। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, তাদেরকে মোটা তার ও লাঠি দিয়ে মারধর এবং বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছে। নির্যাতিতরা ওই সাংবাদিককে ক্ষতচিহ্নগুলো দেখিয়েছেন। তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী এই অভিযোগগুলোকে ‘ভিত্তিহীন ও প্রমাণসাপেক্ষ নয়’ বলে দাবি করেছে।

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ অধিকার বাতিল করে অঞ্চলটিকে দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে দিল্লি। ওই দিন সকাল থেকে কার্যত অচলাবস্থার মধ্যে নিমজ্জিত হয় পৃথিবীর ভূস্বর্গখ্যাত কাশ্মির উপত্যকা। সেখানে কারফিউ জারি ও বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। অতিরিক্ত হাজার হাজার সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী ও অ্যাক্টিভিস্টসহ তিন সহস্রাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। কাশ্মীরের কারাগারগুলো ভরে যাওয়ায় অনেককে রাজ্যের বাইরের কারাগারে রাখা হয়েছে।

বিবিসি’র সাংবাদিক সামির হাশমি দক্ষিণ কাশ্মীরের অন্তত ৬টি গ্রামে ঘুরে দেখেছেন। ওই গ্রামগুলোতে গত কয়েক বছরে ভারতবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হত। তিনি বলেন, ‘ওই গ্রামগুলোর সবকটার বাসিন্দাদের কাছ থেকেই নির্যাতনের একই ধরণের বক্তব্য শুনতে পেয়েছি।’

তবে রোগীদের ওই ক্ষতচিহ্নের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। গ্রামবাসীরা সাংবাদিককে তাদের শরীরের ক্ষত দেখিয়ে দাবি করেছেন, যে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতেই নির্যাতনের শিকার হয়েছে তারা। আরেকটি গ্রামের বাসিন্দা জানায়, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পরপরই ভারতীয় সেনাবাহিনী বাড়ি তল্লাশি, ধরপাকড়, নির্যাতন শুরু করে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)