দুই প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে স্বামীকে হত্যা, রহস্য উদঘাটন
যশোরে খুন হওয়া ঝিনাইদহের এলজিইডির গাড়িচালক এটিএম হাসানুজ্জামান ওরফে জগলু হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পরকীয়ার জের ধরে স্ত্রী তাহমিনা পারভীন তমা ও তার প্রেমিক জগলুকে খুন করে মরদেহ যশোর সদরের চুড়ামনকাটি-বারীনগর মহাসড়কের সাঁকোর মাথায় ফেলে দেয়।
গ্রেফতার হওয়ার পর পিবিআইকে এ তথ্য জানিয়েছেন তমা। পিবিআই যশোরের এএসপি এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, জগলু ১৯৯৯ সালে তাহমিনা পারভীন তমাকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। জগলু ঝিনাইদহের এলজিইডি অফিসে চাকরি করতেন। আর স্ত্রী ছেলে-মেয়ে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরে থাকতেন।
জগলু ২০০৮ সালে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন। এতে তাদের সংসারে আর্থিক সংকট দেখা দেয়। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়। এরপর তাহমিনা ছেলেকে ঢাকার আমদজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি করেন। আর মেয়ে নিয়ে কুষ্টিয়ায় থাকেন।
এরই মধ্যে তাহমিনা পারভীনের সঙ্গে ঢাকার আলামিন ও মুরসালিন নামে দুই যুবকের বন্ধুত্ব হয়। তার স্বামী বিষয়টি জানতে পেরে সন্দেহ বেড়ে যায় ফলে ছেলেকে নিয়ে ঢাকার মিরপুরে একটি বাসা ভাড়া নেন তহমিনা।
গত ঈদুল আজহার আগের দিন তাহমিনা কুষ্টিয়ার বাসায় আসেন। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে তার দেখা হয়নি। এ কারণে তার স্বামী জগলু ফোনে তাকে গালিগালাজ করেন। এর মধ্যে আবার ঢাকার কেরানীগঞ্জে একটি বাসা ভাড়া নেন তাহমিনা। ওই বাসায় মুরসালিনকে স্বামী আর আলামিনকে দেবর পরিচয় দেন। এর আগে জগলু তার স্ত্রীকে অনেক টাকা দিয়েছেন। সেই টাকা বন্ধুদের পেছনে খরচ করেছেন তাহমিনা।
২৬ আগস্ট মিরপুর-১৩ নম্বরে ছেলের বাসায় এসেছিলেন তাহমিনা। ওই সময় মোবাইল ফোনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন জগলু। এরপর আলামিন ও মুরসালিনকে মোবাইলে ডেকে এনে তাহমিনা বলেন- ‘স্বামী জগলু আমার জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে, আমার জন্য তোমরা কিছু একটা করো।’ তারা জগলুকে মেরে ফেলার পরামর্শ দেয়। এরপর তারা পরিকল্পনা করে ২৭ আগস্ট ভোরে রওনা হয়ে যশোরে আসেন। তারা একটি আবাসিক হোটেলে ছিলেন। এরই মধ্যে জগলু স্ত্রীকে ফোন করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু তাহমিনা তাকে ২০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন।
মোবাইলে যোগাযোগ করে জগলু ঝিনাইদহের শামীমা ক্লিনিকের সামনে থাকেন। রাত ১০টার দিকে ক্লিনিকের সামনে তাকে গাড়িতে পেছনের ছিটের মাঝখানে বসিয়ে তাহমিনা ও আলামিন দুই পাসে বসেন। মুরসালিন চেতনানাশক ওষুধ নাকে চেপে ধরলে সে অচেতন হয়ে যায়। তখন তিনজনে রশি দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত হতে গলা কেটে দেয়।
এ হত্যার ঘটনায় নিহত জগলুর ভাই এটিএম হাকিমুজ্জামান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন। পুলিশ তাহমিনাকে শনিবার গ্রেফতারের পর হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়। গতকাল রোববার তাহমিনাকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।