বাংলাদেশ ছাড়তে চায় গ্যাস কোম্পানি সান্তোস
বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বহুজাতিক গ্যাস কোম্পানি সান্তোস। নিজেদের ব্যাবসায়িক শেয়ার বিক্রির জন্য সম্ভাব্য ক্রেতা খুঁজছে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক এ কোম্পানিটি। দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা কাটাতে বাংলাদেশ যখন প্রস্তুতি গুছিয়ে আনছে তখন সান্তোসের এ দেশত্যাগের পরিকল্পনা জ্বালানি খাতের জন্য বড়ো ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পেট্রোবাংলার এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালে সমুদ্রভাগের মগনামা কাঠামোতে বাপেক্সের সঙ্গে যৌথভাবে ম্যাগনামা-২ কূপটি খনন করে সান্তোস। কিন্তু এর মজুদ বাণিজ্যিকভাবে উপযুক্ত ও টেকসই নয় বলে জানায় বাপেক্স ও সান্তোস। এরপর থেকে গ্যাস অনুসন্ধানে অগ্রগতি কম।
বাপেক্স সূত্র জানায়, মগনামা জায়গাটি ১৬ নম্বর ব্লকে সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রের অদূরে। উত্তোলনযোগ্য মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রটি ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় এক যুগ উত্পাদন অংশীদারিত্ব চুক্তির (পিএসসি) অধীনে যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি কেয়ার্ন এনার্জি পিএলসির জরিপে মগনামায় তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা (লিড) চিহ্নিত হয়েছিল। তারা ২০০৮ সালে মগনামায় কূপ খনন করে। এরপর ২০১০ সালে ২১৩ লাইন কিলোমিটার জুড়ে দ্বিমাত্রিক ভূতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করে। একপর্যায়ে কেয়ার্ন ১৬ নম্বর ব্লক সান্তোসের কাছে হস্তান্তর করে চলে যায়। সান্তোস মগনামার জরিপ প্রতিবেদন আরো বিশ্লেষণ করে সেখানে অনুসন্ধান কূপ খননের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এজন্য তারা একটি সহ-অংশীদার কোম্পানি নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এই পর্যায়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বাপেক্সকে সান্তোসের সহ-অংশীদার করার। কোনো বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে কিংবা সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে এটিই বাপেক্সের প্রথম পদক্ষেপ ছিল। এ অংশীদারিত্বের জন্য সান্তোসকে ১৬ দশমিক ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে হয়। কিন্তু যৌথভাবে তারা যে খনন করে তা বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়নি। অর্থাত্ পুরো অর্থই ‘জলে গেল’।
এদিকে সমুদ্রভাগের ১১ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সিঙ্গাপুরের ক্রিস এনার্জির সঙ্গে পৃথকভাবে যৌথ উদ্যোগ নেয় সান্তোস। ২০১৪ সালে সান্তোস-ক্রিস এনার্জি যৌথ কোম্পানির সঙ্গে পাঁচ বছর মেয়াদি উত্পাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। তখন তারা একটি অনুসন্ধান কূপ খনন এবং ১ হাজার ৮৭৬ লাইন কিলোমিটার দ্বিমাত্রিক জরিপ এবং ৩০০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে ত্রিমাত্রিক জরিপ করার প্রতিশ্রুতি দেয়। গত বছর ঐ ব্লকে তারা প্রায় ৩০৫ বর্গকিলোমিটার জুড়ে ত্রিমাত্রিক ভূকম্প জরিপ করে। এর আগে ২০১৭ সালে ৩ হাজার ২২০ লাইন কিলোমিটার জুড়ে দ্বিমাত্রিক ভূকম্প জরিপ পরিচালনা করে। কিন্তু চুক্তির মেয়াদকালে তারা দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক ভূকম্প জরিপ করলেও কূপ খনন আর করেনি।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, সান্তোস-ক্রিস এনার্জি যৌথ কোম্পানির সঙ্গে পাঁচ বছর মেয়াদি উত্পাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। ২০১৪ সালের মার্চে স্বাক্ষরিত ঐ চুক্তির মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ১১ মার্চ পর্যন্ত। ইতিমধ্যে পেট্রোবাংলা চুক্তির মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়িয়েছে। এ সময়ে প্রতিশ্রুত কূপ খননসহ অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ অবস্থায় অন্য কোম্পানির কাছে ব্যবসা হস্তান্তর করে বাংলাদেশ ছাড়তে চায় সান্তোস। এটি অনুসন্ধান কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে অন্য গ্যাস কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দর কষাকষিতে অস্বস্তি তৈরি করবে।
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ম তামিম বলেন, বাংলাদেশে গ্যাস-খনিজ অনুসন্ধান কার্যক্রম খুবই ধীর। এ অবস্থায় সান্তোস দেশ ছাড়লে অনুসন্ধান কার্যক্রম আরো থমকে যাবে। তবে নিজেদের ব্যাবসায়িক বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার অধিকার কোম্পানিটির রয়েছে।