তালায় ঘুমন্ত স্বামীকে এসিড দগ্ধের ঘটনায় স্ত্রী গ্রেফতার
সাতক্ষীরার তালায় চর কানাইদিয়ায় ঘুমন্ত স্বামী আলামিন এসিডদগ্ধের ঘটনায় তার পিতার দায়ের করা মামলায় স্ত্রী আশা ওরফে হাফসাকে পুলিশ আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে থানা পুলিশ । তবে দিন যতই গড়াচ্ছে ঘটনার রহস্য ততই ঘণীভূত হচ্ছে।
প্রকাশ,বন্ধ ঘরে এক বিছানায় ঘুমন্ত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শুধুমাত্র স্বামী এসিডদগ্ধ ও নিক্ষিপ্ত এসিডের পাত্র খুঁজে না পাওয়ায় মূলত সন্দেহের তীর ঘরের বাইরেও প্রসারিত হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে,ঘটনায় কোন তৃতীয় পক্ষের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি জোরালো হচ্ছে। যদিও ঘটনার পর দগ্ধ আলামিনের স্ত্রী আশাকে একমাত্র আসামী করে মামলা হয়। তবে ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশ,জনপ্রতিনিধি কিংবা পরিবারের কেউই এসিডের পাত্রটি উদ্ধার করতে পারেনি। অন্যদিকে পরিবারের দেয়া তথ্য মতে বদ্ধ ঘরের মধ্যে বাইরে থেকে এসিড নিক্ষেপের মত কোন সুযোগ বা ফাঁকা নেই। সঙ্গত কারণেই ভেতর থেকে তাকে কেউ আক্রান্ত করেছে,সেটাই ধারণা করা স্বাভাবিক।
সঙ্গত কারণে একটা প্রশ্ন অবশিষ্ট থেকেই যাচ্ছে। আর তা হল,কোন তৃতীয় পক্ষ ঘটনায় জড়িত রয়েছে। যে কিনা আলামিনকে এসিড ছুড়তে অথবা তা সরবরাহে সহযোগিতা করেছিল। সেক্ষেত্রে হয় আগে থেকেই দরজা খোলা রাখা হয়েছিল,অথবা ঘটনার আগে দরজা খুলে তৃতীয় জনকে ঘরে ঢুকিয়ে নেয়া হয়। ঘটনার পর তাকে সরিয়ে দিয়ে ফের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়।
পরিবারের দাবি,ঘটনার পর দগ্ধ আলামিনই দরজা খুলে দিলে স্বজনরা ভেতরে প্রবেশ করে তাকে উদ্ধার করে। ঘটনায় আলামিনের স্ত্রী আশা ওরফে হাফসাকে একমাত্র আসামী করে তালা থানায় একটি মামলা হয়েছে। আল আমিনের পিতা বাদি হয়ে রোববার (১১ আগস্ট) মামলাটি করেছেন। মামলা নং-১।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই প্রীতিশ রায় জানান,এর আগে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আশাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেন। পরে মামলা হলে তাকে আটক দেখিয়ে সোমবার ঈদের দিন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিট সূত্র জানায়, আলামিন গাজীর শরীরের প্রায় ৪০% পুড়ে গেছে এবং তার অবস্থা আশংকামুক্ত নয়। তবে আক্রান্ত রোগী কথা বলছেন। এসময় কে বা কারা তাকে এসিড নিক্ষেপ করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে আলামিন আধো আধো স্বরে বলেন,তিনি নিজেও বুঝতে পারছেননা। তবে ঈদুল আযহা উপলক্ষে তার স্ত্রী আশা ৯ দিন রোযা রেখেছিলেন বলেও জানান তিনি।
রোববার (১১ আগস্ট) দিবাগত রাতে তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের চর কানাইদিয়া গ্রামের ছাত্তার গাজীর ছেলে আলামিন গাজী (৩২) ও তার স্ত্রী আশা ওরফে হাফসা বেগম রাতের খাবার খেয়ে ঘরের জানালা-দরজা আটকে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। আকস্মিক রাত আনু: ১ টার দিকে আলামিন তার শরীর জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে বলে চিৎকার করতে থাকলে পাশে ঘুমন্ত স্ত্রীসহ বাড়ীর অন্যান্যরা উঠে তাকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে রাতেই তাকে প্রথমে সাতক্ষীরা ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করে।
তবে তালাবদ্ধ ঘরে বাইরের লোক কিভাবে তার উপর এসিড ছুঁড়তে পারে এনিয়ে প্রথম থেকেই বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছিল। এবং ঘটনায় কোন তৃতীয় পক্ষ জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মূলত এসিডের পাত্রটি খুঁজে না পাওয়ায় ধারণা ক্রমাগত দৃঢ় হতে শুরু করেছে।
এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্র জানায়,উপজেলার চর কানাইদিয়া গ্রামের সাত্তার গাজীর ছেলে আলামিন গাজী পেশায় একজন রড মিস্ত্রী হিসেবে দীর্ঘ দিন যাবৎ ঢাকায় অবস্থান করছিল। অন্যদিকে তার স্ত্রী আশা ওরফে হাফসা বেগম প্রায় ৩ বছর যাবৎ সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে প্রবাসী ছিলেন। সেখানে উপার্জনের সব টাকাই তিনি তার স্বামীকে পাঠাতেন। একপর্যায়ে নিজ খরচে পরবর্তীতে তিনি তার স্বামী আলামিনকেও সৌদি আরবে নিয়ে যান। তবে সেখানে মাত্র ৩ মাসের কর্মজীবন ছেড়ে আলামিন ফের দেশে ফিরে আসেন।
দেশে ফিরে ২০১৭ সালের ৪ জুলাই তিনি টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার গুড়াকি গ্রামের আ: হালিমের স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে হালিমাকে বিয়ে করেন। গত বছরের ডিসেম্বরের দিকে আশা দেশে ফিরে স্বামীর সাথে একমাত্র ছেলে হুজাইফা (৮)সহ ঢাকাতেই অবস্থান করছিলেন। এরপর চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি আলামিন হালিমাকে শর্ত ভঙ্গ,মিথ্যাচারসহ নানা অভিযোগে নোটারী পাবলিক খুলনা হতে তালাক প্রদান করেন।
সর্বশেষ ঈদ করতে বুধবার তারা ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি কানাইদিয়ায় আসেন এবং রোববার দিবাগত রাতে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হন। এরপর স্ত্রী আশাকে পুলিশ আটক করে থানায় নেয়ার পর থেকে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী হালিমা সোমবার থেকে খুলনা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন সাবেক স্বামীর সেবা-শুশ্রুসার জন্য সেখানে অবস্থান করছেন। সব মিলিয়ে ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সময় নানা নতুন নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।