শরৎ এলো সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে
চারদিকে একটু চোখ বুলালেই এটা বুঝতে মোটেও কষ্ট হয় না যে, নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে প্রকৃতিতে এসেছে শরৎকাল। আজ পহেলা ভাদ্র। শরতের প্রথম দিন। বাংলা ঋতুর হিসাব অনুযায়ী ভাদ্র-আশ্বিন এই দুই মাস শরৎকাল। ঋতুচক্রের বর্ষ পরিক্রমায় বর্ষার বিষন্নতা পরিহার করে শরৎ আসে।
প্রকৃতি এ সময় নববধূর সাজে সজ্জিত হয়ে উঠে। শরতের মেঘহীন নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা কেড়ে নেয় প্রকৃতি প্রেমিকদের মন।
বিলে শাপলা, গাছে গাছে শিউলির মন মাতানো সুবাস অনুভূত হয় শরতের ছোঁয়া। শরতের রূপ যেনো শান্ত-স্নিগ্ধ-কোমল। যেখানে মলিনতা নেই, আছে নির্মল আনন্দ আর অনাবিল উচ্ছ্বাস।
কবি জীবনানন্দের ভাষায়, ‘যৌবন বিকশিত হয় শরতের আকাশে’।
শরতে শেফালি, মালতী, কামিনী, জুঁই, টগর আর সাদা সাদা কাশ ফুল মাথা উঁচিয়ে জানান দেয় সৌন্দর্য। মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে দেয় চার পাশে। গ্রামীণ প্রকৃতিতে শরৎ আসে সাড়ম্বরে। যদিও ইট-কাঠের নগরীতে শরৎ থেকে যায় অনেকটা অন্তরালে। আবার, এই শরতেই হয়ে থাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
গ্রামবাংলার দিঘিতে ফোটে পদ্ম ফুল, দিঘির পাশেই শেফালি গাছ। প্রভাতে গাছ থেকে ঝরে পড়ে শত শত শেফালি। এর সুগন্ধ মনে লাগায় ভালোবাসার রং। কেউ বা গাঁথে শেফালি ফুলের মালা। আবার কাশফুল যেন শরতেরই স্মারক।
শরতের নিজস্ব রূপবিন্যাসে আকাশ মাটি বন, বৃক্ষ নদীতরঙ্গ সবই যেন হয়ে উঠে অসাধারণ বর্ণময়। সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে, শুভ্র কাশের আঁচল উড়িয়ে, কণ্ঠে শেফালি ফুলের মালা দুলিয়ে শরৎ আসে প্রকৃতিজুড়ে। মাঠে মাঠে চিরসবুজ ধানক্ষেতের নয়নাভিরাম দৃশ্য, ধানের শীষে আগামী দিনের ফসলের মুকুল।
শরতের শান্ত ও স্নিগ্ধ এ রূপ মনে এক প্রশান্তি এনে দেয়। দিনের সোনালি রোদ্দুরের ঝিলমিলি আর রাতের ধবধবে জ্যোৎস্নার টানে মন হয়ে উঠে মাতোয়ারা।