কাশ্মীরের এই উপজাতির ‘প্রত্যেকেই’ ১২০ বছর বাঁচেন
ছবি মতোই সুন্দর পাকিস্তান অধ্যুষিত কাশ্মীরের গিলগিট-বাল্টিস্তান। এই প্রদেশের উত্তরে হুনজা উপত্যকা, একদিকে আফগানিস্তানের ওয়াকান করিডর ও অন্যদিকে চীনের শিনজিয়াং এলাকা। গিলগিট-বাল্টিস্তান উপত্যকাতেই বাস করে ‘হুনজা’ বা ‘বুরুশো’ নামে একটি জনগোষ্ঠী। যে গোষ্ঠীর মানুষরা চিরনবীন। যেখানে পুরো পাকিস্তানের গড় আয়ু ৬৭, সেখানে হুনজাদের গড় আয়ু ১২০ বছর!
২০০০ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী, হুনজা উপত্যকাতে প্রায় আট হাজার সাতশ’ জনের বাস। তারা ইসলাম ধর্মের শিয়া সম্প্রদায় ভুক্ত নিজামী ইসমাইলি ধারার অনুসারী। কথা বলেন বুরুশাসকি ভাষায়। স্থানীয়দের কথা, তারা একসময় হারিয়ে যাওয়া শাংগ্রিলা সাম্রাজ্যের বাসিন্দাদের উত্তরপুরুষ। যদিও তা অনেক গবেষক মেনে নিতে রাজি নন।
হুনজা জনগোষ্ঠীর মানুষরা কীভাবে চিরনবীন? প্রশ্নটা মনে আসতেই পারে। প্রাকৃতিকভাবেই বার্ধক্যকে ঠেকিয়ে রেখেছেন তারা। দিনে মাত্র দু’বার খাবার খান। সূর্য ওঠার পরে একটা ভারি ব্রেকফাস্ট ও সূর্যাস্তের পরেই হালকা ডিনার করে নেন। এর মাঝে আর কোনো খাবার খান না। তবে সম্পুর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খান এবং প্রত্যেকটি হুনজা পরিবার নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্যশষ্য ও সবজি নিজেরা উৎপাদন করে নেন।
তাদের খাদ্যতালিকায় থাকে প্রচুর পরিমাণে শুকনো অ্যাপ্রিকট (খোবানি), লেবু, বাদাম, শিম, ভুট্টা ও বার্লি। মাখন, পনির, ডিম ও দুধ তুলনায় কম খান হুনজারা। মাংস খেলেও বছরে এক-দুবার ভেড়া বা মুরগির মাংস। এছাড়াও তুমুরু নামের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর এক প্রকার উদ্ভিদের পাতা ফুটিয়ে চায়ের মতো পান করেন হুনজারা।
প্রাচীন রীতি মেনে, হুনজারা বছরে চার মাস শুকনো অ্যাপ্রিকট ফলের গুঁড়োর শরবত ছাড়া আর কিছু খান না। দুর্গম স্থানে বাস করার কারণে এবং বিভিন্ন কাজে প্রতিদিনই হুনজাদের প্রায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার হাঁটতে হয়। এ ছাড়া হুনজারা সব কথাতেই হাসেন। হাসি ঠাট্টা তামাসা তাদের জীবনের অন্যতম অঙ্গ। গোমড়ামুখের হুনজাকে দেখতে পাওয়া বিরল ব্যাপার।
হুনজা সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে ১৬৫ বছর বাঁচার রেকর্ডও রয়েছে। তাদের দেখতে বয়েসের তুলনায় অনেক তরুণ লাগে। একজন ৯০ বছরের বৃদ্ধও বাবা হওয়ার ক্ষমতা রাখেন। ৬০ থেকে ৭০ বছরের হুনজা মহিলাও অনায়াসে গর্ভবতী হন ও সুস্থ সন্তান প্রসব করেন। দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ ও উদ্বেগ হুনজাদের ডিকশনারিতেই নেই। হুনজারা কোনো কিছু নিয়ে সামান্যতম চিন্তাও করেন না।