বিপাকে ক্রেতারা, বাজারে মসলার দাম চড়া
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এ উৎসবে আত্মশুদ্ধির জন্য পশু কোরবানি দেয়ার নিয়ম প্রচলিত থাকায় প্রতিটি মুসলিম ঘরেই রান্না হয় বিভিন্ন পদের খাবার। ফলে ঈদের আগে থেকেই মসলার বাজারে বাড়তে থাকে সাধারণ মানুষের ভিড়। এ কারণে সারাদেশেই খুচরা ও পাইকারি বাজারে মসলার দামও যায় বেড়ে।
প্রতিবারের মতো এবারো ঈদের আগেই দাম বেড়েছে বিভিন্ন প্রকারের মসলার। এ জন্য পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের দুষছেন সাধারণ ক্রেতারা। তাদের অভিযোগ চাহিদা বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত মুনাফা করছে ব্যবসায়ীরা। যে কারণে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে।
শুক্রবার ঢাকার কারওয়ান বাজার ও মৌলভীবাজার ঘুরে দেখা গেছে, মসলা-ভেদে পাঁচশ’ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত করে বেড়েছে মসলার দাম। নিত্য প্রয়োজনীয় মসলার মধ্যে কেবল আদার দাম কিছুটা নাগালে রয়েছে। ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এ মসলাটি। তবে দেশি আদা ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বেচছে বিক্রেতারা।
সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সুগন্ধি মসলা এলাচের দাম। খুচরা বাজারে মসলাটি ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যারা পাইকারি কিনছেন তাদেরকেও এলাচের জন্য গুনতে হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। অথচ জুলাই মাসেও এলাচের দাম দুই হাজারের কম ছিলো বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পাইকারি ব্যবসায়ীদের লোভী মানসিকতাকে দায়ী করছেন তারা।
আবুল কাশেম নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, দাম পাইকাররা বাড়িয়েছে। আমাদের এখানে কিছুই করার নেই। এদের লোভের কারণে ঈদের আগে মসলা বাজার এমন অস্থিরতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ যারা আমাদের মতো নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত তারা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দরকারি মসলা কিনতে পারছেন না। পাইকাররা বাজারকে জিম্মি করে রেখেছে।
এদিকে কয়েকজন ক্রেতা ডেইলি বাংলাদেশের কাছে অভিযোগ করে বলেন, মসলার দাম এতো বেশি বেড়েছে যে নিজের জমিদারি না থাকলে মসলা কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থাতে বিক্রেতাদের স্বার্থ না দেখে সাধারণ মানুষের স্বার্থও দেখতে হবে। না হলে ঈদের আনন্দ সাধারণ মানুষদের জন্য ভোগান্তিতে রুপান্তর হবে।
এই আলাপের ফাঁকেই দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগেও খুচরা বাজারে ১১০ টাকায় বিক্রি হওয়া রসুন ১৫০ টাকা থেকে ১৭০ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও পাইকারি বাজারে লবঙ্গ ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা, কাঠ বাদাম ৮০০ টাকা, কাজু বাদাম কেজিতে ৮৫০ থেকে ১ হাজার টাকা, দারুচিনি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, জিরা ৩৪০ থেকে ৩৯০ টাকা, তেজপাতা কেজিতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, গোল মরিচ ৪৫০ থেকে ৫২০ টাকা, আলু বোখারা ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব মসলায় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।
পাইকারি বাজারে নিত্য ব্যবহার্য মসলার মধ্যে প্রতি কেজি গুঁড়া হলুদ ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা, আস্ত শুকনো হলুদ ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, গুঁড়া মরিচ ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা, শুকনো মরিচ ১৫০ টাকা, আস্ত ধনিয়া ১১০ টাকা, ধনিয়া গুঁড়া ১৩০ টাকা টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবও বলছে মসলার দাম বেড়েছে। তবে টিসিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দাম কমাতে প্রতিষ্ঠানটি চেষ্টা করলেও বিভিন্ন কারণে দাম কমানো সম্ভব হয়নি।