ভারতীয় লোকসভায় ‘ঐতিহাসিক বিল’ পাশ, ভাগ হলো কাশ্মীর

ভারতের রাজ্যসভায় বিজেপি আগেরদিনই উত্থাপন করেছিল জম্মু-কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করার ঐতিহাসিক বিল। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) লোকসভায় সেই বিল পাস করল দেশটির সাংসদরা। জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ নামে আলাদা দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার এই পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই স্থানীয়-বৈশ্বিক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার বিগত ৬৯ বছরের ইতিহাসকে পাল্টে ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনসহ বিশেষ অধিকার কেড়ে নেয়ার বিল জনসম্মুক্ষে আনে সোমবার। খবর এনডিটিভির।

খবরে বলা হয়, লোকসভায় পাসের পর এখন দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হবে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ। জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন সংক্রান্ত বিল রাজ্যসভায় পাস হওয়ার একদিন পরই লোকসভায় পাস হয় বিলটি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, জম্মু ও কাশ্মীরকে ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হবে। একটি হবে বিধানসভাযুক্ত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর, অপরটি হবে বিধানসভাবিহীন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, সীমান্ত সন্ত্রাসের কারণে সৃষ্টি হওয়া নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণেই জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

এর আগে সোমবার সকালে ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ৩৭০ ধারা বাতিলের প্রস্তাব করেন। সংসদের অনুমোদনের পরই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন।

রাষ্ট্রপতির সইয়ের সঙ্গে সঙ্গেই কাশ্মীরকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেয়া ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত হল। সেই সঙ্গে একটি স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের মর্যাদাও হারাল কাশ্মীর।

আইনটি পাস করার আগে থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দি করে রেখেছিল ভারত সরকার। পরে তাদের সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয়।

ভারতীয় সংবিধানের ৩৫-ক ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরের বাসিন্দা নয় এমন ভারতীয়দের সম্পদের মালিক হওয়া এবং চাকরি পাওয়ায় বাধা ছিল।

৩৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীরের এমন এক স্বায়ত্তশাসন রয়েছে যা ১৯৪৭ সালের পর দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো দেশের রাজ্য পায়নি।

অনুচ্ছেদ ৩৭০ ভারতীয় রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরকে নিজেদের সংবিধান এবং একটি আলাদা পতাকার স্বাধীনতা দিয়েছে। এ ছাড়া পররাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়াদি, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ বাদে অন্য সব ক্ষেত্রে স্বাধীনতার নিশ্চয়তাও দিয়েছে।

সংসদে ক্ষমতাসীন জোট সোমবার ধারা দুটি বাতিলের যে বিল উত্থাপন করে তা পাস হওয়ায় কাশ্মীরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দশা এখন ফিলিস্তিন কিংবা মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের মতো হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)