পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা:স্বামীকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত
সাতক্ষীরায় স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামী বিজন মণ্ডলকে (৪৭) দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছে আদালত। সোমবার দুপুর ১২টায় সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এক জনাকীর্ণ আদালতে এ আদেশ দেন। এ সময় আসামী বিজন মনডল কাঠগোড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
ফাঁসির দন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামী বিজন মণ্ডল আশাশুনি উপজেলার গোয়ালডাঙা গ্রামের মনোহর মন্ডলের ছেলে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে আশাশুনি উপজেলার ফকরাবাদ গ্রামের অনিল কৃষ্ণ মণ্ডলের মেয়ে কঙ্কাবতী মণ্ডলের(৪০) সঙ্গে একই উপজেলার গোয়ালডাঙা গ্রামের মনোহর মণ্ডলের ছেলে বিজন মণ্ডলের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছর পর প্রতিবেশী দীপক মণ্ডলের স্ত্রী সন্ধ্যা রানী মণ্ডলের সাথে বিজন পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এর প্রতিবাদ করায় স্ত্রী কঙ্কাবতীর সঙ্গে স্বামী বিজনের প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকতো। এরই জের ধরে ২০১৭ সালের ১০জুন রাত ১১টার দিকে বিজন তার স্ত্রী কঙ্কাবতীর মুখমণ্ডল ও নাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে জ্ঞান হারিয়ে যায় কঙ্কাবতীর। এরপর বিজন তার স্ত্রীকে গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর কঙ্কাবতীর লাশ বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ে বাথরুমের সামনে আম গাছে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার প্রচার দেয় স্বামী বিজন ও তার পরিবারের সদস্যরা। লোকমুখে খবর পেয়ে পরদিন ১১ জুন সকালে বিজনের বাড়িতে যেয়ে কঙ্কাবতীর রক্তাক্ত লাশ দেখতে পায় তার বাবা অনিল কৃষ্ণ মণ্ডল ও তার স্বজনরা। একপর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রামবাসীর সামনে বিজন তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে তাকে পুলিশে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা অনিল কৃষ্ণ মণ্ডল বাদি হয়ে ১১ জুন রাতে জামাতা বিজন কুমার মন্ডলসহ অজ্ঞাতনামা তিন জনের বিরুদ্ধে আশাশুনি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরদিন ১২ জুন বিজন সাতক্ষীরার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ জাহিদ হোসেনের কাছে পরকীয়া প্রেমে বাধা দেওয়ার কারণে স্ত্রীকে নির্যাতন চালিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক ২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এজাহারভুক্ত বিজন মণ্ডলের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলার নয়জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও নথি পর্যালোচনা শেষে আসামী বিজন মণ্ডলের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে হত্যার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক শেখ মফিজুর রহমান তার ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু দ্বন্দ্ব কার্যকর করার আদেশ দেন।
আসামী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাড. মিজানুর রহমান পিণ্টু ও অ্যাড. আসাদুজ্জামান। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. তপন কুমার দাস।
20
