জেলাব্যাপী জমে উঠেছে কোরবানির পশুর বাজার
আহাদুর রহমান (জনি):
আর কিছু দিন পরই ঈদ-উল-আযহা। মুসলমানরা এ দিন মহান আল্লাহ তায়লার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করে। সেই জন্য আযহার কিছু দিন আগে থেকেই জমে উঠে কোরবানি যোগ্য পশুর হাট। সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ঈদ পালনের পরদিন বাংলাদেশে ঈদ পালন করতে দেখা যায়। তাই মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য ১১ আগস্ট ঈদ হলে পরদিন ১২ আগস্ট বাংলাদেশে ঈদ হওয়ার কথা। সে অনুযায়ী প্রস্তুত আছে ৫৬২৭৯ কোরবানি যোগ্য পশু।
ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে জেলা ব্যাপী ১২,৭৩৩ জন খামারির কাছে মোট ৫৬,২৭৬ টি বিভিন্ন প্রকার কোরবানি যোগ্য পশু আছে। জেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের তথ্যানুযায়ী সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৮,১৩০টি গরু ও ৩,৩৪৮টি ছাগল, কলারোয়া উপজেলায় ৫,২৮৫টি গরু ও ৫,৩২২টি ছাগল, তালা উপজেলায় ৭,১৬৩টি গরু ও ৪,১৮৬টি ছাগল, আশাশুনি উপজেলায় ২,৯৯৩টি গরু ও ২,০৫২টি ছাগল, দেবহাটা উপজেলায় ১,১৫৫ টি গরু ও ১,১৮৬ টি ছাগল, কলিগঞ্জ উপজেলায় ২,৮১১টি গরু ও ৩,৮২৬টি ছাগল, শ্যামনগর উপজেলায় ৩,০৩৬টি গরু ও ৫,৭৪৩টি ছাগল সহ সব মিলিয়ে ৩০,৫৭৩ টি গরু ও ২৫,৭০৩টি ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে।
সখের, মৌসুমী ও বাণিজ্যিক খামারিরা এসব গরু পালন করছেন। তবে বিগত বাজার গুলোয় লোকসানের মুখে পড়ায় এখন আর ক্ষতিকর স্টেরয়েড বা অন্য কোন ধরনের মোটাতাজা করণ ওষুধ খাওয়াচ্ছেন না খামারিরা। সাধারণত ক্ষুদ, কুড়া, পালিস, ভুসি, খৈল ইত্যাদির সাথে ঘাস দিয়ে গরু মোটাতাজা করছেন তারা। তবে এবার ভারত থেকে গরু পাচার বন্ধ থাকায় আশানুরূপ দাম পাবেন এমনই আশা খামারিদের।
সদরের কাশেমপুর গ্রামের গরু খামারি রনি জানান, ‘এবছর আমি চারটি গরু পালন করছি। প্রাকৃতিক ভাবে প্রাপ্ত খাদ্য দিয়েই আমি মোটাতাজা করছি। প্রাকৃতিক খাদ্যের খরচও কম ফলও ভাল। আর বাজার চড়া থাকায় ভাল দাম পাব আশা করছি।’
দেবনগর গ্রামের সাইদুর রহমান বলেন, ‘কোরবানিতে বিক্রি করার জন্য আমার পাঁচটি গরু আছে। ইতোমধ্যে আমি একটি বিক্রি করে দিয়েছি। বাকি চারটি বিক্রির অপেক্ষায় আছে। বাজার অনেক চড়া। হয়তো প্রথমবারের মত কষ্ট অনুযায়ী গরুর দাম পাব।’
বেশ কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা যায় কোরবানি যোগ্য পশুর বেচা-বিক্রি খুব বেশি। স্বাভাবিক ভাবেই তাই দামও একটু বেশি। তবে খামারি সহ গরুর ব্যবসায় সংশ্লিষ্টরা আশংকা করছেন অবৈধ ভাবে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ না হলে অচিরেই ক্ষতির মুখে পড়বে তারা। এদিকে বাজার চড়া থাকায় পশু ক্রয়ে একটু ঢিল দিয়েছেন ক্রেতারা। অধিকাংশ ক্রেতাই জানান ঈদের কাছাকাছি কোন এক সময়ে কোরবানির পশু ক্রয় করবেন।
কাপড় ব্যবসায়ী মিলন হোসেন জানান, চেষ্টা করেছিলাম একটি গরু কেনার জন্য কিন্তু দাম অনেক বেশি হওয়ায় কিনতে পারিনি। তবে ঈদের কাছাকাছি কেনার চেষ্টা করব।
ভারত থেকে অবৈধ ভাবে গরু আসা ঠেকানো প্রসঙ্গে ৩৩ বিজিবির অধিনায়ক মোহাম্মদ গোলাম মহিউদ্দিন খন্দকার বলেন, ‘অবৈধভাবে যেন গরু না আসে তাই আমরা টহল জোরদার করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে চেকপয়েন্ট বসিয়ে নজরদারি বৃদ্ধি করেছি। ’
এদিকে পশুর হাটে রুগ্ন ও স্টেরয়েড দিয়ে মোটাতাজা করা গরু কেনা থেকে ক্রেতাদের বাচাতে জেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর থেকে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ব্যবস্থা। এ লক্ষ্যে প্রত্যেকটি হাট বাজারে থাকবে কড়া নজরদারি ও মেডিকেল টিম।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অসুস্থ ও বিভিন্ন স্টেরয়েড ব্যবহার করে মোটাতাজা প্রাণি চিহ্নিত করতে প্রতিটি পশুর হাটে মেডিকেল টিম থাকবে। ক্রেতাদের মনে সন্দেহ হলেই মেডিকেল টিমের মাধ্যমে যাচাই করে প্রাণি ক্রয় পরামর্শ দেন তিনি।’