দেবহাটায় সুদখোর বিশ্বনাথের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারন মানুষ:থানায় অভিযোগ
দেবহাটায় বিশ্বনাথ ঘোষ (৪০) নামের এক সুদখোরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে গাজীরহাট, রামনাথপুর, দেবীশহর, বড়হুলা সহ আশপাশের কয়েক গ্রামের সাধারন মানুষ। সুদখোর বিশ্বনাথ ঘোষ বর্তমানে দেবহাটা উপজেলার রামনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং সদরের হাড়দ্দাহ গ্রামের মৃত শৈলেন্দ্র নাথের ছেলে।
বিগত প্রায় ১০ বছর আগে রামনাথপুর গ্রামে বসবাস শুরুর সাথে সাথে বিশ্বনাথ ঘোষ এলাকার অসহায় সাধারন মানুষদের অসহায়ত্বের সুয়োগ নিয়ে চক্রবৃদ্ধি হারে চড়া সুদের বেড়াজালে জড়িয়ে রমরমা সুদের ব্যবসার মাধ্যমে মানুষকে সীমাহীন হয়রানী ও সর্বশান্ত করে আসছে।
বিশ্বনাথের সুদের জালে জড়িয়ে এপর্যন্ত ভিটেমাটি বিক্রি করে সর্বশান্ত হয়েছেন এলাকার অনেকেই। আবার সুদ-আসল সহ সমুদয় টাকা পরিশোধের পরেও সুদখোর বিশ্বনাথের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বেশ কয়েকজন দেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ি দিয়েছে বলেও জানিয়েছে এলাকাবাসী। সুদখোর বিশ্বনাথের থেকে টাকা ঋন নিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ সহ সমুদয় টাকা ফেরত দিয়েও তার হয়রানী ও অত্যাচার থেকে রেহাই পায়না কেউই। টাকা পরিশোধের পর অসহায়দের থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত সহ তাদেরকে হুমকি ধামকি দিতে থাকে সে। এমনকি পরবর্তীদে গ্রাহকদের ব্যাংকের চেকের পাতায় (স্বাক্ষরকৃত ব্লাঙ্ক চেক) নিজের ইচ্ছে মতো লক্ষ লক্ষ টাকার অংক বসিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়ানো সহ অসহায় মানুষদের হয়রানীর একাধিক অভিযোগও রয়েছে সুদখোর বিশ্বনাথের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি আবারো উপজেলার রামনাথপুর গ্রামের মনোহর সরকারের ছেলে বিপ্লব সরকার (২৮) কে ভয়ভীতি প্রদর্শন, হয়রানী ও মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে যাচ্ছে সে। এঘটনায় শুক্রবার (১২ জুলাই) ভুক্তভোগী বিপ্লব সরকার বাদী হয়ে সুদখোর বিশ্বনাথ ঘোষের বিরুদ্ধে দেবহাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। দায়েরকৃত অভিযোগে বিপ্লব সরকার জানান, বিগত কয়েক মাস আগে বিপদে পড়ে সুদখোর বিশ্বনাথ ঘোষের থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋন নিতে যান তিনি।
এসময় তার অসহায়ত্বের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে টাকা নিতে হলে ব্যাংকের নিজ নামীয় একাউন্টের ব্লাঙ্ক চেক (স্বাক্ষরকৃত চেকের খালি পাতা) রাখতে হবে বলে শর্ত দেয় বিশ্বনাথ। কোন উপায় না পেয়ে অগ্রনী ব্যাংকের গাজীর হাট শাখার নিজ নামীয় একাউন্টের (হিসাব নং-০২০০০০৭৮৪২৬৪৮) একটি স্বাক্ষরিত ব্লাঙ্ক (খালি) চেকের পাতা (নং-১১৭২১৩৬৭২২৫) বিশ্বনাথের কাথে জমা দিয়ে ৩০ হাজার টাকা ঋন নেয় বিপ্লব। পরে ঋনের ৩০ হাজার টাকার উপর চক্রবৃদ্ধি হারে হাজার ১৫০ টাকা সুদ দিতে হবে বলে চাপ দিতে থাকে বিশ্বনাথ।
একপর্যায়ে চাপ সহ্য করতে না পেয়ে ঋনের ৩০ হাজার এবং চক্রবৃদ্ধি হারের সুদ ১৫ হাজার টাকা সহ মোট ৪৫ হাজার টাকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পরিশোধ করে দিয়ে বিশ্বনাথের কাছে থাকা তার স্বাক্ষরিত চেকের পাতাটি ফেরত চায় বিপ্লব। কিন্তু তার চেকের পাতাটি হারিয়ে গেছে সহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে হয়রানী এবং অতিরিক্ত টাকার দাবী জানানোর পাশাপাশি দাবীকৃত টাকা না দিলে স্বাক্ষরিত ওই চেকের পাতায় ইচ্ছে মতো টাকার অংক বসিয়ে বিপ্লবকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে যাচ্ছে সুদখোর বিশ্বনাথ। তাই হয়রানী থেকে রেহাই এবং নিজের ব্লাঙ্ক চেকের পাতা ফেরত পাওয়ার পাশাপাশি সুদখোর বিশ্বনাথের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়ে দেবহাটা থানায় লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুদখোর বিশ্বনাথ ঘোষ জানায়, বিপ্লব সরকারের বন্ধু উজ্জলের কাছে আমি টাকা পাবো। তাই বিপ্লব সরকারের চেক আটকে রেখেছি। তবে একজনের ঝামেলার কারনে অন্য নীরিহ ব্যাক্তির চেক আটকে হয়রানীর যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যায় বিশ্বনাথ। এব্যাপারে দেবহাটা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) উজ্জল কুমার মৈত্র জানান, বিপ্লব সরকার নামের এক ভুক্তভোগী সুদখোর বিশ্বনাথের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগটি তদন্ত পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।