শ্যামনগরে দুই শিক্ষার্থী গণধর্ষণের শিকার থানায় মামলা করলেও অন্য ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ
শ্যামনগর উপজেলার নুরনগর মহিলা দাখিল মাদ্রাসা এবং গাবুরার চাঁদনীমুখা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যার একটিতে গণধর্ষণের শিকার ছাত্রীর পরিবার শ্যামনগর থানায় মামলা করলেও অন্য ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
এরআগে গত ১৪ ও ১৫ জুলাই আটুলিয়া এবং রমজাননগর এলাকার দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের ভিন্ন দুটি ঘটনা ঘটে। এসময় ধর্ষণের শিকার কিশোরীদের পরিবারের পক্ষ থেকে শ্যামনগর থানায় দু’টি মামলা দায়েরের পর পুলিশ রাসেল গাজী এবং মফিজুল ইসলাম নামের দুই জনকে গ্রেপ্তারও করে।
ধর্ষিতার পরিবার ও পুলিশসহ স্থানীয় সুত্রে জানা যায় গত ১৫ জুলাই সোমবার মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে নুরনগর মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে দুরমুজখালী কুলতলী গ্রামের আব্রাহাম গাজীর ছেলে আমিনুর রহমানসহ তার কয়েক সহযোগী অপহরণ করে। মেয়েটির খালা দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দুরবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন-দাবি করে তারা ঐ ছাত্রীকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে পানির সাথে চেতনানাশক ঔষধ খাইয়ে মেয়েটিকে সঙ্গাহীন অবস্থায় সাতক্ষীরা রাজ্জাক পার্ক সংলগ্ন একটি বাসায় আটকে রাখে।
এসময় আমিনুর ও একই এলাকার মঈন উদ্দীনসহ অপরিচিত ৩/৪ জন মেয়েটির উপর রাতভর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে সকালের আলো ফোটার আগে শ্যামনগরের দুরমুজখালী গ্রামের নজরুল ইসলামের বাড়ির সামনে ফেলে যায়। পরক্ষণে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে নির্যাতনের শিকার কিশোরীর পিতা মাতা ঘটনাস্থলে পৌছে মেয়েটিকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়। বিষয়টি অবহিত হয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান বখতিয়ার আহমদ মেয়েটিসহ তার পরিবারকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রেরণের পর মেয়েটির মা বাদি হয়ে ১৮ জুলাই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আমিনুর ও মঈন উদ্দীনসহ অজ্ঞাত ৩/৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সংশোধনী) ০৩ এর ৭/৯(১)/৩০ধারা অপহরণ, জোরপূর্বক ধর্ষণ ও সহায়তার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলা নং ২২।
নির্যাতনের শিকার কিশোরী সংবাদকর্মীদের সামনে আরও অভিযোগ করেন পাশবিক নির্যাতন শেষে একটি ভাড়ায় চালিত মটরসাইকেলযোগে তাকে বাড়িতে পাঠায় পাষন্ডরা। এক পর্যায়ে কালিগঞ্জের পাউখালী এলাকায় পৌছে ঐ মাটর সাইকেল চালকও তার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তার উপর অত্যাচার করে। গণধর্ষণের শিকার মেয়েটিসহ তার পরিবার দ্রুত সময়ের মধ্যে ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছে। পুলিশ সুত্র জানিয়েছে মামলা দায়েরের পর থেকে পালিয়ে থাকা ধর্ষকদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে।
এদিকে শ্রেণি শিক্ষক কতৃক গাবুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর প্রায় তিন সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও অদ্যাবধি বিচার না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছে ঘটনার শিকার ছাত্রী ও তার পরিবার। তাদের অভিযোগ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল তদন্ত টিম গঠনের নামে কালক্ষেপন করে ন্যাক্কারজনক ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
পরিবারটির অভিযোগ চাঁদনীমুখা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ঐ ছাত্রীকে পাশের বাড়িতে প্রাইভেট পড়াত একই বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রকাশ কুমার মন্ডল। এক পর্যায়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে রমজান মাসে ঐ শিক্ষক মেয়েটির সাথে খারাপ আচারন করে। পরবর্তীতে গত ১ জুলাই প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পর কেউ না থাকার সুযোগে তিনি মেয়েটির উপর দ্বিতীয়বারের মত পাশবিক নির্যাতন চালায়। এসময় লম্পট শিক্ষকের বিচার দাবি জানিয়ে ধর্ষনের শিকার ছাত্রীর পিতা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট অভিযোগ করলে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়।
পাশবিক নির্যাতনের শিকার ছাত্রী ও তার পরিবারের অভিযোগ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ পরিচালনা পর্ষদের লোকজন অত্যান্ত প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে আইনি সহায়তা নিতে পারছেন না তারা।
তবে স্থানীয় একটি সূত্র দাবি করেছে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা বিষটি অবহিত হওয়ার পর প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পান। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে সময় ক্ষেপন করে সংশ্লিষ্টরা ঐ শিক্ষককে বাঁচাতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটির পিতা প্রতিবেদকসহ সংবাদকর্মীদের কাছে দাবি করেন, তিনি লম্পট ধর্ষক শিক্ষকের বিচার চান। কিন্তু স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী মহলের ভয়ে আইনী পদক্ষেপ দিতে সাহস পাচ্ছেন না।
যদিও এতদসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দৈনিক পত্রদূত পত্রিকায় গত ১৪ জুলাই প্রকাশের পর অভিযুক্ত শিক্ষক পরের দিন পত্রিকা অফিসে একটি প্রতিবাদ লিপি পাঠিয়ে স্বীকার করেন এমন একটি অভিযোগ ওঠায় বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। একই সাথে তিনি স্বীকার করেন যে অভিযোগ তোলা ছাত্রীর পিতা লিখিতভাবে ৩ জুলাই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট তার মেয়ের সাথে পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগের বিচার প্রার্থনা করেছন।
এবিষয়ে কথা বলার জন্য প্রধান শিক্ষকের ব্যবহৃত ফোন নম্বরে বার বার চেষ্টা করা সত্ত্বেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে এমন অভিযোগের পরও একজন অভিযুক্তকে স্বপদে বহাল রেখে বিদ্যালয় কতৃপক্ষ নামকাওয়াস্তে তদন্ত করছে বলে অভিযোগ তুলেছে স্থানীয়রা। তাদের দাবি মূলত অভিযুক্ত শিক্ষকে রক্ষা করতে কোমলমতি শিক্ষার্থীর জীবনে কালিমা লেপনকারী শিক্ষক নামের ঐ লম্পটকে আড়াল করতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উঠেপড়ে লেগেছে।