চোখ খুলে মা ডেকেছে ছিনতাইকারীদের হামলায় আহত ভ্যান চালক শাহীন

ছিনতাইকারীদের হামলায় আহত শাহীন জ্ঞান ফিরে মাকে ডেকেছে। গত ২৮ জুন শুক্রবার সাতক্ষীরায় যশোরের কেশবপুরের গোলাখালী মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শাহীনকে গুরুতর আহত করে তার ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি ছিনিয়ে নেয়ন দুর্বৃত্তরা। মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে এরপর থেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন শাহীন। হতভাগা এই কিশোরের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

শনিবার বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আইসিইউতে শাহীনের মা মোছা. খাদিজা বেগম বলেন, শাহীনের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। ছেলে আমার চোখ খুলেছে, মা ডেকেছে।

ছেলের জন্য দোয়া চেয়ে খাদিজা বেগম বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য যা করেছেন তার কৃতজ্ঞতা শেষ করার নয়। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ। আপনারা আমার একমাত্র ছেলে, আমার আদরের ধন শাহীনের জন্য দোয়া করবেন। সে যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে। তাকে যেন দ্রুত বাড়ি নিয়ে যেতে পারি। আর যারা আমার ছেলেকে কুপিয়েছে তাদের কঠিন শাস্তি দাবি করছি।

হাসপাতালে থাকা শাহীনের খালু রবিউল বাশার বলেন, ঘটনার আগের দিন সন্ত্রাসীরা শাহীনকে ফোন করে শুক্রবার সাতক্ষীরার কলারোয়ায় যাওয়ার জন্য ভ্যানটি ভাড়া নেয়। পরে ৩৫০ টাকা ভাড়ায় চুক্তিতে শাহীন ভ্যান নিয়ে কেশবপুর বাজার থেকে নাইমুলসহ তিনজনকে তুলে নেয়।

পরে ভ্যানটি কেশবপুর হাসপাতালের সামনে সড়ক দিয়ে সরসকাটি চৌগাছা হয়ে ধানদিয়া জামতলা মোড়ে পাশে ফাঁকা জায়গায় গেলে তারা শাহীনের ওপর হামলা করে। এক পর্যায়ে ভ্যানের সিটের লোহার সঙ্গে শাহীনের মাথা থেতলে দেয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে। সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী প্রফেসর ডা. রুহুল হক এমপি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগাযোগ করে শাহীনকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা প্রদানের নির্দেশ দেন। শাহীনকে ঢাকায় নিয়ে আসার পর অনেকেই বিশেষ করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

শাহীনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আইসিইউ-এর চিকিৎসক ইব্রাহিম খলিল বলেন, শাহীনের খুব দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। এখানে তার চিকিৎসার ব্যাপারে সার্বক্ষণিক দেখভাল করা হচ্ছে। শুধু তার দেখা শোনার জন্য দু’জন সেবিকা নিয়োজিত রয়েছেন। আশা করছি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে শাহীন।

এদিকে কিশোর ভ্যানচালক শাহীন মোড়লের ভ্যান ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই সঙ্গে শাহীনের ভ্যানটিও উদ্ধার করা হয়েছে।

শাহীনকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির পর থেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তার খোঁজখবর রাখছেন। হাসপাতালে অবস্থান করা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমিসহ অনেকেই শাহীনকে ঢাকায় আনার পর থেকেই তার পাশে রয়েছি। শাহীনের ঘটনায় যারা দোষী তাদের প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আমরা চাই। পাশাপাশি শাহীনের ইস্যুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে কাজ করেছে অন্যদের বেলাতেও সেই তৎপরতা থাকলে সমাজের অপরাধ অনেকটাই কমে যাবে।

শাহীন যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের হায়দার আলী মোড়ল এবং খাদিজার একমাত্র ছেলে। পরিবারে তার দুটি বোনও রয়েছে। সে কেশবপুরের গোলাখালী মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি সে বাবার ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি চালাতো। এটি তাদের পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)