কালিগঞ্জ সরকারি কলেজ সরকারিকরনের নাম করে শিক্ষক-কর্মচারিদের নিকট থেকে অর্থ আত্মসাৎ, তদন্ত সম্পন্ন

কালিগঞ্জ সরকারি কলেজ সরকারিকরনের নাম করে শিক্ষক-কর্মচারিদের নিকট থেকে অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগে তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

সোমবার (৮ জুলাই) মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চল খুলনা’র পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ হারুণ অর-রশিদ ও সহকারি পরিচালক প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান সরজমিন কলেজে এসে তদন্ত সম্পন্ন করেন।

জানা যায়, কালিগঞ্জ কলেজ সরকারিকরনের নাম করে শিক্ষক-কর্মচারিদের নিকট থেকে অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ এনে গত ২১ মার্চ কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক শেখ মোজাফ্ফর হোসেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

লিখিত ওই অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনকল্যান শিক্ষানীতির অংশ হিসেবে দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং একটি কলেজ সরকারিকরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ লক্ষ্যে কলেজের প্রাক্তন সভাপতি সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দার ও কালিগঞ্জ কলেজ পরিচালনা পর্যদের একান্ত প্রচেষ্টা সরকারি নিতিমালা অনুযায়ী সার্বিক বিবেচনায় উপজেলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কালিগঞ্জ কলেজটি সরকারিকরনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়।

এর ধারাবাহিকতায় গত ৮/৮/১৮ খ্রি. তারিখে ২৭১ টি কলেজ সরকারিকরনের তালিকা প্রকাশিত হয়। ওই তালিকায় কলেজটি ২৪৩ নম্বর ক্রমিকে স্থান পায় এবং সরকারিকরন হয়। কিন্তু কলেজের মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক মিত্র তাপস কুমার, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা (বিএম) শাখার কম্পিউটার অপারেশন বিষয়ের প্রভাষক বেলাল সিদ্দিকসহ কয়েকজন শিক্ষক অর্থ আত্মসাৎ এর উদ্দেশ্যে নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারিদের নিকট থেকে কলেজ সরকারিকরনের নাম করে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক-কর্মচারিদের বয়স ও চাকুরির সময়কাল হিসেব করে জনপ্রতি সর্বনি¤œ ৬০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ব্যাক্তি বিশেষ ক্ষেতে ৮০/৯০ হাজার টাকা এবং কর্মচারিদের নিকট থেকে ১৫/২০ হাজার টাকা হারে সুকৌশলে আদায় করে।

অথচ ওই সময়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয় কর্তৃক সরকারিকরনের জন্য কোথাও কোন আর্থিক লেনদেন করা যাবে না মর্মে নির্দেশনা ছিলো। যাহা বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। অধ্যক্ষ জিএম রফিকুল ইসলাম কলেজ সরকারিকরনের জন্য সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদক , জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পদকের ডিও লেটারসহ সূধী, অভিভাবক, শিক্ষক-কর্মচারি, ছাত্র/ছাত্রীসহ সকলের মতামত ও সাক্ষরিত কাগজপত্র নিয়ে গত ০৫/০৫/১৫ খ্রি. তারিখে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবের দপ্তরে দরখাস্ত দাখিল করেন।

এর প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ জিএম রফিকুল ইসলামের একক অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে গত ৩১/০৫/১৫ খ্রি. তারিখ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিচালক আবুল কালাম শামসুদ্দিন কলেজ সরকারিকরনের চিঠি এবং গত ২২/০৬/১৫ খ্রি. তারিখে কালিগঞ্জ কলেজ সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয় হতে কাউছার নাসরীন, সিনিয়ন সহকারি সচিব কর্তৃক সাক্ষতির চিঠি পাওয়া যায়।

কিছুদিন পর মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে কলেজ পরিদর্শনের জন্য সরবরাহকৃত যাবতীয় কাগজপত্র অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম কলেজে নিয়ে আসেন। ওই সময়ে অধ্যক্ষের এই সকল কার্যক্রমকে জাল ভূয়া ও বানোয়াট বলে বিএম শাখার শিক্ষক বেলাল সিদ্দিক তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে এবং শিক্ষক-কর্মচারিদের নিকট বিভ্রান্ত সৃষ্টি করে।

এমনকি কলেজের গন্ডি পেরিয়ে বাহিয়ের বিভিন্ন জায়গায় সে এ ব্যাপারে লোকজনদেরকে অপব্যাখা ও নানা ধরণের অপপ্রচার ছড়িয়ে কলেজের ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে।

এবিষয়ে গত ০৮/০৮/১৬ খ্রি. তারিখে ১৭ নম্বর সভায় কলেজ পরিচালনা পর্যদের মিটিংয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষক বেলালকে শোকজ করা হয়। যা আজও নিষ্পত্তিহীন অবস্থায় আছে।

তাছাড়া বেলাল সিদ্দিক সকলকে বিভ্রান্ত করে কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে গোপনে শপথ পড়িয়ে জোট তৈরি করে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান তৈরি করে। বেলাল সিদ্দিক ও মিত্র তাপস কুমার কয়েকজন শিক্ষককে সাথে নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারিদের নিকট থেকে কলেজ খুবি শিঘ্রই ডিট অফ গিফট হবে এবং সবার আগে আদালা ভাবে সরকারিকরন হবে এই বলে তারা একাধিকবার বিভিন্ন তারিখ উল্লেখ করতে থাকেন। কিন্তু তাদের দেওয়া কোন তারিখ অনুযায়ী ডিট অফ গিফট হয়নি। কলেজ সরকারিকরনের জন্য ঢাকায় তদ্বির বাবদ লোক রয়েছে বলে তারা শিক্ষক-কর্মচারিদের জানায়।

এসময় কিছু শিক্ষক আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে বেলাল সিদ্দিক গং এর চাহিদা মোতাবেক টাকা দিতে অক্ষমতার কথা বারবার জানালেও তাতে কর্ণপাত না করে বেলাল গং টাকা দিতে বাধ্য করে। এমনকি তারা অধ্যক্ষকের নিকটও ধার্য কৃত টাকা দাবি করে। কিন্তু অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম কোন টাকা দিতে রাজি হয়নি। এরপর বেলাল সিদ্দিক গং অধ্যক্ষকে বাদ দিয়ে কোন প্রকার সম্পর্ক না রেখে গোপনে শিক্ষকদের নিয়ে জোট করে। যারা টাকা দিতে চায়নি তাদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করে। এভাবে দফায় দফায় বিভিন্ন ভূয়া খরচ দেখিয়ে শিক্ষক-কর্মচারিদের নিকট থেকে প্রায় ১৭ লক্ষাধিক টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করে বলে অভিযোগে শেখ মোজাফ্ফার উল্লেখ করেছেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)