‘পপ কিং’ মাইকেল জ্যাকসনের আজ দশম মৃত্যুবার্ষিকী
মাইকেল জ্যাকসনকে এখনো মনে রেখেছে তামাম দুনিয়া। ‘পপ কিং’ বলে কথা! আজ তার দশম মৃত্যুবার্ষিকী। মাত্রাতিরিক্ত প্রপোফল সেবনে ২০০৯ সালের ২৫ জুন মৃত্যুবরণ করেন তুমুল জনপ্রিয় মার্কিন এ পপ গায়ক, গীতিকার, নৃত্যশিল্পী, অভিনেতা ও ব্যবসায়ী। তবে সত্যিই কি মৃত্যু হয়েছে তার? তিনি তো বেঁচে আছেন সবার হৃদয়ে!
সংগীতবিশ্বকে বদলে দেয়া এই মানুষটির জন্ম ১৯৫৮ সালের ২৯ আগস্ট। ইন্ডিয়ানার গ্যারিতে এক বর্ধিষ্ণু কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারে মাইকেল জ্যাকসনের জন্ম। দারিদ্রপীড়িত পরিবারটির কর্তা ও মাইকেলের বাবা জোসেফ ওয়াল্টার জ্যাকসন তার ছেলেদের সঙ্গীত প্রতিভা নিয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন। ছেলেদের দিয়ে গানের দল বানিয়ে আয়ের পথও বের করে ফেলেন তিনি। বাবার হাত ধরেই চার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে মাত্র ৬ বছর বয়সে পেশাদার জগতে পা রাখেন তিনি।
তখন কে জানতো এই বিস্ময় বালক একদিন পৃথিবীতে সঙ্গীতের জগতে রাজত্ব করবেন! এককভাবে কাজ করেন ৭১ সালে। ১৯৭৯ সালে মুক্তি পায় মাইকেলের পঞ্চম একক অ্যালবাম ‘অফ দ্য ওয়াল’। পপ আর ফাংক ধাঁচের অ্যালবামটি সাড়া ফেলে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গীতাঙ্গনে। তবে বিশ্বজুড়ে উন্মাদনা ছড়ান ১৯৮২ সালে। সে বছর তার ‘থ্রিলার’ অ্যালবাম ভেঙে দেয় পৃথিবীর সব রেকর্ড। এছাড়া অলটাইম হিটসের তালিকায় আছে – অফ দ্য ওয়াল (১৯৭৯), ব্যাড (১৯৮৭), ডেঞ্জারাস (১৯৯১) এবং হিস্টরি (১৯৯৫)।
জ্যাকসনের ‘অন্ধকার দিক’
রাডার অনলাইন নামের এক এন্টারটেনমেন্ট ম্যাগাজিনের মতে, দৃশ্যত মাইকেল জ্যাকসনের কাছে ‘অন্ধকার দিকের’ এক বিশাল সংগ্রহ ছিল। এরমধ্যে অন্যতম ছিল পর্নোগ্রাফি, জীবজন্তুদের উপর নিপীড়ন, স্যাডো-ম্যাসোকিজম আর শিশুদের উপর অত্যাচার সংক্রান্ত মিডিয়া! এই সব নথিপত্র নাকি ২০০৫ সালে জ্যাকসনের বিরুদ্ধে শিশু নিপীড়ন মামলার শুনানিতে পেশ করা হয়েছিল৷ পরে সেই নথিপত্র আর প্রকাশ করা হয়নি৷
পুলিশ বিভাগের এক তদন্তকারী নাকি রাডার অনলাইনকে বলেছেন যে, ‘এই নথিপত্র থেকে জ্যাকসনের এক অন্ধকার ও ভীতিকর ছবি ফুটে ওঠে৷ এই সব নথিপত্র জ্যাকসনকে একজন সুনিপুণ, মাদক ও যৌনতায় আসক্ত শিকারি হিসেবে তুলে ধরে, যিনি পশুহত্যার রক্তাক্ত, যৌন উদ্দীপনাময় ছবি ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বিকৃত যৌন সম্পর্কের ছবি দেখিয়ে শিশুদের নিজের বশে আনতেন।’
২০০৩ সালে মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। সে বছর পুলিশ তার ক্যালিফোর্নিয়ার খামারবাড়ি ‘নেভারল্যান্ড’-এ তল্লাশি চালায়। খামারবাড়িটির নামানুসারে তথ্যচিত্রের নামকরণ করা হয়েছে। জ্যাকসনের তত্ত্বাবধায়কদের দাবি, তথ্যচিত্রে ওয়েড রবসন ও জেমস সেফচাককেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, জ্যাকসনের ঘনিষ্ঠরা সেখানে উপেক্ষিত। তথ্যচিত্রটি একপেশে। জ্যাকসন কখনোই শিশুদের সঙ্গে বাজে আচরণ করতেন না।
ব্যক্তি জ্যাকসন
ব্যক্তি জ্যাকসনকে কতটুকু জানেন আপনি? মাইকেল মারা যাওয়ার পর তাকে নিয়ে নানা নতুন নতুন তথ্য ফাঁস করে তার বাড়ির গৃহপরিচালিকা, স্বজন ও বন্ধুরা। এই তথ্যগুলোর কোনোটি বিস্মিত করেছে, কোনোটি বিষাদে মন পুড়িয়েছে ভক্তদের। মাইকেল ব্যক্তি জীবনে খুবই নিঃসঙ্গ ছিলেন। খুব বেশি মানুষের সঙ্গে মিশতেন না। কেউই পূর্বানুমতি ছাড়া তার বাড়িতে ঢুকতে পারত না।
খুবই এলোমেলো জীবনযাপনে অভ্যস্থ ছিলেন জ্যাকসন। ঠিকমতো খেতেন না। ঘুম তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। সারা রাত মাদকে আসক্ত থাকতেন। কড়া ঘুমের ওষুধেও তার ঘুম আসত না। যে কারণে ঘুমের ওষুধে আসক্ত হতে শুরু করেন। এই অসহনীয় জীবন আরো কষ্টকর ছিল শিশুদের প্রতি যৌন নির্যাতনের অভিযোগে আদালতে প্রমাণ মেলার পর। রাতে না ঘুমিয়ে ঘর ছেড়ে বাড়ির বারান্দায় শুয়ে কাঁদতেন।
‘কিং অফ পপ’ মাইকেল জ্যাকসন কি সত্যিই ‘শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত’ ছিলেন? আপনার কী বিশ্বাস?