তালায় বুদ্ধি প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণ মামলার তদন্তে অন্য ভ্রুন’র ডিএনএ টেস্ট করার অভিযোগ

তালার জেঠুয়া গ্রামে হতদরিদ্র ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এক মেয়েকে হুমকির মুখে বারবার ধর্ষণ করা হয়। এরফলে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয় এবং ঘটনা ধামাচাঁপা দিতে ধর্ষক মেয়েটির গর্ভপাত করিয়ে ভ্রুন হত্যা করে। এঘটনায় তালা থানায় দায়ের হওয়া মামলার আসামী ধর্ষক আতিয়ার রহমান ও তার সহযোগীরা অসহায় বাদীকে মামলা তুলে নিতে একের পর এক হুমকি দিচ্ছে। এছাড়া মামলা থেকে রক্ষা পাবার জন্য আসামীরা পুলিশের সাথে যোগসাজস করে ঘটনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলামত ভ্রুন পরিবর্তন করে অন্য ভ্রুন এর ডিএনএ পরীক্ষা করিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মামলার বাদী তালা রিপোর্টার্স ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন’র মাধ্যমে এই অভিযোগ করেন।

জেঠুয়া গ্রামের ফকির পাড়ার বাসিন্দা রবিউল মল্লা বলেন, তিনি একজন হতদরিদ্র ও বিধবা মহিলা। সংসার চালানোর জন্য তিনি বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থ শরীর নিয়ে অন্যের জমিতে কাজ করেন। এছাড়া তার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়ে (তৎকালিন বয়স ১৬ বছর) মাঠ বা বাগান থেকে কচু শাক পাতা তুলে বাজারে বিক্রি করে। এমতাবস্থায় একই এলাকার মৃত করিম ফকিরের লম্পট ছেলে আতিয়ার রহমান ফকির সুযোগ বুঝে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এই মেয়েকে ধর্ষ করে। ধর্ষণের পর হুমকি দিয়ে একাধিক বার প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়। একপর্যায়ে মেয়েটির শারীরিক পরিবর্তনের ফলে প্রায় ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হবার বিষয়টি ডাক্তারী পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকাশ ঘটে।

এসময় ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাঁপা দিতে আতিয়ার রহমান কৌশলে ধর্ষিতা মেয়েটিকে একই এলাকার আদু ফকিরের স্ত্রী হালিমা বেগম এবং রশিদ হাওলাদারের স্ত্রী পারুল বেগম’র মাধ্যমে গর্ভপাত করানোর ওষুধ সেবন করিয়ে দেয়। এরফলে গত ১১/১০/১৮ ইং তারিখ ভোর ৫টার দিকে প্রতিবন্ধী মেয়েটির গর্ভপাত ঘটে এবং প্রায় ৬ মাস বয়সী একটি মৃত কন্যা শিশুর জন্ম হয়।

এঘটনা চারিদিকে জানাজানি হলে তালা থানার এস.আই মো. মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল থেকে মৃত কন্যা শিশুর ভ্রুন সহ ভিকটিমকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। এঘটনায় ধর্ষিতা মেয়ের মা বাদী হয়ে আতিয়ার ফকির সহ তার সহযোগী হালিমা বেগম ও পারুল বেগমকে আসামী করে তালা থানায় একটি মামলা (নং : ৩, তাং : ১৩/১০/১৮) দায়ের করেন।

প্রতিবন্ধী মেয়েটির অসহায় মা অভিযোগ করে বলেন, মামলা দায়ের হবার পর ধর্ষক আতিয়ার রহমান গ্রেফতার হন। এছাড়া মামলার তদন্ত চলাকালে ডিএনএ পরীক্ষা করানোর জন্য ভ্রুন সহ তার মাকে (ধর্ষিত মেয়ে) ঢাকার মালিবাগে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে নেয়া হয়। কিন্তু সিআইডির ল্যাবে যে ভ্রুন’র ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছিল তা মামলার আলামত’র ভ্রুন নয়। আতিয়ার ফকির’র পরিবার পুলিশ’র সাথে যোগসাজস করে অন্য একটি ভ্রুন নিয়ে তার ডিএনএ পরীক্ষা করায়। যারফলে সিআইডির ল্যাবরেটরি থেকে “ভ্রুনটির জৈবিক পিতা আতিয়ার রহমান নয়” বলে রিপোর্ট আসে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ধর্ষক আতিয়ার রহমান’র পিতা করিম ফকির রাজাকার ছিলো। মুক্তিযুদ্ধের সময় লুটপাটারে অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধারা তাকে হত্যা করতে বাধ্য হয়। এছাড়া আতিয়ারের বড় ভাই নিষিদ্ধ চরমপন্থী ক্যাডার থাকায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ছিল। আর লম্পট আতিয়ারের বিরুদ্ধে এলাকার এক মেয়েকে অপহরণ, পুলিশের উপর হামলা এবং এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করা সহ নারী ঘটিত একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এসব নজিরের কারনে আতিয়ার রহমান এই প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সাহস পায়। এমনকি ধর্ষণের পরে ঘটনা ধামাচাঁপা দিতে সে সর্বপ্রকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যম্যে মামলা তুলে নিতে একের পর এক হুমকি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পুলিশের সহযোগীতায় অন্য ভ্রুন’র ডিএনএ পরীক্ষা করে ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করায় নতুন করে তদন্তকারী পুলিশ অফিসার নিয়োগ দিয়ে তাঁর মাধ্যমে প্রকৃত ভ্রুন’র ডিএনএ পরীক্ষা করানোর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করা হয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)