মেঘের ঘনঘটা ম্যাচ ঘিরে অনিশ্চয়তা
বৃষ্টির পূর্ভাবাস ও শঙ্কা দুই-ই ছিল। সে শঙ্কা ঘনীভূত হতে শুরু করলো কাল পড়ন্ত বিকেলে বৃষ্টির পর থেকেই। ১০ জুন (সোমবার) বাংলাদেশ দলের প্র্যাকটিস সেশন ভালোভাবে কাটলেও, ব্রিস্টল সময় দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামার আগেই শুরু হয়েছিল বৃষ্টি।
তারপর আর মেলেনি সূর্যের দেখা, ঝিরঝিরে বৃষ্টি আর কনকনে বাতাস সাথে মেঘে ঢাকা আকাশ- ঠিক এ অবস্থায়ই পার হয়েছে রাত। আজ (মঙ্গলবার) ভোরেও ব্রিস্টলে আকাশে দেখা যায়নি সূর্যের উপস্থিতি।
যেখানে ভোর সাড়ে ৪টা থেকে ৫টার মধ্যেই সূর্য উঠে যায়, সেখানে এ প্রতিবেদন লেখার সময় (সকাল ৭টা) পর্যন্তও আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। ঝিরঝিরে বৃষ্টি এখন অবশ্য নেই, তার বদলে বাতাস আছে বেশ। পুরো আকাশে মেঘের আনাগোনা, বাতাসে মেঘের খেলা চলছে অনবরত। নেই রোদের কোনো আভাস।
আবহাওয়া ও আকাশের এ বর্ণনা শুনে, নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ব্রিস্টলের হাল হকিকত। এরকম অবস্থায় বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ দুলছে পেন্ডুলামের মতো অনিশ্চয়তার দোলাচালে।
স্থানীয় প্রবাসী বাঙালিদের উৎসাহে ভাটা চলে এসেছে। তাদের অনেকেই ধরে নিয়েছেন মাঠে গড়াবে না আজকের ম্যাচটি। হলেও দুপুরের পর কুড়ি-পঁচিশ ওভারের খেলা হতে পারে। আবহাওয়ার পূর্ভাবাসে সকাল ৯টা থেকেই আছে বৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা।
আবহাওয়ার পূর্ভাবাসে শুরুতে ৮০ শতাংশ বৃষ্টির কথা বলা থাকলেও সেটা সকাল ১০টা থেকে বেড়ে যাবে ৯৯ শতাংশে। তবে দিন যত এগুবে বৃষ্টির সম্ভাবনা ততই কমবে বলে জানাচ্ছে স্থানীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে যে সময় খেলাটা শুরু হবে অর্থাৎ সকাল সাড়ে ১০টার সময়েও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ। ফলে যথাসময়ে ম্যাচ শুরু হওয়া নিয়ে রয়েছে যথেষ্ঠ শঙ্কা।
ব্রিস্টলে দুই যুগের বেশি সময় ধরে থাকা কামরুল ইসলাম ধরেই নিয়েছেন আজকে খেলাই হবে না। এছাড়া দেশি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভির ব্রিস্টল প্রতিনিধি ও ব্রিস্টল বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কামরুল ইসলাম গতকাল রাতে জানিয়েছেন, ‘সেই ১৯৯২ সাল থেকে এখানে (ব্রিস্টলে) আছি। আবহাওয়ার পূর্ভাবাস জানা ও বোঝা হয়ে গেছে। তাতে করে আমার মনে হয় না আজকে খেলা হবে। এখানে ৭০-৮০ ভাগ বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখানো মানেই হচ্ছে নিশ্চিত বৃষ্টি হওয়া।’
কামরুল ইসলামের সুরে সুর মিলিয়েছেন আব্দুল কাইয়ুম ও আবুল হাসান জুয়েলও। তবে কোনো কোনো প্রবাসীর ধারণা, স্থানীয় সময় দুপুর ১টার পর বৃষ্টির প্রকোপ কমে যেতে পারে এবং পূর্ভাবাসেও বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। সেক্ষেত্রে কার্টেল ওভার ম্যাচ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ সবাই চাইছেন পুরো পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচ। কারণ বাংলাদেশ এসেছে পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ খেলার লক্ষ্য, পরিকল্পনা ও কৌশল সাজিয়ে। হঠাৎ ২০-২৫ ওভারের ম্যাচ হলে সবকিছুই পাল্টে ফেলতে হবে। যা হুট করেই বদলানো বেশ কঠিন। বিশেষ করে মানসিক প্রস্তুতিটাও অনেক বড় একটি বিষয়।
এছাড়াও বাংলাদেশ দলের সেমিফাইনাল সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে এ ম্যাচের পূর্ণ ২ পয়েন্ট অনেক বেশি জরুরী। তাই পুরো ৫০ ওভার খেলার পক্ষেই বাংলাদেশ। কিন্তু আবহাওয়ার কারণে হয়তো তা সম্ভব হবে না। ফলে সবমিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ জটিলই। টাইগাররা এ জটিল অঙ্কের সমাধান কীভাবে করেন সেটাই দেখার।
তবে শেষ কথা হলো পূর্ণ ২ পয়েন্ট। সেটা যদি ২০-২৫ ওভারের ম্যাচ খেলেও আসে, তাহলে ক্ষতি কী? অবশ্য একটা মানসিক সান্ত্বনা নিশ্চয়ই টাইগারদের আছে। তা হলো- বৃষ্টির বাগড়ায় ইতোমধ্যেই ২টা ম্যাচ বাতিল হয়ে গেছে। পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়েছে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকা-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে।
বাংলাদেশের সেমিফাইনালের দৌড়ে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছে পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের নামও। ফলে বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশেরও পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হলে, আগের দুই পরিত্যক্ত ম্যাচের বিবেচনায় সমতায় চলে আসবে তিন দলই।