কার চরিত্র কে করে, কার পুরস্কার কে নেয়
বলিউডে নিত্যনতুন বহু তারকার আবির্ভাব ঘটছে, আবার অনেকে এই রাজ্যে কাজ না পেয়ে চম্পট দিয়েছে। তবে এমন অনেক তারকা আছে, যারা সময়ের চেয়ে কাজ বেশী বলে বহু চরিত্র ছেড়ে দিয়েছেন। পরে তার চরিত্র করেছে অন্য একজন (নায়ক বা নায়িকা)। আরো অবাক হবেন যে, তারা এমন এমন তারকাদের (নায়ক-নায়িকাদের) বিপরীতে কাজ ছেড়ে দিয়েছেন, যা পরবর্তীতে ভীষণভাবে ভাবিয়েছে তাদের, ঠিক যেন এটাই ছিল জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল!
আজ ডেইলি বাংলাদেশের পাঠকদের জানাবো এমন কিছু তারকার নাম, যারা ক্যারিয়ারে এমনই অনেক জনপ্রিয় নায়ক বা নায়িকার বিপরীতে কাজ ছেড়েছেন আর পরবর্তীতে আফসোসও করেছেন।
চলুন দেখে নেয়া যাক এমন তালিকায় কারা কারা আছেন-
কাজল
বলিউডের নামকরা জুটির মধ্যে শাহরুখ-কাজল। এদের কিংবদন্তী জুটিও ধরা হয়। ক্যারিয়ারে তারা একত্রে ‘বাজিগর’ থেকে শুরু করে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’, ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’-সহ অনেক ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। তবে এই জুটিও যে মাঝে মাঝে একে অপরের ছবি ছেড়েছেন, তা কিন্তু অনেকের জানা নেই। একসময় শাহরুখ খানের বিপরীতে বেশ কয়েকটি সিনেমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন কাজল। এর মধ্যে ‘মোহাব্বতে’, ‘কাভি আল বিদা না ক্যাহ না’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘চালতে চালতে’, ‘দেবদাস’, ‘ভীর-জারা’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শুধু শাহরুখ খান নয়, সালমান খানের বিপরীতেও তিনি বেশ কয়েকটি সিনেমা ছেড়েছেন। ঐশ্বরিয়ার আগে ‘হাম দিল চুকে সানাম’ ও সালমানের বিপরীতে ‘খামোশী’ সিনেমা কাজল করেননি। এমনকি আমির খানের বিপরীতে ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমাটিও করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন কাজল।
অক্ষয় কুমার
বলিউডের খিলাড়ি অভিনেতা অক্ষয় কুমার। তার কাছে প্রথম প্রস্তাব এসেছিল কালজয়ী ভারতীয় অ্যাথলেট মিলখা সিং-এর বায়োপিক ‘ভাগ মিলখা ভাগ’-এ অভিনয়ের। তবে তিনি তখন অন্য সিনেমার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। জানা গেছে, ওইসময় অক্ষয়ের হাতে ছিল ‘দেশি বয়েজ’ ও ‘হাউজফুল-২’ সিনেমার শুটিং-এর কাজ। আর এই কারণেই মূলত তিনি মিলখা সিং হতে রাজি হননি। অথচ নিজের চরিত্রে স্বয়ং মিলখা সিংয়ের প্রথম পছন্দ ছিল অক্ষয় কুমারের। পরে ছবিটি সব মিলিয়ে ৪০ টিরও বেশি পুরস্কার পেয়েছিল, যা অক্ষয়ের আফসোস বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছিল।
দীপিকা পাড়ুকোন
বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন। একসময় এই রাজ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে বহু কাটখড় পোহাতে হয়েছে তাকে। তবে পরে বলিউডে অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন এই নায়িকা। এমনকি ২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘যাব তাক হ্যায় জান’ সিনেমায় মিরা চরিত্রে পরিচালক যশ চোপড়া প্রথম দীপিকা পাড়ুকোনকে বেছেছিলেন। কিন্তু বলিউড বাদশাহর বিপরীতে ওই সিনেমায় অভিনয়ে অস্বীকৃতি জানান দীপিকা। এছাড়া বলিউডের মিস্টার পারফেকসনিস্ট খ্যাত আমির খানের সঙ্গে ‘ধুম ৩’, এবং সালমান খানের বিপরীতে ‘কিক’, ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’-সহ অনেক ছবি অজানা কারণে ফিরিয়ে দেন তিনি। অথচ, এই ছবিগুলো বলিউডের ইতিহাসে অন্যতম ব্লকবাস্টার হিসেবে আখ্যা পেয়েছে। শুধু বলিউড নয়, হলিউড পরিচালকদেরও নিরাশ করেছেন দীপিকা। ‘ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস-৭’ এর মতো ধুন্ধুমার অ্যাকশন সিনেমা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। তখন অবশ্য তিনি শাহরুখের সঙ্গে একটি মুভির শুটিংয়ে দুবাই ছিলেন।
সালমান খান
বলিউড ভাইজান সালমান খান। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই রাজ্যে তার খ্যাতি ব্যাপক তুঙ্গে। তার সিনেমা মানেই যেন অঘোষিত সুপার হিট সিনেমা। তবে একসময় তাকেও ভীষণ পরিশ্রম করতে হয়েছে। কিন্তু তিনিও বেশ কিছু সিনেমা ছেড়ে দিয়েছিলেন, যেগুলো পরবর্তীতে হিট-সুপাহিটের তকমা পেয়েছে। বিশেষ করে ‘চাকদে ইন্ডিয়ার’ স্ক্রিপ্ট সালমানকে মাথায় রেখেই লেখা হয়েছিল। কিন্তু শিডিউল সমস্যার কারণে তিনি ছবিটি থেকে সরে দাঁড়ান। অন্য দিকে আমিরের করা ‘গজনি’ সিনেমার জন্য প্রথমে সালমানের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল, তবে কোন এক অজানা কারণে সেখান থেকে সরে যান এই বলিউড ভাইজান। পরে চরিত্রটি করেন আমির খান। এছাড়াও ‘বাজিগর’, ‘কাল হো না হো’র মতো আরো বেশ কিছু সিনেমা ফিরিয়ে দিয়েছেন বলিউডের এই সুপারস্টার। যার কারণও এখনো অজানা।
ক্যাটরিনা কাইফ
সালমান খানের হাত ধরে বলিউডে আসা ক্যাটরিনা কাইফ। তাকে নাচ-গানে ভরপুর ‘হালকা’ চরিত্রেই বেশীরভাগ অভিনয় করতে দেখা যায়। অথচ সুপারহিট সিনেমা ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’র মিনাম্মা এবং ‘ইয়েহ জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’র ন্যায়না কিংবা ‘বাজিরাও মাস্তানির’ মাস্তানি চরিত্রটি তার ক্যারিয়ারে ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে পারতো। কিন্তু তা আর হলো কই। এইসব ছবি প্রত্যাখ্যান করেন ক্যাটরিনা। কিন্তু কেন? এছাড়াও অনুরাগ বসুর ‘বারফি’, সঞ্জয় লীলা বানসালীর আরেকটি ছবি ‘গোলিও কি রাসলীলা রাম-লীলা’ সিনেমাটিও তিনি প্রত্যাখান করে দিয়েছিলেন বলে শোনা গেছে। যার প্রত্যেকটি ছবি বক্স অফিসে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছিল।
সাইফ আলী খান
সাইফ আলী খান। ক্যারিয়ারে বেশ একটা ভালো সময় পার করতে না পারলেও পরিচালক আদিত্য চোপড়া ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ সিনেমার স্ক্রিপ্ট নিয়ে প্রথম তার কাছে গিয়েছিলেন। শুনতে অবাক লাগলেও, এই ছবির সিমরানের রাজ হওয়ার কথা ছিল সাইফের। তখন ফ্লপ হিরো হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। তারপরও কোন এক অজ্ঞাত কারণে আদিত্যকে ফিরিয়ে দেন সাইফ। শেষমেষ পরিচালক শাহরুখ খানের দারস্থ হন। ১৯৯৫ সালে ওই সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পর বলিউডে একটা শোরগোল পড়ে গিয়েছিল, যা এখন অবধি বিদ্যমান। এরকম একটা সুপার ডুপার হিট ছবি ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারটা নিশ্চয়ই এখনো তাকে ভীষণভাবে পোড়ায়। এর চেয়েও অবাক করা ব্যাপার হল, ছবিটির চিত্রনাট্য লেখা হয়েছিল স্বয়ং টম ক্রুজকে মাথায় রেখে।
কারিনা কাপুর
বলিউড অভিনেত্রী কারিনা কাপুর। তিনিও কম ছবি ছাড়েননি। আর ছেড়েছেন এমন সব ছবি, যা হয়ত তাকে নিয়ে যেত পারতো আরো অনন্য উচ্চতায়। ‘হাম দিল চুকে সানাম’-এর ‘নন্দিনী’ চরিত্রে ঐশ্বরিয়ার জায়গায় প্রথমে তাকে নিয়ে ভাবা হয়েছিল। এ ছাড়া ‘কাহো না পেয়ার হ্যায়’, ‘কাল হো না হো’, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’র মতো সুপারহিট ও প্রসংশিত ছবিকেও কারিনা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ভুল মনে হয় ‘কুইন’ এর মতো সিনেমা ছেড়ে দেওয়াটা। ভিকাস বেহেল পরিচালিত এ সিনেমার জন্য কঙ্গনা রনৌত জিতে নেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তবে এখনো সে আফসোস লালন করছেন কারিনা।
শাহরুখ খান
বলিউড কিং শাহরুখ খান। তার ঝুলিতে অসংখ্য জনপ্রিয় ছবি রয়েছে। তবে তিনি কিছুদিন আগে ‘কফি উইদ করণ’-এর এক শোতে মজা করে বলেছিলেন, তিনি হচ্ছেন নিজেই একজন ফোর্থ ইডিয়ট, যে কিনা ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমাটি করেননি। আসলে ক্যারিয়ারের এই ক্রান্তিকাল মুহূর্তে কিং খানের আফসোস হওয়ারই কথা। কারণ, শুধু ‘থ্রি ইডিয়টস’ই নয় বরং ‘লাগান’, ‘মুন্না ভাই এমবিবিএস’, ‘লাগে রাহো মুন্না ভাই’, ‘রোবট’, ‘এক থা টাইগার’, ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’-সহ এরকম অনেক ক্লাসিক্যাল ব্লকবাস্টার মুভি অবলীলায় ছেড়ে দিয়েছেন এই বলিউড বাদশাহ।