উড়ন্ত জয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু টাইগারদের

চলছে ক্রিকেটের সব থেকে বড় আসর আইসিসি বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ মিশনের শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের পঞ্চম ও নিজেদের প্রথম ম্যাচে বেশ বড় সংগ্রহ গড়ে টাইগাররা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে টাইগার বোলারদের তোপে টিকতেই পারেনি প্রোটিয়ারা। আর এতে ২১ রানের জয় দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করল বাংলাদেশ।

টস হেরে আগে ব্যাট করে ৩৩০ রানের বড় সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। যা বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সব থেকে বড় রানের রেকর্ড। প্রোটিয়াদের সামনে ৩৩১ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় টাইগাররা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে হারিয়ে ৩০৯ রানেই থেমে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেও ২১  রানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে প্রোটিয়ারা।

লন্ডনের দ্য ওভালে শুরুতেই ব্যাট করতে আসেন টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল। সঙ্গী ছিলেন হার্ডহিটার সৌম্য সরকার। দুইজনই আজ নিজের সেরাটা দিতে বদ্ধ পরিকর ছিলেন। দেখে খেলছিলেন বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যান। হেসে খেলেই দলীয় অর্ধশত পার করেন টাইগার ওপেনাররা।

এদিকে  দুইটি রেকর্ড করেন সৌম্য সরকার। বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শততম ম্যাচ খেলতে নামেন তিনি। সেই সঙ্গে ২৯ রান করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩,০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন এই টাইগার হার্ডহিটার।

দলীয় অর্ধশতক পার করেই বিদায় নেন তামিম ইকবাল। অ্যান্ডি ফেহলুকায়ো বলে ডি ককের হাতে ক্যাঁচ তুলে দেন এই টাইগার ওপেনার। ব্যক্তিগত ১৬ রানে ফিরতে হয় তাঁকে।

এরপর সৌম্য সরকারের সুযোগ ছিল নিজের ক্যারীয়ারে আরো একটি অর্ধশতক যোগ করার। কিন্তু ভাগ্য তার পক্ষে ছিল না। কাছে গিয়েও পারলেন না এই টাইগার ব্যাটসম্যান।

৪২ রানে  ক্রিস মরিসের লেফট সাইডের বাউন্স বলে শর্ট করলে তা গ্লাভসে লেগে চলে যায় পিছনে। আর দক্ষ উইকেট রক্ষক কুইন্টন ডি কক ছুটে এসে লাফ দিয়ে তা লুফে নেন। আর এতেই বিদায় নিতে হয় সৌম্যকে।

এরপর মাঠে আসেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিকুর রহিম। আগেই মাঠে ছিলেন সাকিব আল হাসান। এই দুই ব্যাটসম্যানে প্রাথমিক চাপ সামলে দলীয় শতক পার করে টাইগাররা। একই ভাবে সাকিব-মুশফিকে ভালো ভাবেই এগোয় বাংলাদেশ।

দলীয় দেড়শ রান ও অতিক্রম করে এই জুটি। দুই ব্যাটসম্যানই তুলে নেন নিজেদের ব্যক্তিগত অর্ধশতক।  চার মেরে নিজের অর্ধশত পার করেন মুশফিক। তারপর সাকিব-মুশিতে দলীয় দুইশত পার করে বাংলাদেশ। বড় সংগ্রহের পথে টাইগাররা হাটলেও হুট করে বাঁধ সাধল ইমরান তাহির। টাইগারদের রাঁধা ভাতে ছাই দিল।

ইমরান তাহিরের বলে বাজেভাবে বোল্ড হয়ে ঘরে ফেরেন সাকিব। যদিও ফেরার আগে নিজের নম্বর ৭৫ এর মত ৭৫ রান করে মাঠ ছাড়েন টাইগার অলরাউন্ডার।

ঘরের ফেরার আগে বিশ্বকাপে টাইগারদের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রানের পার্টনারশিপ এখন সাকিব-মুশির। কিন্তু আবারো টাইগার শিবিরের উপর অভিশাপ হয়ে আসলো সেই ইমরান তাহির। ঠিক আবারো বোল্ড করে ঘরে ফেরানেল মোহম্মদ মিঠুনকে। ফেরার আগে দলকে ২১ রানের ইনিংস উপহার দেন এই ব্যাটসম্যান।

আজ অ্যান্ডি ফেহলুকায়ো চড়াও হন টাইগারদের উপর। ডুসেনের হাতে ক্যাঁচ হয়ে ঘরে ফিরলেন মুশফিক ৭৪ রান করে। বিশ্বকাপে শতক করা হলো না এই টাইগার ডিপেন্ডেবলের। এরপর মাঠে নামেন প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলা মোসাদ্দেক। তার ব্যাটিং ঝড়ে দিক হারিয়ে ফেলে প্রোটিয়ারা।

যদিও শেষের দিকে ক্যাঁচ হয়ে ফেরেন এই ব্যাটসম্যান। যাওয়ার আগে বড় সংগ্রহে ২০ বলে ২৬ রান করে অবদান রেখে যান।
মাহমুদউল্লাহ  ও মেহেদি হাসানে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৩০ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। আর এতেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ রানের দেখা পায় এই ম্যাচে। এমনকি ওয়ানডেতেও এই স্কোরই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। মাহমুদউল্লাহ ৪৬ ও মেহেদি হাসান ৫ রানে অপরাজিত থাকেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ফেহলুকায়ো, তাহির ও মরিস দুটি করে উইকেট লাভ করেন।

টাইগারদের ছুঁড়ে দেয়া ৩৩১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। শুরুটা ভালো হলেও ক্রমাগত উইকেট হারিয়ে চাপে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফাফ ডু প্লেসিকে আউট করে দক্ষিণ আফ্রিকার শিবিরে সর্বশেষ আঘাত হেনেছেন মেহেদী মিরাজ। এর আগে কুইন্টন ডি কক ও মার্করামকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়েছে টাইগার বোলাররা ।

কুইন্টন ডি কককে হারানোর পর ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছিল মার্করাম-ডু প্লেসিস জুটি। তবে দারুণ আর্ম বলে বোল্ড করে মার্করামকে ৪৫ রানে ফেরান সাকিব।

তারপর বাংলাদেশের জন্য মাথাব্যথা হয়ে থাকা ডু প্লেসিকে আউট করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে নিয়ে নেন মেহেদী মিরাজ। আউট হওয়ার আগে ৫৩ বলে ৬২ রান সংগ্রহ করেন ডু প্লেসিস। এরপর একে এক ঘরে ফেরেন ভ্যান ডার ডুসেন(৪১), ডেভিড মিলার(৩৮), অ্যান্ডি ফিলহুকওয়েও(৮), ক্রিস মরিস(১০)।

টাইগার বোলারদের সামনে টিকতেই পারেনি প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা। যদিও শেষে এসে রাবাদা ও ইমরান তাহিরে কিছু আশার আলো দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ওভার শেষ হওয়াতে সে আলো নিভে যায়। নট আউট হয়েই ৩০৯ করে ঘরে ফেরেন দুই প্রোটিয়া বোলার। আর এতেই নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ২১ রানের হার দেখতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ম্যাচই জয় দিয়ে রাঙালো।

বাংলাদেশের হয়ে মুস্তাফিজুর রহমান ৩টি, মোহম্মদ সাইফউদ্দিন ২ টি, মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাকিব ১ টি করে উইকেট নেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৩৩০/৬ ৫০ ওভার (তামিম ১৬, সৌম্য ৪২, সাকিব ৭৫, মুশফিক ৭৮, মিঠুন ২১, মাহমুদউল্লাহ ৪৬*, মোসাদ্দেক ২৬, মিরাজ ৫*; এনগিডি ৪-০-৩৪-০, রাবাদা ১০-০-৫৭-০, ফেলুকোয়ায়ো ১০-১-৫২-২, মরিস ১০-০-৭৩-২, মারক্রাম ৫-০-৩৮-০, তাহির ১০-০-৫৭-২, দুমিনি ১-০-১০-০)

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩০৯/৮ ৫০ ওভার (ডি কক ২৩, মারক্রাম ৪৫, ডু প্লেসি ৬২, মিলার ৩৮, ফন ডার ডাসেন ৪১, ডুমিনি ৪৫, ফেলুকোয়ায়ো ৮, মরিস ১০, রাবাদা ১৩*, তাহির ১০*; মুস্তাফিজ ১০-০-৬৭-৩, মিরাজ ১০-০-৪৪-১, সাইফ ৮-১-৫৭-২, সাকিব ১০-০-৫০-১, মাশরাফি ৬-০-৪৯-০, মোসাদ্দেক ৬-০-৩৮-০)

ফল: বাংলাদেশ ২১ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: সাকিব আল হাসান

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)